অরক্ষিত রেলক্রসিং বাসে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৪ যাত্রী

গুরুতর আহত ১৫ জন, বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়

গাজীপুরের শ্রীপুরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং-এ শ্রমিকবাহী একটি বাসে ট্রেনের ধাক্কায় নারীসহ চারজন নিহত হয়েছে। এ সময় অন্তত ১৫ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ রেললাইনের বরমী ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী জানান ঘটনার সময় গেট বেরিয়ার নামানো ছিল না, তিন গেটম্যানের কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনার পরও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গেটম্যানের অবহেলায় ঝরে গেছে চারটি প্রাণ।

শ্রমিকবাহী বাস ও ট্রেনের সংষর্ষে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

নিহতরা হলেনÑ বাসচালক তাজুল ইসলাম (৩২), তার বাড়ি কাপাসিয়ার টুকে, ইলিয়াছ উদ্দিন (৩০), তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে, মাছুমা আকতার (২৪) বরমীর বালীয়া পাড়া গ্রামে, রাহিমা আক্তার (২৭) বালীয়া পাড়া গ্রামের জুলহাস উদ্দিনের স্ত্রী। নিহত ও আহত শ্রমিক সবাই তেলিহাটি ইউনিয়নের জামান ফ্যাশনের শ্রমিক ছিলেন।

আহতরা হলেনÑ নিলুফা আক্তার (৫১), জাহিদ (২৪), আরমান (১৭), নাঈম (২০), পারভেজ (৩৪), ফারজানা (২০) হালিমা (২৫), মাহফুজুল (২৫), সিপন (১৯), হাবিবুল্লাহ ১৬, সুলেমান (১৯), বেবি (৪০), রেশমী আকতার (৪০), বিল্লাল হোসেন (২০), আখির হোসেন (২০)।

খবর পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রসাশক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। জেলা প্রসাশসকের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের জন্য ২০ হাজার ও আহত পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো তেলিহাটির এলাকার জামান ফ্যাশনের শ্রমিকরা সকাল পৌনে ৮টার দিকে মাইজপাড়া হয়ে কারখানায় যাচ্ছিলেন। পরে মাইজপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে আসতেই চালক টের পান ট্রেন চলে আসছে। পরে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনের সামনে চলে আসলে ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি ছিটকে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় শ্রমিকবাহী বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে রেলক্রসিংয়ের পাশের ভবনটির (গেটম্যানের রুম) বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গেছে। পরে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা জানান, রেলক্রসিংয়ে এ সময় কোন গেটম্যান ছিল না।

স্থানীয় বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সকাল সাতটার পরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বলাকা ট্রেনের ধাক্কায় মাইজপাড়া এলাকায় রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন একাধিক মৃত্যুর ঘটনা আছে। এবং গেটম্যানের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম বলেন, দুর্ঘটনায় আহত অনেক শ্রমিক হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকে বাড়ি চলে গেছে। বেশি কিছু আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেছেন স্বজনরা।

শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হারুন অর রশিদ জানান, সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বলাকা ট্রেনের সঙ্গে শ্রমিকবাহী বাসের সংঘর্ষ ঘটে। তিনি বলেন, সাড়ে সাতটার পর ট্রেনটি শ্রীপুর স্টেশন ত্যাগ করে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রসাশনের আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের জন্য ২০ হাজার ও আহত পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে। এ দুর্ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গাজীপুর রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহিদুল্ল্যাহ্ জানান, এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে প্রিয়া নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুইজনকে ট্রেনে করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে নেয়ার পথে মারা যায়। তাদের মরদেহ গফরগাঁও রেলস্টেশনে রেল পুলিশেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাসচালককে আহতবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালসহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গফরগাঁও রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, শ্রীপুরে বাস ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত দুইজনের মরদেহ বলাকা কমিউটার ট্রেন থেকে নামিয়ে রেখে দুটো জয়দেবপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থলের পাশে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ গণেশ রবি দাসের বাড়ি। তিনি জানান, আল আমিন, মাহমুদ উল্ল্যাহ্ নামের দুইজন এখানে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। সম্প্রতি এক গেটম্যান ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা গেলে নতুন আরও একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিন শিফটে দিনে দিনে আট ঘণ্টা করে তাদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তারা সঠিক সময়ে দায়িত্ব পালন করতেন না। প্রতিদিনই সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই গেট এলাকা ছেড়ে চলে যান। আবার সকাল ৯টার পর লেভেল ক্রসিং এলাকায় দায়িত্বে আসেন। সবসময়ই তারা দায়িত্বে অবহেলা করে।

এলাকার স্থানীয় রিপন সরকার, বলেন গেটম্যানরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। তারা গেট ছেড়ে আশপাশে আড্ডায় থাকেন। ট্রেন আসলেও অনেক সময় গেট বেরিয়ার নামানো হতো না এ কারণেই এখানে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ , ১০ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

অরক্ষিত রেলক্রসিং বাসে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৪ যাত্রী

