সাম্প্রদায়িক হামলা ধর্মীয় গোষ্ঠী বা সুবিধাবাদীদের কি না খতিয়ে দেখা দরকার

সংখ্যালঘু নির্যাতন রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল মাত্র

দেশের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোতে প্রশাসন তৎপর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত যেতে পারছে না। যখন যাচ্ছে, তখন তারা কর্তব্য পালন করতে পারছে না। এই যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে, এর চেহারা সাম্প্রদায়িক, কিন্তু চরিত্র রাজনৈতিক। এর সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত এ কথা ভুললে চলবে না।’

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা : নাগরিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এ সভার আয়োজন করে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নড়াইলে যে আক্রমণ হলো, সেখানে আওয়াজ ও ধ্বনি তোলা হয়েছে, সেগুলো পরিচিত। সেগুলো ব্রিটিশ আমলে শুনেছি, তখন ব্রিটিশ রাষ্ট্র তা প্রশ্রয় দিয়েছে। পাকিস্তান আমলে ওই আওয়াজ শুনেছি, পাকিস্তান রাষ্ট্র সেগুলো উৎসাহিত করেছে। আজকের বাংলাদেশে ওই আওয়াজগুলো শুনতে হলো। এর অর্থ হলো, রাষ্ট্র চেহারায় বদলেছে, ছোট হয়েছে বড় রাষ্ট্র, কিন্তু চরিত্রে রাষ্ট্রের কোন বদল হয়নি। এটা হচ্ছে নির্মম সত্য।’

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছেন, তারা ধর্মীয় গোষ্ঠী নাকি কোন দলের সুবিধাবাদী লোক, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা যাবে না।’

সেন্টার ফর পলসি ডায়লগের (সিডিপি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গত অক্টোবরে এরকম একটি প্রতিবাদ সভার কিছুদিনের মধ্যইে যে আবারো এ ধরনের আরকেটি সভার আয়োজন করতে হচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর যে সহিংসতামূলক হামলা করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করা এই নাগরিক প্রতিবাদ সভার অন্যতম উদ্দেশ।’

পল্লী র্কম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আলাচনা সভার সভাপতিত্ব করনে। তিনি মনে করেন, ‘সংখ্যালঘু বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। সবাই মানুষ, সবাই বাংলাদেশি- এটাই স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সবাইকে আমরা সম-অধিকার, সম-মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখি যেখানে কোন র্ধমীয় বা সাম্প্রদায়িক ব্যবধান নেই। সাম্প্রতিকালে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো উদ্বেগজনক এবং অনেক বেশি গুরুত্বর্পূণ।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে হামলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নাকি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা তো কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি! বরং, এ ঘটনায় তাদের হৃদয়ের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার দায়ভার কে নিবে? এ প্রশ্ন করেন হ্যামলেট সাহা।   

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মজি শাহীন আনাম বলেন, ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটইি অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অপমানজনক। নাগরকি সমাজের অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা দায়িত্ব রয়েছে। যেকোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার পর পুলিশ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ ধরনের পরস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার আগেই এর বিরুদ্ধে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু আত্মগ্লানি বোধ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে জন্ম নেয়া এই দেশে এ ধরনের সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি লজ্জাজনক। তিনি মনে করেন, এগুলো সবই রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল মাত্র।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সম্পদ না বাঁচিয়ে সম্মান বাঁচাই। আমাদের নির্লিপ্ত থাকাও অনেকাংশে দায়ী র্বতমান এই পরস্থিতির জন্য। অনুষ্ঠানে আরও অনেক বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ , ১০ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

সাম্প্রদায়িক হামলা ধর্মীয় গোষ্ঠী বা সুবিধাবাদীদের কি না খতিয়ে দেখা দরকার

সংখ্যালঘু নির্যাতন রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল মাত্র

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোতে প্রশাসন তৎপর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত যেতে পারছে না। যখন যাচ্ছে, তখন তারা কর্তব্য পালন করতে পারছে না। এই যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে, এর চেহারা সাম্প্রদায়িক, কিন্তু চরিত্র রাজনৈতিক। এর সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত এ কথা ভুললে চলবে না।’

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা : নাগরিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এ সভার আয়োজন করে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নড়াইলে যে আক্রমণ হলো, সেখানে আওয়াজ ও ধ্বনি তোলা হয়েছে, সেগুলো পরিচিত। সেগুলো ব্রিটিশ আমলে শুনেছি, তখন ব্রিটিশ রাষ্ট্র তা প্রশ্রয় দিয়েছে। পাকিস্তান আমলে ওই আওয়াজ শুনেছি, পাকিস্তান রাষ্ট্র সেগুলো উৎসাহিত করেছে। আজকের বাংলাদেশে ওই আওয়াজগুলো শুনতে হলো। এর অর্থ হলো, রাষ্ট্র চেহারায় বদলেছে, ছোট হয়েছে বড় রাষ্ট্র, কিন্তু চরিত্রে রাষ্ট্রের কোন বদল হয়নি। এটা হচ্ছে নির্মম সত্য।’

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছেন, তারা ধর্মীয় গোষ্ঠী নাকি কোন দলের সুবিধাবাদী লোক, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা যাবে না।’

সেন্টার ফর পলসি ডায়লগের (সিডিপি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গত অক্টোবরে এরকম একটি প্রতিবাদ সভার কিছুদিনের মধ্যইে যে আবারো এ ধরনের আরকেটি সভার আয়োজন করতে হচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর যে সহিংসতামূলক হামলা করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করা এই নাগরিক প্রতিবাদ সভার অন্যতম উদ্দেশ।’

পল্লী র্কম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আলাচনা সভার সভাপতিত্ব করনে। তিনি মনে করেন, ‘সংখ্যালঘু বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। সবাই মানুষ, সবাই বাংলাদেশি- এটাই স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সবাইকে আমরা সম-অধিকার, সম-মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখি যেখানে কোন র্ধমীয় বা সাম্প্রদায়িক ব্যবধান নেই। সাম্প্রতিকালে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো উদ্বেগজনক এবং অনেক বেশি গুরুত্বর্পূণ।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে হামলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নাকি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা তো কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি! বরং, এ ঘটনায় তাদের হৃদয়ের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার দায়ভার কে নিবে? এ প্রশ্ন করেন হ্যামলেট সাহা।   

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মজি শাহীন আনাম বলেন, ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটইি অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অপমানজনক। নাগরকি সমাজের অবশ্যই এক্ষেত্রে একটা দায়িত্ব রয়েছে। যেকোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার পর পুলিশ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে এ ধরনের পরস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার আগেই এর বিরুদ্ধে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু আত্মগ্লানি বোধ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে জন্ম নেয়া এই দেশে এ ধরনের সহিংসতামূলক ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি লজ্জাজনক। তিনি মনে করেন, এগুলো সবই রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল মাত্র।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সম্পদ না বাঁচিয়ে সম্মান বাঁচাই। আমাদের নির্লিপ্ত থাকাও অনেকাংশে দায়ী র্বতমান এই পরস্থিতির জন্য। অনুষ্ঠানে আরও অনেক বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।