দেশে ১৪ হাজারের বেশি শিশু প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায়

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ হাজারের বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। ব্যাপকভাবে স্বীকৃত না হলেও দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

গতকাল ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে বিবৃতিতে এসব কথা বলে জাতিসংঘের দুই সংস্থা। সচেতনতা বাড়াতে এবং সারাদেশে হাজারো শিশুর অকাল মৃত্যুরোধে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার, উন্নয়ন সহযোগী ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘এটি হৃদয়বিদারক যে বাংলাদেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে এত মানুষ প্রাণ হারায়। আমরা জানি যে, এসব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রতিটি শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যক্তি, কমিউনিটি ও সরকারের প্রতি আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাই।’

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর পানিতে ডুবে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টি ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যার কারণে স্থলভূমির বিশাল একটি অংশ তলিয়ে যায়। সেখানে সচেতনতা ও সাঁতারে দক্ষতার অভাব জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। গ্রামীণ এলাকার শিশুরা, যারা জলাশয়ের আশপাশে বেড়ে ওঠে তারাও প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ডা. বারদান জং রানা বলেন, ‘পানিতে ডুবা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণগুলোর একটি পানিতে ডুবে যাওয়া। ডব্লিউএইচও ডুবে যাওয়া রোধে বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ সুপারিশ করে এবং একটি মাল্টি সেক্টরাল উদ্যোগের প্রচার করে যাচ্ছে। মাল্টি সেক্টরাল সহযোগিতা বৃদ্ধি, ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে, আমরা এই ট্র্যাজেডি রোধ করতে পারি। সবার জন্য একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ অর্জন করতে পারি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ করা যায়। পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশু যতœকেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

সারাবিশ্বে পানিতে ডুবে যাওয়াকে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং পানিতে ডুবে প্রতিটি মৃত্যুই যে প্রতিরোধযোগ্য তা তুলে ধরতে ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তুলতে ডাব্লিওএইচও ও ইউনিসেফ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২ , ১১ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৭ জিলহজ ১৪৪৩

দেশে ১৪ হাজারের বেশি শিশু প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায়

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ হাজারের বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। ব্যাপকভাবে স্বীকৃত না হলেও দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

গতকাল ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে বিবৃতিতে এসব কথা বলে জাতিসংঘের দুই সংস্থা। সচেতনতা বাড়াতে এবং সারাদেশে হাজারো শিশুর অকাল মৃত্যুরোধে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার, উন্নয়ন সহযোগী ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘এটি হৃদয়বিদারক যে বাংলাদেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে এত মানুষ প্রাণ হারায়। আমরা জানি যে, এসব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রতিটি শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যক্তি, কমিউনিটি ও সরকারের প্রতি আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাই।’

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর পানিতে ডুবে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টি ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যার কারণে স্থলভূমির বিশাল একটি অংশ তলিয়ে যায়। সেখানে সচেতনতা ও সাঁতারে দক্ষতার অভাব জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। গ্রামীণ এলাকার শিশুরা, যারা জলাশয়ের আশপাশে বেড়ে ওঠে তারাও প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ডা. বারদান জং রানা বলেন, ‘পানিতে ডুবা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণগুলোর একটি পানিতে ডুবে যাওয়া। ডব্লিউএইচও ডুবে যাওয়া রোধে বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ সুপারিশ করে এবং একটি মাল্টি সেক্টরাল উদ্যোগের প্রচার করে যাচ্ছে। মাল্টি সেক্টরাল সহযোগিতা বৃদ্ধি, ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে, আমরা এই ট্র্যাজেডি রোধ করতে পারি। সবার জন্য একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ অর্জন করতে পারি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ করা যায়। পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশু যতœকেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

সারাবিশ্বে পানিতে ডুবে যাওয়াকে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং পানিতে ডুবে প্রতিটি মৃত্যুই যে প্রতিরোধযোগ্য তা তুলে ধরতে ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তুলতে ডাব্লিওএইচও ও ইউনিসেফ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।