শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২, ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

যাযাবর জীবনের অবসান ৫৯ বেদে পরিবারে

কখনো রাস্তার ধারে, রেলস্টেশনের পাশে অথবা নৌকার মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে ছিল তাদের বসবাস। এক সপ্তাহে এখানে থাকলেও পরের সপ্তাহে পাওয়া যেত অন্য এলাকায়। ঘরবাড়ি না থাকায় এমনিভাবেই তাদের পেশাগত কারনে তারা সারাদেশে ঘুরে বেড়াত। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাকা ঘর পেয়ে তাদের সে যাযাবর জীবনের অবসান ঘটল। গতকাল সকালে সারাদেশের সঙ্গে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ৫৯টি বেদে পরিবারও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত পাকা ঘর পেয়ে তাদের খুশির সীমা নেই। সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমেই তারা মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একত্রিত হতে পেরে তারা খুশি।

কালীগঞ্জের বেদে পল্লীর সদস্যরা জানান, নিজেদের জমি, বসতভিটা না থাকায় তারা যেখানে পেশাগত কাজ মিলতো সেখানেই অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর অথবা তাবু টানিয়ে থাকতো। এমন ছিন্নমূল ৫৯টি বেদে পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করতো। এসব পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলো। এখন থেকে তারা পাকা ঘরে বসবাস করবে। নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার সুযোগ পেয়ে বেদে পল্লীতে খঁশির অন্ত নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন ৩য় ধাপে নির্মিত পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে ওই ঘরের চাবি ও দলিল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এই প্রথম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একই জায়গায় গৃহহীন ৫৯টি বেদে পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। কালীগঞ্জ শহর থেকে ১৫ কি.মি. দূরে বারোবাজার মাঝদিয়া বাঁওড়ের পাশে নিরিবিলি পরিবেশে নির্মিত ওই পাকা ঘরে নতুন জীবনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। সেখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য করা হয়েছে পাকর্, বেশকিছু রাইডও বসানো হয়েছে। আরও বিনোদনের জন্য সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর শিশুদের জন্য করা হবে শিক্ষার ব্যবস্থা। সরেজমিন উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঝদিয়া বাঁওড়ের ধারে নির্মাণ করা ৫৯টি পাকা বাড়ির মনোরম এক দৃশ্য। যেখানে প্রায় ৩ শতাধিক বেদে পরিবারের উপস্থিতিতে আনন্দের বন্যা বইছে। গ্রাম-বাংলার বেদে সম্প্রদায়ের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই জলাধারের পাশেই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য দুটি রুম, একটি রান্না ঘর ও একটি পাকা টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ প্রস্তুত রাখাসহ স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ।

বারোবাজার বেদে পল্লীর সদস্য ফুলমতি বেগম প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এখন আমরা পাকা ঘরে থাকবো। নতুনভাবে জীবন শুরু করবো।

কাশীপুরের বেদে সদস্য কাঞ্চন বিবি জানান, জীবনে কখনও ভাবতেও পারেননি পাকা ঘরে ঘুমাবো। তাই পাকা ঘরে উঠতে পেরে খুশি। তিনি বলেন, এর আগে অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে যাযাবর জীবন-যাপন করতাম। সে জীবনের অবসান ঘটলো। এখন থেকে সন্তানদের নিয়ে জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারবো।

কালীগঞ্জ বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার রেজাউল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৭০০ বেদে পরিবার রয়েছে। তাদের অনেকেই গৃহহীন ও ভূমিহীন। কাশিপুর ও বারোবাজার এলাকার গৃহহীন ও ভূমিহীন বেদে পরিবার এই ঘরগুলো পেয়েছে। ঘরের চাবি হাতে পেয়ে তারা নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কালীগঞ্জে ৫৯টি বেদে পরিবারের জন্য ওই পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা অত্যন্ত অসহায়। তারা সমাজে মানবেতন জীবন-যাপন করে থাকেন। তাদের পরিবারের জীবযাত্রার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে আশ্রয়ণের ওই বেদে পল্লীতে। মূল কথা এসব পিছিয়েপড়া মানুষগুলো মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আনতে পারলে সবারই ভালো লাগার মতো। ঘর পাওয়া মানুষগুলো আজ খুশির জোয়ারে ভাসছে।

শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২ , ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

