খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০৩ টাকা ছাড়ালো

ডলারের দাম বাড়ছেই। খোলাবাজারে এই মুদ্রা গতকাল ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৪ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। হঠাৎ করে ডলার চড়া হয়ে যাওয়ার কারণ বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে সাধারণত কেউ বড় অঙ্কের ডলার সংগ্রহ করলে সংকট হয়, এজন্য দাম বেড়ে যায়।

মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, ঈদের আগে ও পরে ১০০ থেকে ১০২ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা হয়েছে। গতকাল তা ১০৩ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

ঈদের আগে ও পরে বাজারে ডলারের সরবরাহ ও চাহিদা ভালো ছিল। কারণ এ সময় অনেকেই বিদেশ থেকে ঈদ করতে দেশে এসেছিলেন। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকে ঈদের ছুটিতে বিদেশে গেছেন। ফলে ডলারের চাহিদা ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার টাকা ডলারের বিনময় হার ছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এক বছর আগে গত বছরের ১৮ মে এই বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৬৫ পয়সা। এ হিসাবেই গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশে সম সময়ই আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বা ব্যাংক রেটের চেয়ে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজেরেও বেশি ছিল ডলারের দাম। সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যবধান আরও বেড়েছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত বৃহস্পতিবার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি হলেও ব্যাংকগুলো তার চেয়ে ৭/৮ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে।

ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৯২ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক করেছে ৯৪ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আর বেসরকারি ইস্টার্ন ও প্রইম ব্যাংক ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। খোলাবাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও গত বৃহস্পতিবার অবশ্য ৯৬ টাকায় নেমে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা। এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।

এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯মে পর্যন্ত) ৫৫০কোটি (৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।

খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।

সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ , ১০ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০৩ টাকা ছাড়ালো

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ডলারের দাম বাড়ছেই। খোলাবাজারে এই মুদ্রা গতকাল ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৪ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। হঠাৎ করে ডলার চড়া হয়ে যাওয়ার কারণ বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে সাধারণত কেউ বড় অঙ্কের ডলার সংগ্রহ করলে সংকট হয়, এজন্য দাম বেড়ে যায়।

মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, ঈদের আগে ও পরে ১০০ থেকে ১০২ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা হয়েছে। গতকাল তা ১০৩ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

ঈদের আগে ও পরে বাজারে ডলারের সরবরাহ ও চাহিদা ভালো ছিল। কারণ এ সময় অনেকেই বিদেশ থেকে ঈদ করতে দেশে এসেছিলেন। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকে ঈদের ছুটিতে বিদেশে গেছেন। ফলে ডলারের চাহিদা ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার টাকা ডলারের বিনময় হার ছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এক বছর আগে গত বছরের ১৮ মে এই বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৬৫ পয়সা। এ হিসাবেই গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশে সম সময়ই আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বা ব্যাংক রেটের চেয়ে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজেরেও বেশি ছিল ডলারের দাম। সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যবধান আরও বেড়েছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত বৃহস্পতিবার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি হলেও ব্যাংকগুলো তার চেয়ে ৭/৮ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে।

ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৯২ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক করেছে ৯৪ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আর বেসরকারি ইস্টার্ন ও প্রইম ব্যাংক ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। খোলাবাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও গত বৃহস্পতিবার অবশ্য ৯৬ টাকায় নেমে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা। এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।

এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯মে পর্যন্ত) ৫৫০কোটি (৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।

খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।