অভিযানে জঙ্গল ছলিমপুরের অবৈধ সাম্রাজ্য উচ্ছেদ

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠে ছিল সন্ত্রসীদের সাম্র্রাজ্য। সে সাম্র্রাজের নাম দেওয়া হয় আলী নগর। সাম্র্রাজ্যের রাজা হলেন মোহাম্মদ ইয়াছিন। যে রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন হয় রাজার অনুমতি। রাজ্যের প্রতিটি প্রজার জন্য বানোনো হয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র। সে সাম্রাজ্যে চালানো হয় যৌথ অভিযান। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা এ অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে ইয়াছিন বাহিনীর প্রধান ইয়াছিনসহ মোট ৫ জন জেলহাজতে আছেন। অভিযানের সময় গা-ঢাকা দিয়েছেন তার বাহিনীর শীর্ষ সন্ত্রসীরা।

অভিযানে পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত ৩টি স্কেভেটর, পাহাড় কাটা মাটি পাচারে ব্যবহৃত ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১ টি ট্রাক জব্দ করা হয়। এসময় পাহাড় কেটে প্লট বিক্রির উৎসব দেখে বিস্মিত হন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্তা ব্যাক্তিরা। উপজেলা প্রশাসন বলছে, দখলদারদের ‘দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য’ ভেঙে জঙ্গল সলিমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগার, আইকনিক মসজিদ, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নভোথিয়েটার, ইকোপার্ক ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ অভিযান চালানো হয়েছে। সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক জিন্নাতুল ইসলাম ও সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য। সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, জঙ্গল সলিমপুরকে ঘিরে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত সকল সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পেলে উচ্ছেদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই (শুক্রবার) স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ আলীনগর পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে বহরের একটি গাড়ি থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আরিফকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে ইয়াসিনসহ তার সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় হামলার শিকার ইউপি সদস্য আরিফ এর ছোট ভাই আব্দুল আলিম বাদী হয়ে ইয়াসিনসহ ৬ জনকে আসামি করে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে হত্যা, গুম, সরকারি জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮টি মামলা রয়েছে।

রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২ , ০৯ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৫ জিলহজ ১৪৪৩

অভিযানে জঙ্গল ছলিমপুরের অবৈধ সাম্রাজ্য উচ্ছেদ

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

image

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠে ছিল সন্ত্রসীদের সাম্র্রাজ্য। সে সাম্র্রাজের নাম দেওয়া হয় আলী নগর। সাম্র্রাজ্যের রাজা হলেন মোহাম্মদ ইয়াছিন। যে রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন হয় রাজার অনুমতি। রাজ্যের প্রতিটি প্রজার জন্য বানোনো হয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র। সে সাম্রাজ্যে চালানো হয় যৌথ অভিযান। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা এ অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে ইয়াছিন বাহিনীর প্রধান ইয়াছিনসহ মোট ৫ জন জেলহাজতে আছেন। অভিযানের সময় গা-ঢাকা দিয়েছেন তার বাহিনীর শীর্ষ সন্ত্রসীরা।

অভিযানে পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত ৩টি স্কেভেটর, পাহাড় কাটা মাটি পাচারে ব্যবহৃত ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১ টি ট্রাক জব্দ করা হয়। এসময় পাহাড় কেটে প্লট বিক্রির উৎসব দেখে বিস্মিত হন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্তা ব্যাক্তিরা। উপজেলা প্রশাসন বলছে, দখলদারদের ‘দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য’ ভেঙে জঙ্গল সলিমপুরে কেন্দ্রীয় কারাগার, আইকনিক মসজিদ, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নভোথিয়েটার, ইকোপার্ক ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ অভিযান চালানো হয়েছে। সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক জিন্নাতুল ইসলাম ও সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য। সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, জঙ্গল সলিমপুরকে ঘিরে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত সকল সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পেলে উচ্ছেদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই (শুক্রবার) স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ আলীনগর পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে বহরের একটি গাড়ি থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আরিফকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে ইয়াসিনসহ তার সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় হামলার শিকার ইউপি সদস্য আরিফ এর ছোট ভাই আব্দুল আলিম বাদী হয়ে ইয়াসিনসহ ৬ জনকে আসামি করে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে হত্যা, গুম, সরকারি জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮টি মামলা রয়েছে।