তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মায়ের মানবেতর জীবন

জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা

আমার অভাবের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়েসহ দুইটি ফুটফুটে সন্তান এই পৃথিবীর আলো দেখেছে। বড় ছেলেটির নাম সমর মল্লিক আর ছোট মেয়েটির নাম বাসন্তী রানী। জন্ম থেকে বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী আর ছোট মেয়েটি এক বছর পর একটি জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পরে। দুই সন্তান এখন চলাফেরা করতে পারে রনা। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই দুই সন্তানকে লালন-পালন করা নিয়ে সারাদিন কষ্টের সাথে পার করে যাচ্ছি। কথাগুলো বলছিলেন লাক্কু কর্মকার ও পবিত্রা রানী দম্পতি। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার গোংগলপুর গ্রামে। জীবনধারণের জন্য যে বাসস্থানের দরকার সেটিও তাদের নেই। মহন্ত এস্টেট এর জমিতে তারা বসবাস করে। মাঝে মধ্যে তাদের ওই জমি থেকে চলে যেতে বলে মহন্ত এস্টেট কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের গর্ভধারিনী মা পবিত্রা রানী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর জীবনে একটি সন্তান কত না আনন্দের জিনিস। কিন্তু আমার দুই সন্তানই অক্ষম। তার প্রতিবন্ধী ছেলের বয়স ১০ বছর আর মেয়ের বয়স ৫ বছর। তারা দু’জনেই চলাফেরা করতে পারেনা। বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও ছোট মেয়েটির এখনো প্রতিবন্ধী ভাতা হয়নি। স্বামী ইটের ভাটায় কাজ করে আর আমি ৪০ দিন কর্মসূচির (খোইলা ভাতা) মাটি কাটি। খুব দুঃখে-কষ্টে আমাদের এই অভাবের সংসার চলে যাচ্ছে। তার উপরে ৬-৭ মাস আগে আমার শাশুড়ি বিধবা ভাতার কার্ড করতে গিয়ে ভ্যান থেকে পড়ে কোমর ভেঙ্গে যায়। এটাও আর একটা বিপদ। ঔষুধ-পত্রের খরচ চালাতে গিয়ে এখন আমরা হিমশিম খাচ্ছি।

সমর মল্লিক ও বাসন্তী রানীর বাবা লাক্কু কর্মকার বলেন, ছেলে ও মেয়েকে আমরা স্বামী-স্ত্রী নবজাতক শিশুর মত সারাক্ষণ দেখাশোনা করি। আমরা যখন কোন কাজে বাইরে যাই, তাদেরকে যে স্থানে রেখে যায় সেখানেই তারা শুয়ে থাকে। তারা তো বসে থাকতে পারে না। আশেপাশের কেউ তাদেরও দেখাশোনা করে না। ভিটেমাটি ছাড়া অভাবের সংসারে দুই সন্তান আর কোমর ভাঙ্গা মাকে নিয়ে কত না কষ্টে দিন যাপন করছি, সেটা ভগবান জানে। নিজের দুঃখের কষ্টের কথা কতজনকে আর বলবো। আমাদের সামনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কত সুন্দর সুন্দর বাড়ি দিচ্ছে। একটা বাড়ির জন্য ইউএনও, চেয়ারম্যান ও মেম্বার  সহ কত জনের কাছে গেলাম, কিন্তু পেলাম না। পাব কিনা সেটা নিয়েও আমরা চিন্তিত।

প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী ভাগ্যবতী। তিনি বলেন, ছেলে দু’টাকে তার মা-বাবা কাজের সময় যখন রেখে যায়, তখন প্রসব-পায়খানা করে ঘন্টার পর ঘন্টা তারা ওই স্থানেই পরে থাকে। এ দেখা তো একমাত্র বাপ মা ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। আমরা চোখের দেখা দেখি। তারা খুব দুঃখে-কষ্টে দিন যাপন করছে। কোন হৃদয়বান ব্যক্তি যদি এই অভাবী পরিবারটির পাশে দাঁড়াত তাহলে একটু হলেও তারা সন্তান দ’ুটি নিয়ে ভালো থাকতো। আমার আহ্বান সমাজের বিত্তবান প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই অভাবের পরিবারটির দিকে যেন নজর দেয়।

গোমস্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মন্ডল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই স্থানে যে পরিবারগুলো বসবাস করে তারা প্রত্যেকে বাইরে থেকে এসেছে। বর্তমানে তাদের জন্য কোন বাড়ি বরাদ্দ নেই। আসলে তাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর কোমর ভাঙ্গা বৃদ্ধার জন্য যতটুকু সম্ভব আর্থিক সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

গোমস্তাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, একজনের প্রতিবন্ধী ভাতা যেহেতু চালু হয়েছে। বাকিটাও সময় সাপেক্ষে চালু হবে। আর কোমর ভাঙ্গা ওই বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা চেষ্টা করব। তবে এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য কোন বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ আসলে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের সাথে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাকে পূণর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২ , ১১ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৭ জিলহজ ১৪৪৩

তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে মায়ের মানবেতর জীবন

জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা

প্রতিনিধি, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

image

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : প্রতিবন্ধী দুই সন্তান কোলে বাবা-মা -সংবাদ

আমার অভাবের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়েসহ দুইটি ফুটফুটে সন্তান এই পৃথিবীর আলো দেখেছে। বড় ছেলেটির নাম সমর মল্লিক আর ছোট মেয়েটির নাম বাসন্তী রানী। জন্ম থেকে বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী আর ছোট মেয়েটি এক বছর পর একটি জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পরে। দুই সন্তান এখন চলাফেরা করতে পারে রনা। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই দুই সন্তানকে লালন-পালন করা নিয়ে সারাদিন কষ্টের সাথে পার করে যাচ্ছি। কথাগুলো বলছিলেন লাক্কু কর্মকার ও পবিত্রা রানী দম্পতি। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার গোংগলপুর গ্রামে। জীবনধারণের জন্য যে বাসস্থানের দরকার সেটিও তাদের নেই। মহন্ত এস্টেট এর জমিতে তারা বসবাস করে। মাঝে মধ্যে তাদের ওই জমি থেকে চলে যেতে বলে মহন্ত এস্টেট কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের গর্ভধারিনী মা পবিত্রা রানী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর জীবনে একটি সন্তান কত না আনন্দের জিনিস। কিন্তু আমার দুই সন্তানই অক্ষম। তার প্রতিবন্ধী ছেলের বয়স ১০ বছর আর মেয়ের বয়স ৫ বছর। তারা দু’জনেই চলাফেরা করতে পারেনা। বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও ছোট মেয়েটির এখনো প্রতিবন্ধী ভাতা হয়নি। স্বামী ইটের ভাটায় কাজ করে আর আমি ৪০ দিন কর্মসূচির (খোইলা ভাতা) মাটি কাটি। খুব দুঃখে-কষ্টে আমাদের এই অভাবের সংসার চলে যাচ্ছে। তার উপরে ৬-৭ মাস আগে আমার শাশুড়ি বিধবা ভাতার কার্ড করতে গিয়ে ভ্যান থেকে পড়ে কোমর ভেঙ্গে যায়। এটাও আর একটা বিপদ। ঔষুধ-পত্রের খরচ চালাতে গিয়ে এখন আমরা হিমশিম খাচ্ছি।

সমর মল্লিক ও বাসন্তী রানীর বাবা লাক্কু কর্মকার বলেন, ছেলে ও মেয়েকে আমরা স্বামী-স্ত্রী নবজাতক শিশুর মত সারাক্ষণ দেখাশোনা করি। আমরা যখন কোন কাজে বাইরে যাই, তাদেরকে যে স্থানে রেখে যায় সেখানেই তারা শুয়ে থাকে। তারা তো বসে থাকতে পারে না। আশেপাশের কেউ তাদেরও দেখাশোনা করে না। ভিটেমাটি ছাড়া অভাবের সংসারে দুই সন্তান আর কোমর ভাঙ্গা মাকে নিয়ে কত না কষ্টে দিন যাপন করছি, সেটা ভগবান জানে। নিজের দুঃখের কষ্টের কথা কতজনকে আর বলবো। আমাদের সামনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কত সুন্দর সুন্দর বাড়ি দিচ্ছে। একটা বাড়ির জন্য ইউএনও, চেয়ারম্যান ও মেম্বার  সহ কত জনের কাছে গেলাম, কিন্তু পেলাম না। পাব কিনা সেটা নিয়েও আমরা চিন্তিত।

প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী ভাগ্যবতী। তিনি বলেন, ছেলে দু’টাকে তার মা-বাবা কাজের সময় যখন রেখে যায়, তখন প্রসব-পায়খানা করে ঘন্টার পর ঘন্টা তারা ওই স্থানেই পরে থাকে। এ দেখা তো একমাত্র বাপ মা ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। আমরা চোখের দেখা দেখি। তারা খুব দুঃখে-কষ্টে দিন যাপন করছে। কোন হৃদয়বান ব্যক্তি যদি এই অভাবী পরিবারটির পাশে দাঁড়াত তাহলে একটু হলেও তারা সন্তান দ’ুটি নিয়ে ভালো থাকতো। আমার আহ্বান সমাজের বিত্তবান প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই অভাবের পরিবারটির দিকে যেন নজর দেয়।

গোমস্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মন্ডল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই স্থানে যে পরিবারগুলো বসবাস করে তারা প্রত্যেকে বাইরে থেকে এসেছে। বর্তমানে তাদের জন্য কোন বাড়ি বরাদ্দ নেই। আসলে তাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর কোমর ভাঙ্গা বৃদ্ধার জন্য যতটুকু সম্ভব আর্থিক সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

গোমস্তাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, একজনের প্রতিবন্ধী ভাতা যেহেতু চালু হয়েছে। বাকিটাও সময় সাপেক্ষে চালু হবে। আর কোমর ভাঙ্গা ওই বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা চেষ্টা করব। তবে এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য কোন বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ আসলে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের সাথে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাকে পূণর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।