‘রং হেডেড’ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া উপহারের ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে এক সাংবাদিককে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরুর গালাগালের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউএনও’র বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাও রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদালত বলেছে, একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর। কোন ‘রং হেডেড’ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না।

গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিককে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর গালাগাল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তখন আদালত বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা কোন ভুল করলে সেজন্য প্রেস কাউন্সিল, আইন আছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা খুবই অবজেকশনেবল ও দুঃখজনক। তিনি একজন মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন।

পরে সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করায় ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয়ে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা হোয়াব্রাং এলাকার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে সেখানে থাকা ২৭টি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।’

এমন নিচু জায়গায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘরগুলো নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়রা শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘর তৈরিতে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া নি¤œমানের ইট, বালি-রড, কাঠ ও অন্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য তারা দায়ী করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।

প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ওই সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালাগাল করেন টেকনাফ ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরু।

পরদিন ২২ জুলাই দুপুরে হিলডাউন সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইউএনও কায়সার খসরু সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদের সঙ্গে অকথ্য ভাষা ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুবই লজ্জিত। একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এমন কটূবাক্য আশা করা যায় না।’ এ সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, তিনি অফিশিয়াল দায়িত্ব পালনরত একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে আশা করা যায় না। তিনি কক্সবাজার তথা টেকনাফে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ , ১০ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

টেকনাফের ইউএনও সম্পর্কে হাইকোর্ট

‘রং হেডেড’ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া উপহারের ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে এক সাংবাদিককে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরুর গালাগালের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউএনও’র বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাও রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদালত বলেছে, একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর। কোন ‘রং হেডেড’ ব্যক্তি ছাড়া কেউ এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না।

গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিককে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর গালাগাল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তখন আদালত বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা কোন ভুল করলে সেজন্য প্রেস কাউন্সিল, আইন আছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা খুবই অবজেকশনেবল ও দুঃখজনক। তিনি একজন মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন।

পরে সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করায় ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয়ে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা হোয়াব্রাং এলাকার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে সেখানে থাকা ২৭টি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।’

এমন নিচু জায়গায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘরগুলো নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়রা শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘর তৈরিতে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া নি¤œমানের ইট, বালি-রড, কাঠ ও অন্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য তারা দায়ী করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে।

প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ওই সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালাগাল করেন টেকনাফ ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরু।

পরদিন ২২ জুলাই দুপুরে হিলডাউন সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইউএনও কায়সার খসরু সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদের সঙ্গে অকথ্য ভাষা ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুবই লজ্জিত। একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এমন কটূবাক্য আশা করা যায় না।’ এ সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, তিনি অফিশিয়াল দায়িত্ব পালনরত একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে আশা করা যায় না। তিনি কক্সবাজার তথা টেকনাফে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।