৪ গণতন্ত্রপন্থির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো মায়ানমার জান্তা

‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালাতে সহায়তা করার অভিযোগে মায়ানমারে চারজন গণতন্ত্রপন্থি কর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটল। তবে কখন ও কীভাবে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সাবেক এমপি ফিও জেয়া থাও, লেখক ও কর্মী কো জিমা, হ্লা মায়ো অং এবং অং থুরা জাওর। গত জুনে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন সামরিক আদালত। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেয়নি মায়ানমারের সামরিক মুখপাত্র।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মায়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার, গণতন্ত্রপন্থি ব্যক্তিত্ব, সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং এনএলডি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত জোট। বিবৃতিতে বলা হয়েছে- মৃত্যুদণ্ডে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত এবং দুঃখিত।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মায়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৃশংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নির্দেশনা, ব্যবস্থা ও ষড়যন্ত্রের দায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তবে তাদের কখন, কীভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো তা স্পষ্ট করেনি জান্তা সরকার ও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটি।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্যে ৫৩ বছর বয়সী কো জিমা রয়েছেন। ১৯৮৮ সালে সেনাবিরোধী আন্দোলনের জন্য বেশ পরিচিত রয়েছে তার। গত বছরের অক্টোবরে ইয়াঙ্গুনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করে সামরিক বাহিনী। ফিও জেয়া থাও এনএলডি দলের সাবেক এমপি ও সু চি’র সহযোগী ছিলেন। হিপ-হপ শিল্পী থাও জান্তাবিরোধী গানের জন্য আটক হন। আর জান্তা সরকারের হয়ে কাজ করা এক নারীকে হত্যার দায়ে হ্লা মাও অং এবং অং থুরাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফিও জেয়া থাওয়ের স্ত্রী থাজিন ন্যুন্ট অং বলেছেন, তাকে তার স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে জানানো হয়নি। এছাড়া মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অন্য আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

বিবিসি বার্মাজ জানাচ্ছে, ওই চারজন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ইয়াঙ্গনের ইনসেইন কারাগারে অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করার জন্য। পরিবারের হাতে এখনো মৃতদেহগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। পরিবারগুলো এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য জানার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে।

গণতন্ত্রপন্থিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। একে ‘সম্পূর্ণ নৃশংস কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এলাইনে পিয়ারসন এসব কথা বলেন।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করে আজ এ লাইনে পিয়ারসন বলেন, আন্দোলনকর্মী কিয়াউ মান ইউ এবং বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা ফিয়ো জেয়া থর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাটি ‘সম্পূর্ণ নৃশংস’।

জান্তাকে যে এ অপরাধকর্মের মূল্য চুকাতে হবে, তা তাদের দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মায়ানমার জান্তার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তকে মানুষের জীবনযাপন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর মায়ানমারে প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরও অনেক ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, জান্তার সামরিক আইন অনুযায়ী ২৩টি ‘অনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত অপরাধের ঘটনায়’ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর যেকোনো ধরনের সমালোচনাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মায়ানমার–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোরসি এক টুইটার পোস্টে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাকে জঘন্য কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।

গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মায়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। আটক করে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মান্তসহ অনেককে। এরপর থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে মায়ানমার। বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয় সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় বহু বিক্ষোভকারীকে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়তে গিয়ে প্রাণ গেছে দেশটির অনেক নাগরিকের।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২ , ১১ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৭ জিলহজ ১৪৪৩

৪ গণতন্ত্রপন্থির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো মায়ানমার জান্তা

‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালাতে সহায়তা করার অভিযোগে মায়ানমারে চারজন গণতন্ত্রপন্থি কর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটল। তবে কখন ও কীভাবে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সাবেক এমপি ফিও জেয়া থাও, লেখক ও কর্মী কো জিমা, হ্লা মায়ো অং এবং অং থুরা জাওর। গত জুনে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন সামরিক আদালত। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেয়নি মায়ানমারের সামরিক মুখপাত্র।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মায়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার, গণতন্ত্রপন্থি ব্যক্তিত্ব, সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং এনএলডি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত জোট। বিবৃতিতে বলা হয়েছে- মৃত্যুদণ্ডে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত এবং দুঃখিত।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মায়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৃশংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নির্দেশনা, ব্যবস্থা ও ষড়যন্ত্রের দায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তবে তাদের কখন, কীভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো তা স্পষ্ট করেনি জান্তা সরকার ও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটি।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্যে ৫৩ বছর বয়সী কো জিমা রয়েছেন। ১৯৮৮ সালে সেনাবিরোধী আন্দোলনের জন্য বেশ পরিচিত রয়েছে তার। গত বছরের অক্টোবরে ইয়াঙ্গুনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করে সামরিক বাহিনী। ফিও জেয়া থাও এনএলডি দলের সাবেক এমপি ও সু চি’র সহযোগী ছিলেন। হিপ-হপ শিল্পী থাও জান্তাবিরোধী গানের জন্য আটক হন। আর জান্তা সরকারের হয়ে কাজ করা এক নারীকে হত্যার দায়ে হ্লা মাও অং এবং অং থুরাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফিও জেয়া থাওয়ের স্ত্রী থাজিন ন্যুন্ট অং বলেছেন, তাকে তার স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে জানানো হয়নি। এছাড়া মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অন্য আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

বিবিসি বার্মাজ জানাচ্ছে, ওই চারজন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ইয়াঙ্গনের ইনসেইন কারাগারে অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করার জন্য। পরিবারের হাতে এখনো মৃতদেহগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। পরিবারগুলো এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য জানার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে।

গণতন্ত্রপন্থিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। একে ‘সম্পূর্ণ নৃশংস কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এলাইনে পিয়ারসন এসব কথা বলেন।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করে আজ এ লাইনে পিয়ারসন বলেন, আন্দোলনকর্মী কিয়াউ মান ইউ এবং বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা ফিয়ো জেয়া থর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাটি ‘সম্পূর্ণ নৃশংস’।

জান্তাকে যে এ অপরাধকর্মের মূল্য চুকাতে হবে, তা তাদের দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মায়ানমার জান্তার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তকে মানুষের জীবনযাপন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর মায়ানমারে প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরও অনেক ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, জান্তার সামরিক আইন অনুযায়ী ২৩টি ‘অনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত অপরাধের ঘটনায়’ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর যেকোনো ধরনের সমালোচনাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মায়ানমার–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোরসি এক টুইটার পোস্টে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাকে জঘন্য কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।

গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মায়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। আটক করে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মান্তসহ অনেককে। এরপর থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে মায়ানমার। বিক্ষোভ দমনে কঠোর হয় সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় বহু বিক্ষোভকারীকে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়তে গিয়ে প্রাণ গেছে দেশটির অনেক নাগরিকের।