‘ভূমি পুনরুদ্ধারের আগে শান্তি আলোচনায় বসবে না ইউক্রেন’

রাশিয়ার দখল করে নেয়া ভূমি পুনরুদ্ধার বাদ রেখে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা কোন প্রকার শান্তি আলোচনায় যাবেন না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি দাবি করেন, এমন কিছু করা হলে তাতে শুধু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে।

সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, (ইউক্রেনে) যুদ্ধবিরতি ঘোষণা কিংবা তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে রাশিয়া সবসময়ই ইতিবাচক। কিন্তু ইউক্রেনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জেলেনস্কি।

তার এই অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জেলনস্কি বলেন, ‘তারা (রুশ বাহিনী) আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলে এখানে এলো, জনগণকে হত্যা করল, ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করল আর এখন বলছে ইউক্রেন আলোচনা করতে চাইছে না!’ ‘তারা মানুষ হত্যা করছে, বিভিন্ন শহরে ঢুকে সেসব ধ্বংস করে ফেলছে, তারপর বলছে— চল আলোচনা শুরু করি। কাদের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে? পাথরের সঙ্গে? তারা রক্তস্নান করছে, তাদের সারা দেহে নিহত ইউক্রেনীয়দের রক্ত; আর এই রক্ত ধুয়ে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা তা হতে দেব না।’

‘ক্ষুধার্ত তিমি যেভাবে তার খাবার গিলে খায়, তেমনি একে একে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে চলেছে রাশিয়া। এই মুহূর্তে যদি যুদ্ধবিরতি কিংবা শান্তি আলোচনা শুরু হয়, তাহলে তারা কিছুদিন, কয়েক মাস কিংবা ১-২ বছর শান্ত থাকবে। তারপর ফের শুরু করবে ইউক্রেন দখলের অভিযান।

‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনে দখল করা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রুশ বাহিনী না সরছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা শান্তি আলোচনা কোনোটাই সম্ভব নয়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘সমাজ বিশ্বাস করে প্রথমে অবশ্যই সব ভূমি স্বাধীন করতে হবে এবং তার পরে কী করা প্রয়োজন ও আগামী শতাব্দীগুলোতে কিভাবে বাঁচতে পারবো তা নিয়ে দরকষাকষি করতে পারি’। তিনি আরও বলেন, আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রয়োজন হচ্ছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা রাশিয়াকে সম্মুখ যুদ্ধের লাইন থেকে শত শত মাইল দূরের শান্তিপূর্ণ শহরগুলোতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে পারে’। শস্য রফতানি ফের শুরুর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, মস্কোকে কূটনৈতিক ছাড় দেয়ায় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে, তবে ভবিষ্যতের জন্য এটা শুধু একটি অস্থায়ী অবকাশ এবং বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে’।

ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে শস্য রফতানি ফের চালু করতে শুক্রবার চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ধারণা করা হচ্ছে এই চুক্তির ফলে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে থাকা খাদ্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে।

চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে। এদিকে, অভিযানরত রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে আরও ২৭ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বাবদ ইউক্রেনকে প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার ৮২০ কোটি ডলার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে ইউক্রেনের জন্য সহায়তা বরাদ্দ বিষয়ক একটি বিলও পাস হয় কংগ্রেসে।

সেই বিল অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ এই সহায়তার মধ্যে ৮২০ কোটি ডলার দেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন বাইডেন প্রশাসন, আর বাকি ৪ হাজার কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস।

বরাদ্দ করা সে অর্থ থেকেই ২৭ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা ইউক্রেনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে।

ইউক্রেনের জন্য ঘোষণা করা এই সামরিক সহায়তা প্যাকেজে রয়েছে ৪টি হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (এইচআইএমএআরএস) ও ৫৮০টি অত্যাধুনিক ফনিক্স ঘোস্ট ড্রোন (চালকবিহীন বিমান)। ইউক্রেনের অভিযানরত রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে এসব অস্ত্র বেশ কার্যকর বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমন্বয়ক জন কিরবি। বিবৃতিতে কিরবি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যতদিন এই যুদ্ধ চলবে— ততদিন ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।’

image

ইউক্রেনের লুহানস্ক, খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী -ডেইলি মেইল

আরও খবর
নাটকীয়ভাবে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হলেন শাহবাজপুত্র
শ্রীলঙ্কাকে ফের সহায়তার প্রস্তাব জিনপিংয়ের
ইউরোপে তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২ , ০৯ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৫ জিলহজ ১৪৪৩

