পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চ মালিকরা ভাড়া কমালেও ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর একসময় যাত্রীদের জিম্মি করে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের যাত্রীবাহী নৌযানের এবং নৌযান নির্মাণ শিল্পের রমরমা ব্যবসা এখন আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছে। তাদের এই ব্যবসা আদৌ টিকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। ২৬ জুন সেতুটি চালু হওয়ার দিন থেকেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদীবন্দরসহ পটুয়াখালী ও ভোলা বন্দর ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা সদরসহ প্রায় ২০টি স্টেশন থেকে রাজধানীমুখী নৌযানগুলোতে ভ্রমণে যাত্রীদের আগ্রহে কিছুটা ভাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীবন্দরে এখন যাত্রীর অপেক্ষায় নৌযানগুলো তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে। ফলে নৌযান মালিকরা ইতোমধ্যে ডেক থেকে প্রথম শ্রেণী ও ভিআইপি কক্ষগুলোর ভাড়া কমিয়ে যাত্রীদের আগ্রহ বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে সে অনুযায়ী ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেবেন নৌযান মালিকরা।

পদ্মা সেতু হয়ে সড়ক পথে বিভাগীয় সদর বরিশালের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার হলেও নৌপথের দূরত্বও ১৬৫ কিলোমিটারের মতো। সেতু হয়ে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি ইতোমধ্যে বরিশাল-ঢাকা সড়ক পথে ৫০০ টাকায় বাতানুকুল (এসি) বাস সার্ভিস চালু করেছে। বেসরকারি গ্রীন লাইন সাড়ে ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে।

তবে বেসরকারি নৌযান মালিকরা সড়ক পথ থেকে নৌপথে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ডেক শ্রেণীর ভাড়া সরকারি নির্ধারিত হারের প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ২০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। প্রথম শ্রেণীর একক শয্যার কক্ষের ভাড়া ১৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় এবং দ্বৈত শয্যার কক্ষের ভাড়া আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় হ্রাস করা হয়েছে। ভিআইপি শ্রেণীতেও ভাড়া ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে।

শুধু বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই প্রায় ২৫টি যাত্রীবাহী নৌযানের রুট পারমিট রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীর সঙ্গে চলাচলকারী নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৭০টি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত বরিশাল-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ১৮টি নৌযান নিয়মিত চলাচল করলেও গত সপ্তাহখানেক ধরে উভয়প্রান্ত থেকে গড়ে ৪টি করে ৮টির বেশি নৌযান চলাচল করছে না। নৌযান মালিকদের হিসাবে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি নৌযানের বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রতি ফিরতি ট্রিপে পরিচালন ব্যয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত ধারণ ক্ষমতার ৭৫% যাত্রী না হলে পরিচালন ব্যয়ও উঠবে না। কিন্তু যাত্রীর অভাবে গত ৮ দিন ধরে নিয়মিত চলাচলকারী প্রায় অর্ধেক নৌযান চলাচল বন্ধ বা সীমিত রাখা হয়েছে।

তবে বেসরকারি নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (যাত্রী চলাচল) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বরিশালের সুন্দরবন নেভিগেশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাঈদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ এ স্থাপনা দেখার আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে। নৌপথে সময় একটু বেশি লাগলেও রাতে ঘুমিয়ে সকালে ঢাকায় পৌঁছে কাজ সেরে আবার রাতে বরিশালে ফিরতি নৌযানে আসতে পারছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে ভাড়াও অনেক কম। আর জীবনের নিরাপত্তাও বেশি। তাই অদূর ভবিষ্যতেই যাত্রীরা সড়ক পথের মতো আগের মতোই নৌপথও ব্যবহার করতে শুরু করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে বেশিরভাগ নৌযান মালিকরা এখনও সম্পূর্ণ হতাশ না হলেও আগের মতো নৌপথে রমরমা ব্যাবসা আসবে না বলেই মনে করছেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অনুকূলে আসবে বলেই এখনও সম্পূর্ণ নিরাশ হতেও রাজি নন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিতি এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।

শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২ , ০৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চ মালিকরা ভাড়া কমালেও ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর একসময় যাত্রীদের জিম্মি করে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের যাত্রীবাহী নৌযানের এবং নৌযান নির্মাণ শিল্পের রমরমা ব্যবসা এখন আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছে। তাদের এই ব্যবসা আদৌ টিকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। ২৬ জুন সেতুটি চালু হওয়ার দিন থেকেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদীবন্দরসহ পটুয়াখালী ও ভোলা বন্দর ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা সদরসহ প্রায় ২০টি স্টেশন থেকে রাজধানীমুখী নৌযানগুলোতে ভ্রমণে যাত্রীদের আগ্রহে কিছুটা ভাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীবন্দরে এখন যাত্রীর অপেক্ষায় নৌযানগুলো তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে। ফলে নৌযান মালিকরা ইতোমধ্যে ডেক থেকে প্রথম শ্রেণী ও ভিআইপি কক্ষগুলোর ভাড়া কমিয়ে যাত্রীদের আগ্রহ বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে সে অনুযায়ী ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেবেন নৌযান মালিকরা।

পদ্মা সেতু হয়ে সড়ক পথে বিভাগীয় সদর বরিশালের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার হলেও নৌপথের দূরত্বও ১৬৫ কিলোমিটারের মতো। সেতু হয়ে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি ইতোমধ্যে বরিশাল-ঢাকা সড়ক পথে ৫০০ টাকায় বাতানুকুল (এসি) বাস সার্ভিস চালু করেছে। বেসরকারি গ্রীন লাইন সাড়ে ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে।

তবে বেসরকারি নৌযান মালিকরা সড়ক পথ থেকে নৌপথে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ডেক শ্রেণীর ভাড়া সরকারি নির্ধারিত হারের প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ২০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। প্রথম শ্রেণীর একক শয্যার কক্ষের ভাড়া ১৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় এবং দ্বৈত শয্যার কক্ষের ভাড়া আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় হ্রাস করা হয়েছে। ভিআইপি শ্রেণীতেও ভাড়া ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে।

শুধু বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই প্রায় ২৫টি যাত্রীবাহী নৌযানের রুট পারমিট রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীর সঙ্গে চলাচলকারী নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৭০টি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত বরিশাল-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ১৮টি নৌযান নিয়মিত চলাচল করলেও গত সপ্তাহখানেক ধরে উভয়প্রান্ত থেকে গড়ে ৪টি করে ৮টির বেশি নৌযান চলাচল করছে না। নৌযান মালিকদের হিসাবে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি নৌযানের বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রতি ফিরতি ট্রিপে পরিচালন ব্যয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত ধারণ ক্ষমতার ৭৫% যাত্রী না হলে পরিচালন ব্যয়ও উঠবে না। কিন্তু যাত্রীর অভাবে গত ৮ দিন ধরে নিয়মিত চলাচলকারী প্রায় অর্ধেক নৌযান চলাচল বন্ধ বা সীমিত রাখা হয়েছে।

তবে বেসরকারি নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (যাত্রী চলাচল) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বরিশালের সুন্দরবন নেভিগেশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাঈদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ এ স্থাপনা দেখার আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে। নৌপথে সময় একটু বেশি লাগলেও রাতে ঘুমিয়ে সকালে ঢাকায় পৌঁছে কাজ সেরে আবার রাতে বরিশালে ফিরতি নৌযানে আসতে পারছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে ভাড়াও অনেক কম। আর জীবনের নিরাপত্তাও বেশি। তাই অদূর ভবিষ্যতেই যাত্রীরা সড়ক পথের মতো আগের মতোই নৌপথও ব্যবহার করতে শুরু করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে বেশিরভাগ নৌযান মালিকরা এখনও সম্পূর্ণ হতাশ না হলেও আগের মতো নৌপথে রমরমা ব্যাবসা আসবে না বলেই মনে করছেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অনুকূলে আসবে বলেই এখনও সম্পূর্ণ নিরাশ হতেও রাজি নন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিতি এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।