শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২, ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার লাবনী ও সাবেক দেহরক্ষীর লাশ উদ্ধার

দুই লাশের ঘটনা রহস্যজনক : পুলিশ বলছে, আপাতত আত্মহত্যা ধরে নেয়া হবে

মাগুরার শ্রীপুরে নানাবাড়ি থেকে নারী পুলিশ কর্মকর্তা (এডিশনাল এসপি) খন্দকার লাবনীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই পুলিশ কর্মকর্তার লাশ উদ্ধারের পর জেলা সদরের পুলিশ ব্যারাকের ছাদ থেকে তার (এডিসি লাবনী) সাবেক দেহরক্ষী ২৫ বছর বয়সী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুই পুলিশের মৃত্যু আপাতত আত্মহত্যা বলে মনে করছে পুলিশ। তবে কী কারণে তারা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলছে না পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) খন্দকার লাবনী এবং তার সাবেক দেহরক্ষী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। পুলিশের ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা খন্দকার লাবনী খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কনস্টেবল মাহমুদুল দেড় মাস আগে কুষ্টিয়ায় বদলি হয়ে আসেন। তার আগে তিনি খুলনায় এডিসি লাবনীর দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদুল ইসলাম জানান, আপাতত দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি আত্মহত্যা মনে হচ্ছে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনই পরিষ্কার নই আমরা। আমরা তদন্ত করছি।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান জানান, রাতে ডিউটি থেকে ফিরে আজ সকাল (গতকাল সকালে সাড়ে সাতটার দিকে নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন মাহমুদুল হাসান নামের ওই কনস্টেবল। নিহত কনস্টেবলের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। নিহত মাহমুদুল দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন। অন্যদিকে গত বুধবার রাতে শ্রীপুর উপজেলার সানঙ্গদিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি হিসেবে কর্মরত নারী পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবনীকে দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খন্দকার লাবনী কেএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। দুইদিন আগে ছুটিতে মাগুরায় আসেন তিনি। পুলিশের এই কর্মকর্তা বিসিএস ৩০ ব্য্যাচের।

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এডিসি লাবনী শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে তার নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কনস্টেবল মাহমুদুল মাগুরায় আসার আগে কেএমপিতে এডিসি লাবনীর বডিগার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একজনের মৃত্যুর পর আরেকজনের মৃত্যুর মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুইজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এডিসি লাবণীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম জানান, দীর্ঘদিন ধরে লাবনীর সঙ্গে তার স্বামীর কলহ চলে আসছিল। স্বামীর সংসারে আমার মেয়ে সুখী ছিল না। মূলত সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে লাবনীর বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এডিসি খন্দকার লাবনী মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬নং কাদিরপাড়া ইউনিয়নের বরালিদহ গ্রামের খন্দকার শফিকুল আজমের মেয়ে। তার স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মাগুরা জেলায়ই তার শ্বশুরবাড়ি। পুলিশ কর্মকর্তা লাবনীর স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি বর্তমানে ভারতে চিকিৎসার জন্য আছেন।

আর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া গ্রামের এজাজুল হকের ছেলে। কুষ্টিয়া শহরের দাদাপুর রোডের নতুন কমলাপুর এলাকায় শুভেচ্ছা ভিলা নামে একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে তাদের। প্রায় তিন বছর আগে মাহমুদুল পুলিশে যোগদান করেন। মাহমুদুলের বাবা এজাজুল হকও পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত।

নিহত মাহমুদুল হাসানের পরিবার ও স্বজনরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা লাবনী কনস্টেবল মাহমুদুলকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। মাহমুদুল হাসানের বোন সুমাইরা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা লাবনীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক ছিল। লাবনী আমার ভাইকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কখনো কোনদিন কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। লাবনীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের অন্য (ব্যক্তিগত) কোন সম্পর্ক ছিল না’।

মাহমুদুলের স্বজনরা বলেন, ঈদের আগের দিন বাড়িতে এসেছিল মাহমুদুল। ঈদের পরদিন সে মাগুরায় চলে যায়। কেন আত্মহত্যা করল বুঝতে পারছি না। শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিল মাহমুদুল। তার মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২ , ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার লাবনী ও সাবেক দেহরক্ষীর লাশ উদ্ধার

