শ্রীলঙ্কাকে ফের সহায়তার প্রস্তাব জিনপিংয়ের

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় রনিল বিক্রমাসিংহেকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, চীন-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং তার সামর্থের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে ও শ্রীলঙ্কার জনগণকে সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করতে আগ্রহী তিনি।

সিসিটিভিকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট চলছে, তা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে দেশটি; এবং সংকট কাটিয়ে ওঠার এই যাত্রায় আমি আমার সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকে সহায়তা করতে চাই।’

চীন ও শ্রীলঙ্কা ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী বলে অভিনন্দন বার্তায় উল্লেখ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। শি জিনপিং বলেন, ৬৫ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান পর থেকেই দুই দেশ সর্বদা একে অপরকে সম্মান, সমতা, পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। একই সঙ্গে একটি বড় ও একটি ছোট দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উভয়ের জন্য উপকারী সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

জিনপিং বলেন, করোনা মহামারীর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে চীন ও শ্রীলঙ্কা একে অপরকে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে।

জিনপিং বলেন, তার বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা তাদের সাময়িক এই সংকট কাটিয়ে উঠবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাবে।

চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং আরও বলেন, তিনি আশা করেন, উভয় পক্ষ তাদের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও পারস্পরিক বিশ্বাসকে সুসংহত করবে। এ ছাড়া আন্তরিকভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং স্থায়ী বন্ধুত্ব ও সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বর্তমানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলে কিছু নেই। ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই দ্বীপরাষ্ট্র।

শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটের শুরু অবশ্য ২০২০ সাল থেকেই। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শ্রীলঙ্কায় সরকার গঠন করে রাজাপাকসে ভাইয়েরা। সেই সরকারের অব্যবস্থাপনা, অযৌক্তিকভাবে কর ও রাজস্ব কাটছাঁট করা ও করোনা মহামারীর কারণে দেশটির পর্যটন খাতে ধস নামায় ২০২০ সাল থেকেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋত নেয়া শুরু করে শ্রীলঙ্কার সরকার।

তার মধ্যে চীনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চীনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০০ কোটি ডলার ঋত নিয়েছে দেশটি। এছাড়া ভারতের কাছ থেকে ৩৮০ কোটি ডলার, জাপানের কাছ থেকে ৩৫০ কোটি ডলার ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলার ঋত নিয়েছে ভারত মহাসাগরের এই ছোট দ্বীপদেশটি।

রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২ , ০৯ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৫ জিলহজ ১৪৪৩

শ্রীলঙ্কাকে ফের সহায়তার প্রস্তাব জিনপিংয়ের

image

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় রনিল বিক্রমাসিংহেকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, চীন-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং তার সামর্থের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে ও শ্রীলঙ্কার জনগণকে সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করতে আগ্রহী তিনি।

সিসিটিভিকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট চলছে, তা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে দেশটি; এবং সংকট কাটিয়ে ওঠার এই যাত্রায় আমি আমার সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকে সহায়তা করতে চাই।’

চীন ও শ্রীলঙ্কা ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী বলে অভিনন্দন বার্তায় উল্লেখ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। শি জিনপিং বলেন, ৬৫ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান পর থেকেই দুই দেশ সর্বদা একে অপরকে সম্মান, সমতা, পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। একই সঙ্গে একটি বড় ও একটি ছোট দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উভয়ের জন্য উপকারী সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

জিনপিং বলেন, করোনা মহামারীর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে চীন ও শ্রীলঙ্কা একে অপরকে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে।

জিনপিং বলেন, তার বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা তাদের সাময়িক এই সংকট কাটিয়ে উঠবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাবে।

চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং আরও বলেন, তিনি আশা করেন, উভয় পক্ষ তাদের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও পারস্পরিক বিশ্বাসকে সুসংহত করবে। এ ছাড়া আন্তরিকভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং স্থায়ী বন্ধুত্ব ও সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বর্তমানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলে কিছু নেই। ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই দ্বীপরাষ্ট্র।

শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটের শুরু অবশ্য ২০২০ সাল থেকেই। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শ্রীলঙ্কায় সরকার গঠন করে রাজাপাকসে ভাইয়েরা। সেই সরকারের অব্যবস্থাপনা, অযৌক্তিকভাবে কর ও রাজস্ব কাটছাঁট করা ও করোনা মহামারীর কারণে দেশটির পর্যটন খাতে ধস নামায় ২০২০ সাল থেকেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋত নেয়া শুরু করে শ্রীলঙ্কার সরকার।

তার মধ্যে চীনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চীনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০০ কোটি ডলার ঋত নিয়েছে দেশটি। এছাড়া ভারতের কাছ থেকে ৩৮০ কোটি ডলার, জাপানের কাছ থেকে ৩৫০ কোটি ডলার ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলার ঋত নিয়েছে ভারত মহাসাগরের এই ছোট দ্বীপদেশটি।