যাযাবর জীবনের অবসান ৫৯ বেদে পরিবারে

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঘর পেয়ে খুশি বেদে পরিবার -সংবাদ

কখনো রাস্তার ধারে, রেলস্টেশনের পাশে অথবা নৌকার মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে ছিল তাদের বসবাস। এক সপ্তাহে এখানে থাকলেও পরের সপ্তাহে পাওয়া যেত অন্য এলাকায়। ঘরবাড়ি না থাকায় এমনিভাবেই তাদের পেশাগত কারনে তারা সারাদেশে ঘুরে বেড়াত। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাকা ঘর পেয়ে তাদের সে যাযাবর জীবনের অবসান ঘটল। গতকাল সকালে সারাদেশের সঙ্গে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ৫৯টি বেদে পরিবারও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত পাকা ঘর পেয়ে তাদের খুশির সীমা নেই। সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমেই তারা মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একত্রিত হতে পেরে তারা খুশি।

কালীগঞ্জের বেদে পল্লীর সদস্যরা জানান, নিজেদের জমি, বসতভিটা না থাকায় তারা যেখানে পেশাগত কাজ মিলতো সেখানেই অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর অথবা তাবু টানিয়ে থাকতো। এমন ছিন্নমূল ৫৯টি বেদে পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করতো। এসব পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলো। এখন থেকে তারা পাকা ঘরে বসবাস করবে। নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার সুযোগ পেয়ে বেদে পল্লীতে খঁশির অন্ত নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন ৩য় ধাপে নির্মিত পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে ওই ঘরের চাবি ও দলিল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এই প্রথম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একই জায়গায় গৃহহীন ৫৯টি বেদে পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। কালীগঞ্জ শহর থেকে ১৫ কি.মি. দূরে বারোবাজার মাঝদিয়া বাঁওড়ের পাশে নিরিবিলি পরিবেশে নির্মিত ওই পাকা ঘরে নতুন জীবনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। সেখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য করা হয়েছে পাকর্, বেশকিছু রাইডও বসানো হয়েছে। আরও বিনোদনের জন্য সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর শিশুদের জন্য করা হবে শিক্ষার ব্যবস্থা। সরেজমিন উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঝদিয়া বাঁওড়ের ধারে নির্মাণ করা ৫৯টি পাকা বাড়ির মনোরম এক দৃশ্য। যেখানে প্রায় ৩ শতাধিক বেদে পরিবারের উপস্থিতিতে আনন্দের বন্যা বইছে। গ্রাম-বাংলার বেদে সম্প্রদায়ের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই জলাধারের পাশেই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য দুটি রুম, একটি রান্না ঘর ও একটি পাকা টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ প্রস্তুত রাখাসহ স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ।

বারোবাজার বেদে পল্লীর সদস্য ফুলমতি বেগম প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এখন আমরা পাকা ঘরে থাকবো। নতুনভাবে জীবন শুরু করবো।

কাশীপুরের বেদে সদস্য কাঞ্চন বিবি জানান, জীবনে কখনও ভাবতেও পারেননি পাকা ঘরে ঘুমাবো। তাই পাকা ঘরে উঠতে পেরে খুশি। তিনি বলেন, এর আগে অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর বেঁধে যাযাবর জীবন-যাপন করতাম। সে জীবনের অবসান ঘটলো। এখন থেকে সন্তানদের নিয়ে জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারবো।

কালীগঞ্জ বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার রেজাউল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৭০০ বেদে পরিবার রয়েছে। তাদের অনেকেই গৃহহীন ও ভূমিহীন। কাশিপুর ও বারোবাজার এলাকার গৃহহীন ও ভূমিহীন বেদে পরিবার এই ঘরগুলো পেয়েছে। ঘরের চাবি হাতে পেয়ে তারা নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কালীগঞ্জে ৫৯টি বেদে পরিবারের জন্য ওই পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যরা অত্যন্ত অসহায়। তারা সমাজে মানবেতন জীবন-যাপন করে থাকেন। তাদের পরিবারের জীবযাত্রার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে আশ্রয়ণের ওই বেদে পল্লীতে। মূল কথা এসব পিছিয়েপড়া মানুষগুলো মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আনতে পারলে সবারই ভালো লাগার মতো। ঘর পাওয়া মানুষগুলো আজ খুশির জোয়ারে ভাসছে।