দুই লাশের ঘটনা রহস্যজনক : পুলিশ বলছে, আপাতত আত্মহত্যা ধরে নেয়া হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধি, মাগুরা

image

মাগুরার শ্রীপুরে নানাবাড়ি থেকে নারী পুলিশ কর্মকর্তা (এডিশনাল এসপি) খন্দকার লাবনীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই পুলিশ কর্মকর্তার লাশ উদ্ধারের পর জেলা সদরের পুলিশ ব্যারাকের ছাদ থেকে তার (এডিসি লাবনী) সাবেক দেহরক্ষী ২৫ বছর বয়সী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুই পুলিশের মৃত্যু আপাতত আত্মহত্যা বলে মনে করছে পুলিশ। তবে কী কারণে তারা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলছে না পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) খন্দকার লাবনী এবং তার সাবেক দেহরক্ষী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। পুলিশের ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা খন্দকার লাবনী খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কনস্টেবল মাহমুদুল দেড় মাস আগে কুষ্টিয়ায় বদলি হয়ে আসেন। তার আগে তিনি খুলনায় এডিসি লাবনীর দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদুল ইসলাম জানান, আপাতত দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি আত্মহত্যা মনে হচ্ছে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনই পরিষ্কার নই আমরা। আমরা তদন্ত করছি।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান জানান, রাতে ডিউটি থেকে ফিরে আজ সকাল (গতকাল সকালে সাড়ে সাতটার দিকে নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন মাহমুদুল হাসান নামের ওই কনস্টেবল। নিহত কনস্টেবলের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। নিহত মাহমুদুল দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন। অন্যদিকে গত বুধবার রাতে শ্রীপুর উপজেলার সানঙ্গদিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি হিসেবে কর্মরত নারী পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবনীকে দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খন্দকার লাবনী কেএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। দুইদিন আগে ছুটিতে মাগুরায় আসেন তিনি। পুলিশের এই কর্মকর্তা বিসিএস ৩০ ব্য্যাচের।

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এডিসি লাবনী শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে তার নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কনস্টেবল মাহমুদুল মাগুরায় আসার আগে কেএমপিতে এডিসি লাবনীর বডিগার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একজনের মৃত্যুর পর আরেকজনের মৃত্যুর মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুইজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এডিসি লাবণীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম জানান, দীর্ঘদিন ধরে লাবনীর সঙ্গে তার স্বামীর কলহ চলে আসছিল। স্বামীর সংসারে আমার মেয়ে সুখী ছিল না। মূলত সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে লাবনীর বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এডিসি খন্দকার লাবনী মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬নং কাদিরপাড়া ইউনিয়নের বরালিদহ গ্রামের খন্দকার শফিকুল আজমের মেয়ে। তার স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মাগুরা জেলায়ই তার শ্বশুরবাড়ি। পুলিশ কর্মকর্তা লাবনীর স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি বর্তমানে ভারতে চিকিৎসার জন্য আছেন।

আর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া গ্রামের এজাজুল হকের ছেলে। কুষ্টিয়া শহরের দাদাপুর রোডের নতুন কমলাপুর এলাকায় শুভেচ্ছা ভিলা নামে একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে তাদের। প্রায় তিন বছর আগে মাহমুদুল পুলিশে যোগদান করেন। মাহমুদুলের বাবা এজাজুল হকও পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত।

নিহত মাহমুদুল হাসানের পরিবার ও স্বজনরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা লাবনী কনস্টেবল মাহমুদুলকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। মাহমুদুল হাসানের বোন সুমাইরা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা লাবনীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক ছিল। লাবনী আমার ভাইকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কখনো কোনদিন কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। লাবনীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের অন্য (ব্যক্তিগত) কোন সম্পর্ক ছিল না’।

মাহমুদুলের স্বজনরা বলেন, ঈদের আগের দিন বাড়িতে এসেছিল মাহমুদুল। ঈদের পরদিন সে মাগুরায় চলে যায়। কেন আত্মহত্যা করল বুঝতে পারছি না। শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিল মাহমুদুল। তার মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।