বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পোশাক শিল্পে

বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক খাতের জন্য একটা দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার, ইউরোপ আমেরিকা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে। এতে এসব দেশে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। আর এর সঙ্গে ক্রয়াদেশ কমতে শুরু করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০২৩ সালটা রপ্তানি খাতের জন্য ভালো যাবে না।

গতকাল বাংলাদেশের কয়েকজন তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী এই আশঙ্কার কথা জানান। ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানায় আগামী কয়েক মাসের ক্রয়াদেশ আছে। এই ক্রয়াদেশগুলো শেষ হওয়ার মধ্যে নতুন ক্রয়াদেশ না এলে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ওয়েল ডিজাইনারস লিমিডেটের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গতকাল এই আশঙ্কার কথা জানান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘হয়তো আবার একটা খারাপ সময়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০২২ সাল যেমন যাচ্ছে, ২০২৩ সালটা তেমন নাও যেতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ক্রয়াদেশ প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমতে শুরু করেছে। এভাবে কমলে, কয়েক মাস পর হয়তো অনেক কারখানায় কোন কাজ থাকবে না। তখন কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই যেকোন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বহুগুণ। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকা। আর এই মহাদেশের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি চরমে উঠেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরে মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। দেশটিতে গত জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক এক শতাংশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, কানাডাতেও মূল্যস্ফীতি চরমে উঠেছে। দেশটিতে চলতি বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক এক শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মে মাসে মূল্যস্ফীতির এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৮৩ সালের পর এটাই কানাডার মূল্যস্ফীতিতে বড় ঊর্ধ্বগতি।

একইভাবে ইউরোপেও মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি যুক্তরাজ্যে ৯ দশমিক এক শতাংশ, জার্মানিতে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, রাশিয়াতে ১৭ দশমিক এক শতাংশ, তুরস্কে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে দেশগুলোতে পোশাকের চাহিদা কমছে। অর্থাৎ সেখানকার মানুষ খরচ কমানোর জন্য পোশাক কম কিনছে।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুুষের খরচ যখন বেড়ে যায়, তখন সেই খরচ বিভিন্নভাবে কমানোর চেষ্টা করে। তখন যেকোন পণ্যই মানুষ কম কেনে। এর মধ্যে পোশাকও আছে। তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় যে বেড়েছে, সেটা পরিমাণগত রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নয়। সেটা বেড়েছে পোশাকের দাম বাড়ার কারণে। অর্থাৎ আমাদের রপ্তানি পরিমাণগত বাড়েনি। পণ্যের দাম বেড়েছে।’

একদিকে করোনা সংকট, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ৮২ শতাংশই তৈরি পোশাক।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেশি এসেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। নিট পোশাকে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ১৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে সরবরাহ সংকটের কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে। এতে সুবিধা পাচ্ছে দেশের রপ্তানিকারকরা। অর্থাৎ আগে যে পরিমাণ রপ্তানি করে যে টাকা আয় করতেন এখন তারা তার চেয়ে বেশি আয় করছেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না বলে জানান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় আমরা কিছু সুবিধা পাচ্ছি এটা সত্যি। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। দেশে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই আমরা ডলারের দাম বৃদ্ধির সুবিধা ভোগ করতে পারছি না।’

ব্যবসায়ীরা ক্রয়াদেশ কমার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এখনও আশঙ্কাজনক কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে পোশাক খাত সংকটে পড়বে। আবার এটাও বলার উপায় নেই যে খাতটি খুব ভালো করবে। কারণ এখনও যেহেতু ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানার ক্রয়াদেশ আছে, সেহেতু এই সময়ে বিশ্বে যেকোন কিছু ঘটতে পারে। অর্থাৎ পাঁচ মাস আগে প্রেডিক্ট করা কঠিন।’

তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুই ইতিবাচক দিক আছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটি খুব বেশি না। এটা অর্জন করা সহজই হবে বলে আমি মনে করি। চীন পোশাক খাত থেকে বেরিয়ে আসছে। এই সুযোগটা বাংলাদেশে আসবে। তখন বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়বে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি বন্ধ হয়, তাহলে তো সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।’

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এই সংকট আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে বড় প্রভাব পড়ছে দেশের শিল্প-কারখানায়। সম্প্রতি লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। আর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খরচ বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং গ্যাসের চাপ কম থাকায় বেশিরভাগ কারখানার উৎপাদন কমছে। কিছু শিল্প বিকল্প জ্বালানির উৎস ব্যবহার করে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করবে।

শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২ , ০৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পোশাক শিল্পে

রেজাউল করিম

image

বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক খাতের জন্য একটা দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার, ইউরোপ আমেরিকা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে। এতে এসব দেশে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। আর এর সঙ্গে ক্রয়াদেশ কমতে শুরু করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০২৩ সালটা রপ্তানি খাতের জন্য ভালো যাবে না।

গতকাল বাংলাদেশের কয়েকজন তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী এই আশঙ্কার কথা জানান। ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানায় আগামী কয়েক মাসের ক্রয়াদেশ আছে। এই ক্রয়াদেশগুলো শেষ হওয়ার মধ্যে নতুন ক্রয়াদেশ না এলে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ওয়েল ডিজাইনারস লিমিডেটের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গতকাল এই আশঙ্কার কথা জানান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘হয়তো আবার একটা খারাপ সময়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০২২ সাল যেমন যাচ্ছে, ২০২৩ সালটা তেমন নাও যেতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ক্রয়াদেশ প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমতে শুরু করেছে। এভাবে কমলে, কয়েক মাস পর হয়তো অনেক কারখানায় কোন কাজ থাকবে না। তখন কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই যেকোন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বহুগুণ। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকা। আর এই মহাদেশের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি চরমে উঠেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরে মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। দেশটিতে গত জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক এক শতাংশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, কানাডাতেও মূল্যস্ফীতি চরমে উঠেছে। দেশটিতে চলতি বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক এক শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মে মাসে মূল্যস্ফীতির এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৮৩ সালের পর এটাই কানাডার মূল্যস্ফীতিতে বড় ঊর্ধ্বগতি।

একইভাবে ইউরোপেও মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি যুক্তরাজ্যে ৯ দশমিক এক শতাংশ, জার্মানিতে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, রাশিয়াতে ১৭ দশমিক এক শতাংশ, তুরস্কে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে দেশগুলোতে পোশাকের চাহিদা কমছে। অর্থাৎ সেখানকার মানুষ খরচ কমানোর জন্য পোশাক কম কিনছে।

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুুষের খরচ যখন বেড়ে যায়, তখন সেই খরচ বিভিন্নভাবে কমানোর চেষ্টা করে। তখন যেকোন পণ্যই মানুষ কম কেনে। এর মধ্যে পোশাকও আছে। তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় যে বেড়েছে, সেটা পরিমাণগত রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নয়। সেটা বেড়েছে পোশাকের দাম বাড়ার কারণে। অর্থাৎ আমাদের রপ্তানি পরিমাণগত বাড়েনি। পণ্যের দাম বেড়েছে।’

একদিকে করোনা সংকট, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ৮২ শতাংশই তৈরি পোশাক।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেশি এসেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। নিট পোশাকে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ১৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে সরবরাহ সংকটের কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে। এতে সুবিধা পাচ্ছে দেশের রপ্তানিকারকরা। অর্থাৎ আগে যে পরিমাণ রপ্তানি করে যে টাকা আয় করতেন এখন তারা তার চেয়ে বেশি আয় করছেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না বলে জানান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ায় আমরা কিছু সুবিধা পাচ্ছি এটা সত্যি। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। দেশে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই আমরা ডলারের দাম বৃদ্ধির সুবিধা ভোগ করতে পারছি না।’

ব্যবসায়ীরা ক্রয়াদেশ কমার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এখনও আশঙ্কাজনক কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে পোশাক খাত সংকটে পড়বে। আবার এটাও বলার উপায় নেই যে খাতটি খুব ভালো করবে। কারণ এখনও যেহেতু ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানার ক্রয়াদেশ আছে, সেহেতু এই সময়ে বিশ্বে যেকোন কিছু ঘটতে পারে। অর্থাৎ পাঁচ মাস আগে প্রেডিক্ট করা কঠিন।’

তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুই ইতিবাচক দিক আছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটি খুব বেশি না। এটা অর্জন করা সহজই হবে বলে আমি মনে করি। চীন পোশাক খাত থেকে বেরিয়ে আসছে। এই সুযোগটা বাংলাদেশে আসবে। তখন বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়বে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি বন্ধ হয়, তাহলে তো সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।’

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এই সংকট আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে বড় প্রভাব পড়ছে দেশের শিল্প-কারখানায়। সম্প্রতি লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। আর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খরচ বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং গ্যাসের চাপ কম থাকায় বেশিরভাগ কারখানার উৎপাদন কমছে। কিছু শিল্প বিকল্প জ্বালানির উৎস ব্যবহার করে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করবে।