শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২, ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

আম রপ্তানি বাড়াতে সংরক্ষণ প্রকল্প ও কিছু কথা

সামসুল ইসলাম টুকু

আমের উন্নয়নের জন্য সরকারের সদিচ্ছার কোন ঘাটতি নেই। সম্প্রতি আম রপ্তানি বাড়াতে ঢাকার গাবতলীতে সংরক্ষণ প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের অস্থির সিদ্ধান্ত, আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া এবং যত্র তত্র এই প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত আম ব্যাবসায়ীদের বিশেষত রপ্তানীকারকদের ভোগান্তি বাড়বে বই কমবে না।

২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় আম উৎপাদিত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় এমন ৩টি প্ল্যান্ট বা প্যাকেজিং হাউস স্থাপনের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কে স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়। পরিপ্রেক্ষিতে ওই অধিদপ্তর স্থান নির্বাচন করে মন্তণালয়কে অবহিত করে। কিন্তু কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এ কাজে যথেষ্ট নয় বলে হঠাৎ করে ২০২১ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ওই কাজ করাবে বলে শোনা যায়। কারণ রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে হলে আম চাষ থেকে আম উৎপাদন পর্যন্ত সব কিছুই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করেই করতে হয়। এজন্য আম উৎপাদিত জেলাগুলোর আম ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা কৃষি অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। হঠাৎ করে ২০২২ সালের জুলাই মাসে জানা যাচ্ছে যে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন।

প্রশ্ন হচ্ছে- আম চাষি ব্যাবসায়ী রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষি অধিদপ্তারের যোগাযোগ একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের। ফলে তাদের সমস্যা সুযোগ সুবিধা সুম্পর্কেও তারা অনেক বেশি জানে; যা কৃষি উন্নয়্যন করপোরেশনের সঙ্গে নেই। তাছাড়া আম সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা থাকার কথা নয়। কারণ তারা মূলত সেচ সার ও বীজ নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ একটি অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব দিলে হযবরল হওয়াই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, তাদের সারা দেশে ১০-১৫ হাজার একর জমি ও বহু অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন একটি মৃত প্রায় ও লোকসানি প্রতিষ্ঠান।

তাছাড়া আম চাষি, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে সম্পর্কহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে তা মুখথুবড়ে পড়তে পারে। দ্বিতীয় প্রশ্ন ঢাকার গাবতলী কোন আম উৎপাদন এলাকা নয়। সেখানে এই আম সংরক্ষণ প্ল্যান্ট বা প্যাকেজিং হাউস হতে পারে না। শুধু তাই নয়, সারা দেশের আম ব্যবসায়ীদের ঢাকার শ্যামপুরে যাওয়ার ভোগান্তির কথা বারবার অবহিত করার পরেও আবার ঢাকার গাবতলীতে এই প্ল্যান্ট স্থাপন পৃথক কোন অর্থ বহন করে না।

তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে যখন যানজট, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশ দূষণের কারণে ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অফিস আদালত, মিল ফ্যাক্টরি বিকেন্দ্রীকরণের প্রবল আওয়াজ উঠেছে। তখন আবার এই ঢাকাতেই প্যাকেজিং হাউস স্থাপন করে ঢাকাকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করা হচ্ছে কী? এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটাই মনে হুওয়া সঙ্গত যে এই প্ল্যান্ট স্থাপনের ক্ষেত্রেও ভীষণ আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গাবতলীর প্রস্তাবিত প্ল্যান্ট কোনভাবেই রপ্তানিবান্ধব হবে না। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা ও হালে নওগাঁ জেলায় ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে সরকারের ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু সেটা যেমন হবে রপ্তানিবান্ধব তেমনি সরকারের সেবা পৌঁছে যাবে আম রপ্তানিকারকদের দোরগোড়ায়। অবকাঠামোগত এ সুবিধার জন্য দীর্ঘ দিন যাবত আবেদন জানিয়ে আসছে এ জেলাগুলো। অতি দ্রুত পাবে ফাইটো স্যানিটারি সনদপত্র। আর এ সুবিধা পেলে স্বাভাবিকভাবেই আম চাষিরা অধিক আম উৎপাদনে উৎসাহিত হবে- রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

[লেখক : সাংবাদিক]

শুক্রবার, ২২ জুলাই ২০২২ , ০৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৩ জিলহজ ১৪৪৩

আম রপ্তানি বাড়াতে সংরক্ষণ প্রকল্প ও কিছু কথা

সামসুল ইসলাম টুকু

আমের উন্নয়নের জন্য সরকারের সদিচ্ছার কোন ঘাটতি নেই। সম্প্রতি আম রপ্তানি বাড়াতে ঢাকার গাবতলীতে সংরক্ষণ প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের অস্থির সিদ্ধান্ত, আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া এবং যত্র তত্র এই প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত আম ব্যাবসায়ীদের বিশেষত রপ্তানীকারকদের ভোগান্তি বাড়বে বই কমবে না।

২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় আম উৎপাদিত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় এমন ৩টি প্ল্যান্ট বা প্যাকেজিং হাউস স্থাপনের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কে স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়। পরিপ্রেক্ষিতে ওই অধিদপ্তর স্থান নির্বাচন করে মন্তণালয়কে অবহিত করে। কিন্তু কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এ কাজে যথেষ্ট নয় বলে হঠাৎ করে ২০২১ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ওই কাজ করাবে বলে শোনা যায়। কারণ রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে হলে আম চাষ থেকে আম উৎপাদন পর্যন্ত সব কিছুই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করেই করতে হয়। এজন্য আম উৎপাদিত জেলাগুলোর আম ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা কৃষি অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। হঠাৎ করে ২০২২ সালের জুলাই মাসে জানা যাচ্ছে যে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন।

প্রশ্ন হচ্ছে- আম চাষি ব্যাবসায়ী রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষি অধিদপ্তারের যোগাযোগ একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের। ফলে তাদের সমস্যা সুযোগ সুবিধা সুম্পর্কেও তারা অনেক বেশি জানে; যা কৃষি উন্নয়্যন করপোরেশনের সঙ্গে নেই। তাছাড়া আম সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা থাকার কথা নয়। কারণ তারা মূলত সেচ সার ও বীজ নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ একটি অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব দিলে হযবরল হওয়াই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, তাদের সারা দেশে ১০-১৫ হাজার একর জমি ও বহু অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন একটি মৃত প্রায় ও লোকসানি প্রতিষ্ঠান।

তাছাড়া আম চাষি, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে সম্পর্কহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলে তা মুখথুবড়ে পড়তে পারে। দ্বিতীয় প্রশ্ন ঢাকার গাবতলী কোন আম উৎপাদন এলাকা নয়। সেখানে এই আম সংরক্ষণ প্ল্যান্ট বা প্যাকেজিং হাউস হতে পারে না। শুধু তাই নয়, সারা দেশের আম ব্যবসায়ীদের ঢাকার শ্যামপুরে যাওয়ার ভোগান্তির কথা বারবার অবহিত করার পরেও আবার ঢাকার গাবতলীতে এই প্ল্যান্ট স্থাপন পৃথক কোন অর্থ বহন করে না।

তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে যখন যানজট, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশ দূষণের কারণে ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অফিস আদালত, মিল ফ্যাক্টরি বিকেন্দ্রীকরণের প্রবল আওয়াজ উঠেছে। তখন আবার এই ঢাকাতেই প্যাকেজিং হাউস স্থাপন করে ঢাকাকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করা হচ্ছে কী? এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটাই মনে হুওয়া সঙ্গত যে এই প্ল্যান্ট স্থাপনের ক্ষেত্রেও ভীষণ আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গাবতলীর প্রস্তাবিত প্ল্যান্ট কোনভাবেই রপ্তানিবান্ধব হবে না। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা ও হালে নওগাঁ জেলায় ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে সরকারের ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু সেটা যেমন হবে রপ্তানিবান্ধব তেমনি সরকারের সেবা পৌঁছে যাবে আম রপ্তানিকারকদের দোরগোড়ায়। অবকাঠামোগত এ সুবিধার জন্য দীর্ঘ দিন যাবত আবেদন জানিয়ে আসছে এ জেলাগুলো। অতি দ্রুত পাবে ফাইটো স্যানিটারি সনদপত্র। আর এ সুবিধা পেলে স্বাভাবিকভাবেই আম চাষিরা অধিক আম উৎপাদনে উৎসাহিত হবে- রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

[লেখক : সাংবাদিক]