শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২, ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে

হীরেন পন্ডিত

এসডিজির অভীষ্ট ৩:৬-এ বলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে কমিয়ে নিয়ে আসা। এসডিজির অভীষ্ট ১১:২-এ বলা হয়েছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহণ ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রাই কিন্তু আমরা অর্জন করতে পারিনি, অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। আমরা দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি! বরং বাড়ছে, আর বাকি থাকলো ২০৩০ সাল সে লক্ষ্য অর্জনে এখন সবাইকে কাজ করতে হবে।

গত রমজানের ঈদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এবার ঈদুল আজহায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। গত ঈদে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপ হলেও এবার চলেছে এক লাখ ২০ হাজার মোটরসাইকেল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়। ঈদ এবং এর আগে ও পরে পাঁচ দিনে ২৩ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। নিহত ৫১ জনের মধ্যে মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়। রাজধানী ঢাকাসহ আরো ১০ জেলায় গত কয়েকদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন? বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যেসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। এসব অনিয়ম ও কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় পাঁচ বছরে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে- অপেশাদার, অস্থায়ী, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছেন এসব গাড়ি। খবরে প্রকাশ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৪৬টি ভারি গাড়ি চালানোর জন্য এখনো পর্যাপ্ত দক্ষ চালক নেই।

এর বাইরে মহাসড়কে কী হচ্ছে? চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১২ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে গাবতলী-পাটুরিয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০টি। এর মধ্যে ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে শুধু একটি পরিবহন। একটি পরিবহন এত দুর্ঘটনায় কেন? কারণ দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফিটনেস হারানোয় বাসগুলোর দূরপাল্লায় চলাচলের সক্ষমতা নেই। বেশির ভাগ বাসের এই পথে চলাচলের অনুমোদন নেই। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্সও নেই।

আমরা কোনোভাবেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা সড়ককে নিপাপদ হিসেবে দেখতে চাই। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। পত্রিকায় প্রকাশিত খবওে বলা হয়েছে এপ্রিল মাসে দেশে সর্বমোট ৪২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নারী ও ৮১ জন শিশুসহ মোট ৫৪৩ জন নিহত ও ৬১২ জন আহত হয়েছেন। ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

একটি পরিবারের কর্মক্ষম মানুষ যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন বা প্রতিবন্ধী হয়ে যান তখন সেই পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট হয়ে যায় নিত্যসঙ্গী। এরকম হাজারও পরিবার সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের উন্নয়নে সব সময় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই আর সময়ক্ষেপণ নয় বরং সড়ককে নিরাপদ করতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়নসহ আইন প্রয়োগে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৭ জন, যা মোট নিহতের ১৬ শতাংশ। এ সময়ে মোট ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় মোট ২৩ জন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে যানবাহন ভিত্তিক নিহতের চিত্র মোটরসাইকেলে সবচেয়ে বেশি। মোটরসাইকেলের সহজলভ্যতা এর জন্য অনেকটা দায়ী। তাছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট না পরা, ট্রাফিক আইন না মেনে দুইজনের অধিক মোটরসাইকেলে আরোহণ করা, মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া মনোভাব সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘায়িত করছে।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিক্রির পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম মানছেন না চালকরা, চালক ও আরোহীরা হেলমেট পরেন না এক মোটরসাইকেলে দুইজনের বেশি না ওঠার নিয়ম মানা হয় না, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল অহরহ চলাচল করে, অনেকের আবার মোটরসাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

বিশ্বের অন্য কোন দেশ এভাবে মোটরসাইকেলকে সহজলভ্য করেনি। গণপরিবহনকে গুরুত্ব না দেওয়ায় বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেলের বিক্রয় ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে কিনা- তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল চালাতে আইনসম্মতভাবে হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক নাজুক। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ভাড়া; অন্যদিকে অদক্ষ চালককে গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দিয়ে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে এবং ফিটনেসহীন গাড়ি চালাতে দিয়ে অসংখ্য মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছে।

এসব দিকে দৃষ্টি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সর্বাগ্রে চালকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম অনেকাংশে টেনে ধরা সম্ভব হবে। এছাড়া ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালকদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের লক্ষ্যে প্রণীত আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। মাদক সেবন করে যাতে চালকরা গাড়ি চালাতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত বিরতিতে চালকদের ডোপ টেস্ট করতে হবে। গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২ , ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে

হীরেন পন্ডিত

এসডিজির অভীষ্ট ৩:৬-এ বলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে কমিয়ে নিয়ে আসা। এসডিজির অভীষ্ট ১১:২-এ বলা হয়েছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহণ ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রাই কিন্তু আমরা অর্জন করতে পারিনি, অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। আমরা দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি! বরং বাড়ছে, আর বাকি থাকলো ২০৩০ সাল সে লক্ষ্য অর্জনে এখন সবাইকে কাজ করতে হবে।

গত রমজানের ঈদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এবার ঈদুল আজহায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। গত ঈদে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপ হলেও এবার চলেছে এক লাখ ২০ হাজার মোটরসাইকেল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়। ঈদ এবং এর আগে ও পরে পাঁচ দিনে ২৩ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। নিহত ৫১ জনের মধ্যে মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়। রাজধানী ঢাকাসহ আরো ১০ জেলায় গত কয়েকদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন? বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যেসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। এসব অনিয়ম ও কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় পাঁচ বছরে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে- অপেশাদার, অস্থায়ী, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছেন এসব গাড়ি। খবরে প্রকাশ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৪৬টি ভারি গাড়ি চালানোর জন্য এখনো পর্যাপ্ত দক্ষ চালক নেই।

এর বাইরে মহাসড়কে কী হচ্ছে? চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১২ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে গাবতলী-পাটুরিয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০টি। এর মধ্যে ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে শুধু একটি পরিবহন। একটি পরিবহন এত দুর্ঘটনায় কেন? কারণ দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফিটনেস হারানোয় বাসগুলোর দূরপাল্লায় চলাচলের সক্ষমতা নেই। বেশির ভাগ বাসের এই পথে চলাচলের অনুমোদন নেই। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্সও নেই।

আমরা কোনোভাবেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা সড়ককে নিপাপদ হিসেবে দেখতে চাই। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। পত্রিকায় প্রকাশিত খবওে বলা হয়েছে এপ্রিল মাসে দেশে সর্বমোট ৪২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নারী ও ৮১ জন শিশুসহ মোট ৫৪৩ জন নিহত ও ৬১২ জন আহত হয়েছেন। ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

একটি পরিবারের কর্মক্ষম মানুষ যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন বা প্রতিবন্ধী হয়ে যান তখন সেই পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট হয়ে যায় নিত্যসঙ্গী। এরকম হাজারও পরিবার সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের উন্নয়নে সব সময় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই আর সময়ক্ষেপণ নয় বরং সড়ককে নিরাপদ করতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়নসহ আইন প্রয়োগে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৭ জন, যা মোট নিহতের ১৬ শতাংশ। এ সময়ে মোট ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় মোট ২৩ জন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে যানবাহন ভিত্তিক নিহতের চিত্র মোটরসাইকেলে সবচেয়ে বেশি। মোটরসাইকেলের সহজলভ্যতা এর জন্য অনেকটা দায়ী। তাছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট না পরা, ট্রাফিক আইন না মেনে দুইজনের অধিক মোটরসাইকেলে আরোহণ করা, মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া মনোভাব সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘায়িত করছে।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিক্রির পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম মানছেন না চালকরা, চালক ও আরোহীরা হেলমেট পরেন না এক মোটরসাইকেলে দুইজনের বেশি না ওঠার নিয়ম মানা হয় না, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল অহরহ চলাচল করে, অনেকের আবার মোটরসাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

বিশ্বের অন্য কোন দেশ এভাবে মোটরসাইকেলকে সহজলভ্য করেনি। গণপরিবহনকে গুরুত্ব না দেওয়ায় বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেলের বিক্রয় ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে কিনা- তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল চালাতে আইনসম্মতভাবে হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক নাজুক। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ভাড়া; অন্যদিকে অদক্ষ চালককে গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দিয়ে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে এবং ফিটনেসহীন গাড়ি চালাতে দিয়ে অসংখ্য মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছে।

এসব দিকে দৃষ্টি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সর্বাগ্রে চালকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম অনেকাংশে টেনে ধরা সম্ভব হবে। এছাড়া ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালকদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের লক্ষ্যে প্রণীত আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। মাদক সেবন করে যাতে চালকরা গাড়ি চালাতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত বিরতিতে চালকদের ডোপ টেস্ট করতে হবে। গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]