শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শক্তি প্রয়োগ করেছে সেনা বাহিনী। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা যেসব তাঁবুতে থাকতেন সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল ভোর রাতে এ অভিযান চালিয়েছে সেনা বাহিনীর সদস্যরা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন দিনেশ গুনাবর্ধনে। রনিল বিক্রমাসিংহে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসা তথা প্রভাবশালী রাজাপাকসা পরিবারের মিত্র বলেই অনেক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ’ করার পর রাজধানী কলম্বোর রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে বহু তাঁবুও ধ্বংস করে দিয়েছে সৈন্যরা। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী নেতাসহ প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিসের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীরা সরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাদের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়। অবশ্য ২২ জুলাই রাষ্ট্রপতি সচিবালয় থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।
‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ নিপুন চারকা জয়সেকারা নামে তরুণ এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘মাঝরাতে আমরা শুনতে পেলাম, সেনাবাহিনীর একটি বিশাল দল গোটা-গো-গামার দিকে আসছে এবং হঠাৎ আমরা তাদেরকে রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে ছুটে যেতে দেখলাম।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘এরপরই শিগগিরই তারা এলাকাটি ঘেরাও করে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে আক্রমণ করে যেন আমরা গু-া।’
নিপুন চারকা জয়সেকারা বলেন, ‘কিছু লোককে খুব খারাপভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে; অমানবিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে যেন তাদের কোনো হৃদয় নেই। আমাদের এখন কোথাও যাওয়ার নেই। আমরা গোটা-গো-গামাতে আটকে আছি। আমার কাছে এখন কিছুই নেই; এমনকি আমার ফোনও না। আমি এখন পুরোনো একটি ফোন ব্যবহার করছি। জামাকাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই।’
আলজাজিরা বলছে, মধ্যরাতে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে প্রায় ১০ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিক্ষোভস্থলে হামলার এই ঘটনা ঘটলো।
শপথ নেওয়ার পরপরই বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা কিংবা সরকারি কোনো ভবন দখল নেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক কার্যক্রম নয়। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ ধরনের কোনো কিছু করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তার পূর্বসূরি গোতাবায়া রাজাপাকসে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান তিনি। এরপর রনিল বিক্রমাসিংহে দিন দু’য়েক আগে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
শ্রীলঙ্কা বার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, মধ্যরাতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান ও নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের অবগত করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালিয়া পেইরিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের অবস্থান অবশ্যই জানাতে হবে।’
শপথ নিলেন দিনেশ গুণাবর্ধনে
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তার স্কুল সহপাঠী দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সী গুণাবর্ধনে নিজেও বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। মূলত মধ্যরাতে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে গত ১০৪ দিন ধরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া এবং তাদের বেশ কয়েকজনকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর গুণাবর্ধনেকে নিয়োগ দেওয়া হলো। বিক্রমাসিংহের উপস্থিতিতে শপথ নেন শ্রীলঙ্কার শাসক দল পোডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)-এর একজন সাবেক মন্ত্রী দিনেশ গুণাবর্ধনে।
এসময় আইনপ্রণেতা এবং কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেখানে ইউনিফর্ম পরা সামরিক অফিসাররা সামনে বসে ছিলেন।
এছাড়া, শ্রীলঙ্কায় একযোগে পদত্যাগ করা আগের মন্ত্রিসভাই আবারও শপথ নিতে চলেছে। গতকাল রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে শপথ নেওয়ার কথা ছিল তাদের। জাতীয় সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে এই মন্ত্রিসভা এবং পরে তাতে রদবদল আনা হবে।
শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২ , ০৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শক্তি প্রয়োগ করেছে সেনা বাহিনী। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা যেসব তাঁবুতে থাকতেন সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল ভোর রাতে এ অভিযান চালিয়েছে সেনা বাহিনীর সদস্যরা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন দিনেশ গুনাবর্ধনে। রনিল বিক্রমাসিংহে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসা তথা প্রভাবশালী রাজাপাকসা পরিবারের মিত্র বলেই অনেক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ’ করার পর রাজধানী কলম্বোর রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে বহু তাঁবুও ধ্বংস করে দিয়েছে সৈন্যরা। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী নেতাসহ প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিসের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীরা সরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাদের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়। অবশ্য ২২ জুলাই রাষ্ট্রপতি সচিবালয় থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।
‘গোটা-গো-গামা’ প্রতিবাদস্থলে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ নিপুন চারকা জয়সেকারা নামে তরুণ এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘মাঝরাতে আমরা শুনতে পেলাম, সেনাবাহিনীর একটি বিশাল দল গোটা-গো-গামার দিকে আসছে এবং হঠাৎ আমরা তাদেরকে রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে ছুটে যেতে দেখলাম।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘এরপরই শিগগিরই তারা এলাকাটি ঘেরাও করে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে আক্রমণ করে যেন আমরা গু-া।’
নিপুন চারকা জয়সেকারা বলেন, ‘কিছু লোককে খুব খারাপভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে; অমানবিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে যেন তাদের কোনো হৃদয় নেই। আমাদের এখন কোথাও যাওয়ার নেই। আমরা গোটা-গো-গামাতে আটকে আছি। আমার কাছে এখন কিছুই নেই; এমনকি আমার ফোনও না। আমি এখন পুরোনো একটি ফোন ব্যবহার করছি। জামাকাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই।’
আলজাজিরা বলছে, মধ্যরাতে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে প্রায় ১০ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিক্ষোভস্থলে হামলার এই ঘটনা ঘটলো।
শপথ নেওয়ার পরপরই বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা কিংবা সরকারি কোনো ভবন দখল নেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক কার্যক্রম নয়। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ ধরনের কোনো কিছু করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তার পূর্বসূরি গোতাবায়া রাজাপাকসে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান তিনি। এরপর রনিল বিক্রমাসিংহে দিন দু’য়েক আগে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
শ্রীলঙ্কা বার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, মধ্যরাতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান ও নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের অবগত করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালিয়া পেইরিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের অবস্থান অবশ্যই জানাতে হবে।’
শপথ নিলেন দিনেশ গুণাবর্ধনে
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তার স্কুল সহপাঠী দিনেশ গুণাবর্ধনেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সী গুণাবর্ধনে নিজেও বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। মূলত মধ্যরাতে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে গত ১০৪ দিন ধরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া এবং তাদের বেশ কয়েকজনকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর গুণাবর্ধনেকে নিয়োগ দেওয়া হলো। বিক্রমাসিংহের উপস্থিতিতে শপথ নেন শ্রীলঙ্কার শাসক দল পোডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)-এর একজন সাবেক মন্ত্রী দিনেশ গুণাবর্ধনে।
এসময় আইনপ্রণেতা এবং কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেখানে ইউনিফর্ম পরা সামরিক অফিসাররা সামনে বসে ছিলেন।
এছাড়া, শ্রীলঙ্কায় একযোগে পদত্যাগ করা আগের মন্ত্রিসভাই আবারও শপথ নিতে চলেছে। গতকাল রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে শপথ নেওয়ার কথা ছিল তাদের। জাতীয় সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে এই মন্ত্রিসভা এবং পরে তাতে রদবদল আনা হবে।