ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুই চবি ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। একই সঙ্গে নিপীড়নকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বহিষ্কৃতরা হলেনÑ ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আবছার বাবু।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছে। তবে এই ঘটনার ‘হোতা’ হিসেবে গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আজিমকে ছাত্রলীগের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেছেন এই অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আবছার বাবু শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকায় তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজিম ও বাবু ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাকিরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
প্রক্টর বলেন, বোর্ড অব হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির আজকের (গতকালের) সভায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ এসেছে। আমরা সেগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করব।
ওই ঘটনায় মোট ছয়জনের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে বলে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় র্যাব। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আজিম ইতিহাস বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের নুরুল আবছার নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া নুর হোসেন শাওন ও মাসুদ রানা নামে দুইজনকে হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানায় র্যাব। র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার আজিম এই ঘটনার ‘হোতা’।
তবে সর্বশেষ নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্পের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান।
এর আগে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান অধিবেশন চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন উপাচার্য তার (ওয়াসিকা) প্রশ্নের জবাবে জড়িতদের ‘আজীবন’ বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন। শিরীন আখতার বলেন, লজ্জার সঙ্গে বলছিÑ যে, চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের তিনজন আমাদের ছাত্র। ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আজ (গতকাল) অথবা কালের (আজ) মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করব তাদের। এ ব্যাপারে আমরা কোন ছাড় দিব না।’
গত শুক্রবার রাতে ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবকরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগে তাদের কোন পদ নেই বলে তাদের সংগঠনটির কর্মী হিসেবে তুলে ধরতে চাননি র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ। এই ঘটনার ‘হোতা’ হিসেবে গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আজিমকে ছাত্রলীগের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেছেন, এই অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।
অন্যদিকে, বাজেট আলোচনায় সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, আমি এখানকার সাবেক ছাত্রী। আমার ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রী বা ছাত্র নিপীড়নের শিকার হবে, এটা কখনো কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত, এটা শুনে তো আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিভাবে জড়িত হতে পারে! তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ঘটনায় গত বুধবার মামলা করা হয় হাটহাজারী থানায়। একপর্যায়ে আসামিদের একজন তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত না হলে ধারণকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দেয়। তারা ওই শিক্ষার্থীকে এক ঘণ্টা আটকে রেখে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুর ২টি মোবাইল নগদ ১৩ হাজার ৭শ’ টাকা নিয়ে যায়।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতি
ঘটনার পাঁচ দিন পর এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিবৃতি দিয়ে এ সমিতি বলেছে, ওই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় তারা ‘উদ্বিগ্ন’। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। গত শুক্রবার সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে- যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশ জ্ঞান চর্চার পূর্ব শর্ত। ‘এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় চট্টগ্রাম শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।’ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস যখন উত্তাল, তখন ‘বর্ষাবরণ’র সাংস্কৃতিক আয়োজন ও ফলাহার করে সমালোচনার জন্ম দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। যদিও শুক্রবার বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও সবক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, নিপীড়নের বিরুদ্ধের গতকাল রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদী মানবন্ধনে দায়ীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করা হয় -সংবাদ
আরও খবররবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২ , ০৯ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৫ জিলহজ ১৪৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও সবক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, নিপীড়নের বিরুদ্ধের গতকাল রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদী মানবন্ধনে দায়ীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করা হয় -সংবাদ
ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুই চবি ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। একই সঙ্গে নিপীড়নকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বহিষ্কৃতরা হলেনÑ ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আবছার বাবু।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছে। তবে এই ঘটনার ‘হোতা’ হিসেবে গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আজিমকে ছাত্রলীগের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেছেন এই অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আবছার বাবু শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকায় তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজিম ও বাবু ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাকিরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
প্রক্টর বলেন, বোর্ড অব হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির আজকের (গতকালের) সভায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ এসেছে। আমরা সেগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করব।
ওই ঘটনায় মোট ছয়জনের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে বলে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় র্যাব। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আজিম ইতিহাস বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের নুরুল আবছার নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া নুর হোসেন শাওন ও মাসুদ রানা নামে দুইজনকে হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানায় র্যাব। র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার আজিম এই ঘটনার ‘হোতা’।
তবে সর্বশেষ নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্পের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান।
এর আগে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান অধিবেশন চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন উপাচার্য তার (ওয়াসিকা) প্রশ্নের জবাবে জড়িতদের ‘আজীবন’ বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন। শিরীন আখতার বলেন, লজ্জার সঙ্গে বলছিÑ যে, চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের তিনজন আমাদের ছাত্র। ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আজ (গতকাল) অথবা কালের (আজ) মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করব তাদের। এ ব্যাপারে আমরা কোন ছাড় দিব না।’
গত শুক্রবার রাতে ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবকরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগে তাদের কোন পদ নেই বলে তাদের সংগঠনটির কর্মী হিসেবে তুলে ধরতে চাননি র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ। এই ঘটনার ‘হোতা’ হিসেবে গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আজিমকে ছাত্রলীগের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেছেন, এই অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।
অন্যদিকে, বাজেট আলোচনায় সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, আমি এখানকার সাবেক ছাত্রী। আমার ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রী বা ছাত্র নিপীড়নের শিকার হবে, এটা কখনো কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত, এটা শুনে তো আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিভাবে জড়িত হতে পারে! তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ঘটনায় গত বুধবার মামলা করা হয় হাটহাজারী থানায়। একপর্যায়ে আসামিদের একজন তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত না হলে ধারণকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দেয়। তারা ওই শিক্ষার্থীকে এক ঘণ্টা আটকে রেখে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুর ২টি মোবাইল নগদ ১৩ হাজার ৭শ’ টাকা নিয়ে যায়।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতি
ঘটনার পাঁচ দিন পর এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিবৃতি দিয়ে এ সমিতি বলেছে, ওই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় তারা ‘উদ্বিগ্ন’। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। গত শুক্রবার সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে- যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশ জ্ঞান চর্চার পূর্ব শর্ত। ‘এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় চট্টগ্রাম শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।’ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস যখন উত্তাল, তখন ‘বর্ষাবরণ’র সাংস্কৃতিক আয়োজন ও ফলাহার করে সমালোচনার জন্ম দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। যদিও শুক্রবার বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।