নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে সামাজিক মূল্যবোধ

সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনা আমাদের দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। এগুলো হলো নড়াইলে একজন কলেজ অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা, সাভারের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক খুন এবং রাজশাহীতে একজন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ। তিনটি ঘটনাই দেশ ও জাতির জন্য বেশ লজ্জাজনক, অনাকাক্সিক্ষত এবং অগ্রহণযোগ্য। এগুলো নৈতিক অবক্ষয়ের সাম্প্রতিকতম নিকৃষ্টতর দৃষ্টান্ত। ঘটনাগুলো জাতির বিবেককে যেমন চরমভাবে নাড়া দিয়েছে, তেমনিভাবে সবাইকে অবাক ও বিস্মিত করেছে।

মানসিক বিকাশ ও নৈতিক চরিত্র গঠনে সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক সুশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। মূলত মায়ের কোলে শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি। পরিবার থেকেই শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। ফলে পরিবার মানব সন্তানের প্রথম শিক্ষা নিকেতন। সন্তানের মূল্যবোধ, চরিত্র, চেতনা ও বিশ্বাস জন্ম নেয় পরিবার থেকেই। শিশুর সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষার প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র হলো পরিবার। আর পরিবার থেকেই মূল্যবোধ শিখালে সন্তানের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রগতিশীল, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ন করে তোলে। সামাজিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে মূল্যবোধ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে একে অপরের মাঝে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব প্রকট। পরমত সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্য সামাজিক মূল্যবোধের অন্যতম চাবিকাঠি। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা লক্ষ্য করা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছোট ছোট অনু পরিবারগুলোতে ঈর্ষা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে, পারিবারিক আবহকে করে তুলেছে বিষাক্ত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সন্তানেরা। অসুস্থ পারিবারিক আবহে সন্তানও অস্বাভাবিক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, পেশীশক্তির প্রভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সর্বোপরি লাগামহীন অশ্লীলতাই আজকের তরুণ সমাজকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে প্রয়োজন পরমত সহিষ্ণুতার চর্চা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা। এছাড়া সকল প্রকার অশ্লীলতা শুধু বর্জনই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রতিরোধও করতে হবে। যার শুরুটা হতে হবে নিজ গৃহ থেকে। সামাজিক সমস্যা দূর করতে রাষ্ট্রের সহযোগীতার হয়তো প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু মূল দায়িত্ব সমাজ তথা পরিবারকেই নিতে হবে। সন্তানকে আরো বেশি সময় দিতে হবে, তাদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি তার নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

জিল্লুর রহমান

আরও খবর

শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২ , ০৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৪ জিলহজ ১৪৪৩

নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে সামাজিক মূল্যবোধ

সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনা আমাদের দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। এগুলো হলো নড়াইলে একজন কলেজ অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা, সাভারের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক খুন এবং রাজশাহীতে একজন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ। তিনটি ঘটনাই দেশ ও জাতির জন্য বেশ লজ্জাজনক, অনাকাক্সিক্ষত এবং অগ্রহণযোগ্য। এগুলো নৈতিক অবক্ষয়ের সাম্প্রতিকতম নিকৃষ্টতর দৃষ্টান্ত। ঘটনাগুলো জাতির বিবেককে যেমন চরমভাবে নাড়া দিয়েছে, তেমনিভাবে সবাইকে অবাক ও বিস্মিত করেছে।

মানসিক বিকাশ ও নৈতিক চরিত্র গঠনে সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক সুশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। মূলত মায়ের কোলে শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি। পরিবার থেকেই শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে। ফলে পরিবার মানব সন্তানের প্রথম শিক্ষা নিকেতন। সন্তানের মূল্যবোধ, চরিত্র, চেতনা ও বিশ্বাস জন্ম নেয় পরিবার থেকেই। শিশুর সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষার প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র হলো পরিবার। আর পরিবার থেকেই মূল্যবোধ শিখালে সন্তানের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রগতিশীল, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ন করে তোলে। সামাজিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে মূল্যবোধ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে একে অপরের মাঝে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব প্রকট। পরমত সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্য সামাজিক মূল্যবোধের অন্যতম চাবিকাঠি। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা লক্ষ্য করা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছোট ছোট অনু পরিবারগুলোতে ঈর্ষা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে, পারিবারিক আবহকে করে তুলেছে বিষাক্ত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সন্তানেরা। অসুস্থ পারিবারিক আবহে সন্তানও অস্বাভাবিক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, পেশীশক্তির প্রভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সর্বোপরি লাগামহীন অশ্লীলতাই আজকের তরুণ সমাজকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে প্রয়োজন পরমত সহিষ্ণুতার চর্চা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা। এছাড়া সকল প্রকার অশ্লীলতা শুধু বর্জনই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রতিরোধও করতে হবে। যার শুরুটা হতে হবে নিজ গৃহ থেকে। সামাজিক সমস্যা দূর করতে রাষ্ট্রের সহযোগীতার হয়তো প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু মূল দায়িত্ব সমাজ তথা পরিবারকেই নিতে হবে। সন্তানকে আরো বেশি সময় দিতে হবে, তাদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি তার নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

জিল্লুর রহমান