‘ভূমি পুনরুদ্ধারের আগে শান্তি আলোচনায় বসবে না ইউক্রেন’

image

ইউক্রেনের লুহানস্ক, খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী -ডেইলি মেইল

রাশিয়ার দখল করে নেয়া ভূমি পুনরুদ্ধার বাদ রেখে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা কোন প্রকার শান্তি আলোচনায় যাবেন না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি দাবি করেন, এমন কিছু করা হলে তাতে শুধু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে।

সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, (ইউক্রেনে) যুদ্ধবিরতি ঘোষণা কিংবা তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে রাশিয়া সবসময়ই ইতিবাচক। কিন্তু ইউক্রেনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জেলেনস্কি।

তার এই অভিযোগের তীব্র সমালোচনা করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জেলনস্কি বলেন, ‘তারা (রুশ বাহিনী) আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলে এখানে এলো, জনগণকে হত্যা করল, ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করল আর এখন বলছে ইউক্রেন আলোচনা করতে চাইছে না!’ ‘তারা মানুষ হত্যা করছে, বিভিন্ন শহরে ঢুকে সেসব ধ্বংস করে ফেলছে, তারপর বলছে— চল আলোচনা শুরু করি। কাদের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে? পাথরের সঙ্গে? তারা রক্তস্নান করছে, তাদের সারা দেহে নিহত ইউক্রেনীয়দের রক্ত; আর এই রক্ত ধুয়ে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা তা হতে দেব না।’

‘ক্ষুধার্ত তিমি যেভাবে তার খাবার গিলে খায়, তেমনি একে একে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে চলেছে রাশিয়া। এই মুহূর্তে যদি যুদ্ধবিরতি কিংবা শান্তি আলোচনা শুরু হয়, তাহলে তারা কিছুদিন, কয়েক মাস কিংবা ১-২ বছর শান্ত থাকবে। তারপর ফের শুরু করবে ইউক্রেন দখলের অভিযান।

‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনে দখল করা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রুশ বাহিনী না সরছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা শান্তি আলোচনা কোনোটাই সম্ভব নয়।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘সমাজ বিশ্বাস করে প্রথমে অবশ্যই সব ভূমি স্বাধীন করতে হবে এবং তার পরে কী করা প্রয়োজন ও আগামী শতাব্দীগুলোতে কিভাবে বাঁচতে পারবো তা নিয়ে দরকষাকষি করতে পারি’। তিনি আরও বলেন, আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রয়োজন হচ্ছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা রাশিয়াকে সম্মুখ যুদ্ধের লাইন থেকে শত শত মাইল দূরের শান্তিপূর্ণ শহরগুলোতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে পারে’। শস্য রফতানি ফের শুরুর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, মস্কোকে কূটনৈতিক ছাড় দেয়ায় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে, তবে ভবিষ্যতের জন্য এটা শুধু একটি অস্থায়ী অবকাশ এবং বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে’।

ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে শস্য রফতানি ফের চালু করতে শুক্রবার চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ধারণা করা হচ্ছে এই চুক্তির ফলে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে থাকা খাদ্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে।

চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে। এদিকে, অভিযানরত রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে আরও ২৭ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বাবদ ইউক্রেনকে প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার ৮২০ কোটি ডলার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে ইউক্রেনের জন্য সহায়তা বরাদ্দ বিষয়ক একটি বিলও পাস হয় কংগ্রেসে।

সেই বিল অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ এই সহায়তার মধ্যে ৮২০ কোটি ডলার দেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন বাইডেন প্রশাসন, আর বাকি ৪ হাজার কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস।

বরাদ্দ করা সে অর্থ থেকেই ২৭ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা ইউক্রেনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে।

ইউক্রেনের জন্য ঘোষণা করা এই সামরিক সহায়তা প্যাকেজে রয়েছে ৪টি হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (এইচআইএমএআরএস) ও ৫৮০টি অত্যাধুনিক ফনিক্স ঘোস্ট ড্রোন (চালকবিহীন বিমান)। ইউক্রেনের অভিযানরত রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে এসব অস্ত্র বেশ কার্যকর বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমন্বয়ক জন কিরবি। বিবৃতিতে কিরবি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যতদিন এই যুদ্ধ চলবে— ততদিন ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।’