কারা অভিযানে দুদকের প্রতি পূর্বানুমতির আদেশ

বন্দী নির্যাতন, রহস্যজনক মৃত্যু, বন্দীদের নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়া, আসামি পালিয়ে যাওয়া, প্রভাবশালী আসামিদের অর্থের বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা দেয়া, বন্দীদের খাবারে অনিয়মসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ছিল কারাগারগুলো। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিব বার অভিযান চালিয়ে এর প্রমাণও পেয়েছে। সেই কারাগারে এখন আর পূর্বানুমতি ছাড়া ঢুকতে পারবে না দুদকের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কারা অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে কারগারগুলোতে। আসস্মিক অভিযানে কারাগারে ঢুকতে অভিযানে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে গেলে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য না পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে বলে আলোচনা সমালোচনা চললেও দুদক বলছে এ ধরনের আদেশে দুদকের কোন অসুবিধা হবে না।

সম্প্রতি কারা অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের কারাগারগুলোতে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিমসহ দুদক কর্মকর্তারা যদি কারাগারে প্রবেশ করতে চান তাহলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের পরিচয়পত্র নিশ্চিত হওয়া কোন বিষয়ে তারা অভিযান চালাতে চান সেই অভিযোগের সুস্পষ্ট নথিপত্র দেখাতে হবে। এমন সিদ্ধান্তে কারাগারে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ভাটা পড়তে পারে এবং দুর্নীতিবাজরা সতর্ক হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই বিষয় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গতকাল তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে দুদকের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যেকোন কারাগারে প্রবেশের আগে আদালতের অনুমতি নিতে হবে, এমন নির্দেশনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে প্রভাব পড়বে না।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, সরকারি প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে। আর দুদকের আইনে নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। আপনারা যে চিঠির কথা বলছেন, আমার ধারণা, এর মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। তারপরও আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিষয়টি দেখব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এ নির্দেশনায় দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে প্রভাব পড়বে না।

দুদক সচিব আরও জানান, দুদকের নামে চাঁদাবাজি, ঘুষ দাবিসহ নানা অনিয়ম করছে প্রতারক চক্র। তাদের ধরতে সারাদেশে গোয়েন্দা জাল বিছানো হয়েছে। এমন কোন তথ্য পেলে দুদককে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুদকের বিভিন্ন টিম। কিন্তু এখন থেকে অভিযানে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া বেশকিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১২ জুলাই কারা মহাপরিদর্শক (আইজি, প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হকের সই করা চিঠি দেশের কারা অধিদপ্তরসহ সব জেলা প্রশাসক ও কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ চিঠির বিষয় ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম কারাভ্যন্তরে প্রবেশ প্রসঙ্গে’। এতে বলা হয়েছে, কারাগার একটি স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান, যা কারাবিধি ও সরকার কর্তৃক জারি করা অন্যান্য বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। কারাবিধি মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোন ব্যক্তির কারাগারে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। কারাগারগুলোতে অনেক সময় কোনরূপ পূর্বানুমোদন, সমন্বয় ছাড়া তদন্তের উদ্দেশে দুদকের বিভিন্ন টিম আগমন এবং প্রবেশ করে।

এ বিষয়ে সুরক্ষাসেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দুদক সচিবের টেলিফোনিক আলোচনা হয়। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে কারাগারের স্পর্শকাতরতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এখন থেকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বা অন্য যেকোনো টিম কারাগারে কোন তদন্তের জন্য গেলে কতগুলো প্রমাণপত্র আবশ্যিকভাবে প্রদর্শন করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রমাণপত্রের মধ্যে রয়েছে দুদক টিম যে জেলার কারাগারে যাবে, সেই জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতিপত্র; সংশ্লিষ্ট কারাগারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কপি; আগত টিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া সংক্রান্ত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ এবং আগমনকারী কর্মকর্তার পরিচয়পত্র।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বন্দীদের অবৈধ সুবিধা দেয়া, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসুস্থ না হয়েও অনেক বন্দীর হাসপাতালে ভর্তি থাকা, কারা ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি রাখা, বন্দীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে দুদকে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক বিভিন্ন কারাগারে তাৎক্ষণিক অনেক অভিযান চালিয়েছে। অনেক সময় অনিয়মের সত্যতাও মিলেছে।

আরও খবর
হায় হায় পার্টি হায় হায় করতেই থাকুক : প্রধানমন্ত্রী
বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা ৩০ বছরেও এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না
শিশু অধিকার সুরক্ষায় একযোগে কাজ করার আহ্বান স্পিকারের
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নয়, সংকট বিএনপির নেতৃত্বে ও সিদ্ধান্তে : কাদের
কিল-ঘুষি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা উপজেলা চেয়ারম্যানদের
নিরপেক্ষ সরকার মেনে নিন, চা খেতে সমস্যা নেই : ফখরুল
সরকারের নীতি ও দুর্নীতির কারণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংকট : জাতীয় কমিটি
নারী সেজে অনলাইন ডেটিং, ভিডিও রেকর্ড করে ফাঁসাতো সাগর
নরসিংদী কারাগারে হাজতির ওপর নির্যাতনের অভিযোগ

সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২ , ১০ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৬ জিলহজ ১৪৪৩

কারা অভিযানে দুদকের প্রতি পূর্বানুমতির আদেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বন্দী নির্যাতন, রহস্যজনক মৃত্যু, বন্দীদের নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়া, আসামি পালিয়ে যাওয়া, প্রভাবশালী আসামিদের অর্থের বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা দেয়া, বন্দীদের খাবারে অনিয়মসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ছিল কারাগারগুলো। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিব বার অভিযান চালিয়ে এর প্রমাণও পেয়েছে। সেই কারাগারে এখন আর পূর্বানুমতি ছাড়া ঢুকতে পারবে না দুদকের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কারা অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে কারগারগুলোতে। আসস্মিক অভিযানে কারাগারে ঢুকতে অভিযানে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে গেলে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য না পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে বলে আলোচনা সমালোচনা চললেও দুদক বলছে এ ধরনের আদেশে দুদকের কোন অসুবিধা হবে না।

সম্প্রতি কারা অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের কারাগারগুলোতে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিমসহ দুদক কর্মকর্তারা যদি কারাগারে প্রবেশ করতে চান তাহলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের পরিচয়পত্র নিশ্চিত হওয়া কোন বিষয়ে তারা অভিযান চালাতে চান সেই অভিযোগের সুস্পষ্ট নথিপত্র দেখাতে হবে। এমন সিদ্ধান্তে কারাগারে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ভাটা পড়তে পারে এবং দুর্নীতিবাজরা সতর্ক হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই বিষয় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গতকাল তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে দুদকের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যেকোন কারাগারে প্রবেশের আগে আদালতের অনুমতি নিতে হবে, এমন নির্দেশনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে প্রভাব পড়বে না।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, সরকারি প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে। আর দুদকের আইনে নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। আপনারা যে চিঠির কথা বলছেন, আমার ধারণা, এর মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। তারপরও আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিষয়টি দেখব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এ নির্দেশনায় দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে প্রভাব পড়বে না।

দুদক সচিব আরও জানান, দুদকের নামে চাঁদাবাজি, ঘুষ দাবিসহ নানা অনিয়ম করছে প্রতারক চক্র। তাদের ধরতে সারাদেশে গোয়েন্দা জাল বিছানো হয়েছে। এমন কোন তথ্য পেলে দুদককে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুদকের বিভিন্ন টিম। কিন্তু এখন থেকে অভিযানে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া বেশকিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১২ জুলাই কারা মহাপরিদর্শক (আইজি, প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হকের সই করা চিঠি দেশের কারা অধিদপ্তরসহ সব জেলা প্রশাসক ও কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ চিঠির বিষয় ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম কারাভ্যন্তরে প্রবেশ প্রসঙ্গে’। এতে বলা হয়েছে, কারাগার একটি স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান, যা কারাবিধি ও সরকার কর্তৃক জারি করা অন্যান্য বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। কারাবিধি মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোন ব্যক্তির কারাগারে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। কারাগারগুলোতে অনেক সময় কোনরূপ পূর্বানুমোদন, সমন্বয় ছাড়া তদন্তের উদ্দেশে দুদকের বিভিন্ন টিম আগমন এবং প্রবেশ করে।

এ বিষয়ে সুরক্ষাসেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দুদক সচিবের টেলিফোনিক আলোচনা হয়। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে কারাগারের স্পর্শকাতরতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এখন থেকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বা অন্য যেকোনো টিম কারাগারে কোন তদন্তের জন্য গেলে কতগুলো প্রমাণপত্র আবশ্যিকভাবে প্রদর্শন করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রমাণপত্রের মধ্যে রয়েছে দুদক টিম যে জেলার কারাগারে যাবে, সেই জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতিপত্র; সংশ্লিষ্ট কারাগারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কপি; আগত টিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া সংক্রান্ত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ এবং আগমনকারী কর্মকর্তার পরিচয়পত্র।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বন্দীদের অবৈধ সুবিধা দেয়া, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসুস্থ না হয়েও অনেক বন্দীর হাসপাতালে ভর্তি থাকা, কারা ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি রাখা, বন্দীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে দুদকে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক বিভিন্ন কারাগারে তাৎক্ষণিক অনেক অভিযান চালিয়েছে। অনেক সময় অনিয়মের সত্যতাও মিলেছে।