গুরুতর আহত ১৫ জন, বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়

রুহুল আমীন, শ্রীপুর (গাজীপুর)

image

শ্রীপুর (গাজীপুর) : লেভেলক্রসিংয়ে, ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাস -সংবাদ

গাজীপুরের শ্রীপুরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং-এ শ্রমিকবাহী একটি বাসে ট্রেনের ধাক্কায় নারীসহ চারজন নিহত হয়েছে। এ সময় অন্তত ১৫ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ রেললাইনের বরমী ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী জানান ঘটনার সময় গেট বেরিয়ার নামানো ছিল না, তিন গেটম্যানের কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনার পরও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গেটম্যানের অবহেলায় ঝরে গেছে চারটি প্রাণ।

শ্রমিকবাহী বাস ও ট্রেনের সংষর্ষে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

নিহতরা হলেনÑ বাসচালক তাজুল ইসলাম (৩২), তার বাড়ি কাপাসিয়ার টুকে, ইলিয়াছ উদ্দিন (৩০), তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে, মাছুমা আকতার (২৪) বরমীর বালীয়া পাড়া গ্রামে, রাহিমা আক্তার (২৭) বালীয়া পাড়া গ্রামের জুলহাস উদ্দিনের স্ত্রী। নিহত ও আহত শ্রমিক সবাই তেলিহাটি ইউনিয়নের জামান ফ্যাশনের শ্রমিক ছিলেন।

আহতরা হলেনÑ নিলুফা আক্তার (৫১), জাহিদ (২৪), আরমান (১৭), নাঈম (২০), পারভেজ (৩৪), ফারজানা (২০) হালিমা (২৫), মাহফুজুল (২৫), সিপন (১৯), হাবিবুল্লাহ ১৬, সুলেমান (১৯), বেবি (৪০), রেশমী আকতার (৪০), বিল্লাল হোসেন (২০), আখির হোসেন (২০)।

খবর পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রসাশক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। জেলা প্রসাশসকের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের জন্য ২০ হাজার ও আহত পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো তেলিহাটির এলাকার জামান ফ্যাশনের শ্রমিকরা সকাল পৌনে ৮টার দিকে মাইজপাড়া হয়ে কারখানায় যাচ্ছিলেন। পরে মাইজপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে আসতেই চালক টের পান ট্রেন চলে আসছে। পরে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনের সামনে চলে আসলে ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি ছিটকে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় শ্রমিকবাহী বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে রেলক্রসিংয়ের পাশের ভবনটির (গেটম্যানের রুম) বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গেছে। পরে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা জানান, রেলক্রসিংয়ে এ সময় কোন গেটম্যান ছিল না।

স্থানীয় বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সকাল সাতটার পরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বলাকা ট্রেনের ধাক্কায় মাইজপাড়া এলাকায় রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন একাধিক মৃত্যুর ঘটনা আছে। এবং গেটম্যানের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম বলেন, দুর্ঘটনায় আহত অনেক শ্রমিক হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকে বাড়ি চলে গেছে। বেশি কিছু আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেছেন স্বজনরা।

শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হারুন অর রশিদ জানান, সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বলাকা ট্রেনের সঙ্গে শ্রমিকবাহী বাসের সংঘর্ষ ঘটে। তিনি বলেন, সাড়ে সাতটার পর ট্রেনটি শ্রীপুর স্টেশন ত্যাগ করে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রসাশনের আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের জন্য ২০ হাজার ও আহত পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে। এ দুর্ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গাজীপুর রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহিদুল্ল্যাহ্ জানান, এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে প্রিয়া নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুইজনকে ট্রেনে করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে নেয়ার পথে মারা যায়। তাদের মরদেহ গফরগাঁও রেলস্টেশনে রেল পুলিশেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাসচালককে আহতবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালসহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গফরগাঁও রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, শ্রীপুরে বাস ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত দুইজনের মরদেহ বলাকা কমিউটার ট্রেন থেকে নামিয়ে রেখে দুটো জয়দেবপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থলের পাশে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ গণেশ রবি দাসের বাড়ি। তিনি জানান, আল আমিন, মাহমুদ উল্ল্যাহ্ নামের দুইজন এখানে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। সম্প্রতি এক গেটম্যান ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা গেলে নতুন আরও একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিন শিফটে দিনে দিনে আট ঘণ্টা করে তাদের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তারা সঠিক সময়ে দায়িত্ব পালন করতেন না। প্রতিদিনই সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই গেট এলাকা ছেড়ে চলে যান। আবার সকাল ৯টার পর লেভেল ক্রসিং এলাকায় দায়িত্বে আসেন। সবসময়ই তারা দায়িত্বে অবহেলা করে।

এলাকার স্থানীয় রিপন সরকার, বলেন গেটম্যানরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। তারা গেট ছেড়ে আশপাশে আড্ডায় থাকেন। ট্রেন আসলেও অনেক সময় গেট বেরিয়ার নামানো হতো না এ কারণেই এখানে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে।