লোডশেডিংয়ে ব্যাহত চা প্রক্রিয়াজাতকরণ লোকসানের আশঙ্কায় বাগান মালিক-ব্যবসায়ী

জুন-আগস্ট চায়ের ভরা মৌসুম। তবে এবার এই ভরা মৌসুমে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ২৪টি চা বাগান। ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাগানগুলোতে যথাযথভাবে চা- পাতা প্রক্রিয়াজাতের কাজ করতে পারছে না শ্রমিকরা। প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় কারখানায় হাজার হাজার কাঁচা চা-পাতা নষ্ট হচ্ছে। একদিকে দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলার চা শিল্প অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সরকারি ঘোষণায় লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে এ উপজেলায় মানুষ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন। উপজেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুত। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোনে চার্জ দেয়া যাচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্কও থাকছে না। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা ও অফিস কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে এই পরিস্থিতির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চুনারুঘাট কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহও মিলছে না। এ জন্যই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, লোডশেডিং ও খড়ার কারণে ভরা মৌসুমে চা গাছে নানা রোগ আর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে লস্করপুর ভ্যালির চায়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পাশাপাশি চা শিল্পে চাহিদার চরম ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ভরা মৌসুমেও খড়ার কারণে পাতা না পাওয়ায় ইতোমধ্যে কোন কোন বাগানে মেশিন বন্ধ রয়েছে। যা ভ্যালির ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। লস্করপুর ভ্যালির ২৪টি বাগানের মধ্যে ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল এক কোটি সাড়ে ১৭ লাখ কেজি। যা চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু চলতি বছর খড়ার কারণে চায়ের মৌসুম ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে শুরু হয় মার্চ মাসে। উৎপাদনের শুরুতেই চা বাগানগুলো খড়ার কবলে পড়েছে। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে এখন। অথচ গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে চলছে প্রচ- তাপদাহ। ভ্যালির চা বাগানগুলো খড়ার কবলে পড়ে রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিস রোগের পাশাপাশি এক ধরনের বড় বড় পোকার আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এসব পোকা দ্রুত পাতা খেয়ে ফেলে। নানা রোগের কারণে ভরা মৌসুমে যেখানে বড় বাগানগুলো দৈনিক ৪০-৪৫ হাজার কেজি কাঁচা পাতা উত্তোলন হওয়ার কথা সেখানে হচ্ছে দৈনিক ৮-১০ হাজার কেজি পাতা।

উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে প্রায় তিনগুণ। ভ্যালির সবচেয়ে বড় ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগানে দৈনিক পাতা যা চয়ন হয় তা দিকে ফ্যাক্টরি চালানো সম্ভব নয়, বিধায় তারা একই কোম্পানির আমু বাগানে পাতা পাঠিয়ে দিচ্ছে। চান্দপুর বাগানে এ সময়ে দৈনিক ৪০ হাজারেরও বেশি পাতা চয়ন হওয়ার কথা, অথচ পাতা পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। এ অবস্থা বিরাজ করছে ভ্যালির আমু, নালুয়া, লস্করপুর, চ-িচড়াসহ বিভিন্ন বাগানে। আর ছোট ছোট বাগানগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াব্হ। এতে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে বলছেন চা সংশ্লিষ্টরা। জুন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। উপজেলায় দৈনিক ২ ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলে লোডশেডিং হচ্ছে দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এ অবস্থায় অধিকাংশ চা বাগানের ফ্যাক্টরি প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এ ছাড়া বার বার ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। খড়া আর রোগের আক্রমণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বিদ্যুৎয়ের কারণে ফ্যাক্টরি বার বার বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চা। চায়ের উৎপাদন চালু রাখতে গিয়ে কোনো কোন বাগান গ্যাস জেনারেটর ব্যবহার করার কারণে তাদের উৎপাদন খরচও বাড়ছে।

খড়ার কারণে পাওয়া যাচ্ছে না চায়ের পাতা, ফ্যাক্টরি চালু রাখতে বাগানগুলোতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ। অথচ নিলামে চায়ের মূল্য না বেড়ে দিন দিন কমছে। ফলে চায়ের উৎপাদন এবং মূল্য ধরে রাখতে না পেয়ে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন চা বাগানগুলো। চান্দপুর চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক শামীমুল হুদা বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে চা পাতা পাওয়া যাচ্ছে না, পাতা চয়ন কমে গেছে কয়েকগুণ। বৃষ্টি নেই, তাই রোগের আক্রমণও বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে প্রচ- খড়ায় আমাদের সেচ দিতে হচ্ছ। নতুন করে বিদ্যুত সমস্যা আমাদের মরার ওপর খারার গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেচ এবং জেনারেটর ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বাড়ছে। এছাড়া নানা রোগের আক্রমণ তো আছেই। লস্করপুর চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক তারিফ আহম্মেদ বলেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চায়ের গুণমান নষ্ট হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। লস্করপুর ভ্যালি চেয়ারম্যান ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো ভ্যালিতেই এবার চায়ের উৎপাদনে বাধা দীর্ঘমেয়াদী খড়া, নানা রোগ। নতুন যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ লোডশেডিং।

সবমিলিয়ে চা শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। লোডশেডিং নিয়ে চুনারুঘাট পৌরশহরের সৈয়দ কামরুল হাসান নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সারাদিনে বিদ্যুৎ নাই কইলেই চলে।

নিজ ব্যবসা সঠিকভাবে করতে পারছি না। বিদ্যুৎ কোথাও ১০ ঘণ্টা আবার কোথাও গড়ে ১২-১৩ ঘণ্টা থাকছে না। কোন দিন এর চেয়েও বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। চুনারুঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জুনায়দুর রহমান দৈনিক সংবাদকে বলেন, আমাদের চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট। পাচ্ছি ৩ থেকে ৫ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

আর বিদ্যুৎ কখন থাকবে আর কখন থাকবে না এই তালিকা করলেও এখন তা প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিচ্ছে না। তাই আরও কিছু দিন দেখে তা প্রকাশ করা হবে।

বুধবার, ২৭ জুলাই ২০২২ , ১২ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৮ জিলহজ ১৪৪৩

লোডশেডিংয়ে ব্যাহত চা প্রক্রিয়াজাতকরণ লোকসানের আশঙ্কায় বাগান মালিক-ব্যবসায়ী

প্রতিনিধি,চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ)

image

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : বাগানে চা পাতা তুলছেন নারী শ্রমিকরা -সংবাদ

জুন-আগস্ট চায়ের ভরা মৌসুম। তবে এবার এই ভরা মৌসুমে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ২৪টি চা বাগান। ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাগানগুলোতে যথাযথভাবে চা- পাতা প্রক্রিয়াজাতের কাজ করতে পারছে না শ্রমিকরা। প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় কারখানায় হাজার হাজার কাঁচা চা-পাতা নষ্ট হচ্ছে। একদিকে দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলার চা শিল্প অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে সরকারি ঘোষণায় লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে এ উপজেলায় মানুষ ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন। উপজেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুত। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোনে চার্জ দেয়া যাচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্কও থাকছে না। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা ও অফিস কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে এই পরিস্থিতির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চুনারুঘাট কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহও মিলছে না। এ জন্যই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, লোডশেডিং ও খড়ার কারণে ভরা মৌসুমে চা গাছে নানা রোগ আর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে লস্করপুর ভ্যালির চায়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পাশাপাশি চা শিল্পে চাহিদার চরম ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ভরা মৌসুমেও খড়ার কারণে পাতা না পাওয়ায় ইতোমধ্যে কোন কোন বাগানে মেশিন বন্ধ রয়েছে। যা ভ্যালির ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। লস্করপুর ভ্যালির ২৪টি বাগানের মধ্যে ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল এক কোটি সাড়ে ১৭ লাখ কেজি। যা চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু চলতি বছর খড়ার কারণে চায়ের মৌসুম ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে শুরু হয় মার্চ মাসে। উৎপাদনের শুরুতেই চা বাগানগুলো খড়ার কবলে পড়েছে। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে এখন। অথচ গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে চলছে প্রচ- তাপদাহ। ভ্যালির চা বাগানগুলো খড়ার কবলে পড়ে রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিস রোগের পাশাপাশি এক ধরনের বড় বড় পোকার আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এসব পোকা দ্রুত পাতা খেয়ে ফেলে। নানা রোগের কারণে ভরা মৌসুমে যেখানে বড় বাগানগুলো দৈনিক ৪০-৪৫ হাজার কেজি কাঁচা পাতা উত্তোলন হওয়ার কথা সেখানে হচ্ছে দৈনিক ৮-১০ হাজার কেজি পাতা।

উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে প্রায় তিনগুণ। ভ্যালির সবচেয়ে বড় ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগানে দৈনিক পাতা যা চয়ন হয় তা দিকে ফ্যাক্টরি চালানো সম্ভব নয়, বিধায় তারা একই কোম্পানির আমু বাগানে পাতা পাঠিয়ে দিচ্ছে। চান্দপুর বাগানে এ সময়ে দৈনিক ৪০ হাজারেরও বেশি পাতা চয়ন হওয়ার কথা, অথচ পাতা পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। এ অবস্থা বিরাজ করছে ভ্যালির আমু, নালুয়া, লস্করপুর, চ-িচড়াসহ বিভিন্ন বাগানে। আর ছোট ছোট বাগানগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াব্হ। এতে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে বলছেন চা সংশ্লিষ্টরা। জুন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। উপজেলায় দৈনিক ২ ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলে লোডশেডিং হচ্ছে দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এ অবস্থায় অধিকাংশ চা বাগানের ফ্যাক্টরি প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এ ছাড়া বার বার ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। খড়া আর রোগের আক্রমণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বিদ্যুৎয়ের কারণে ফ্যাক্টরি বার বার বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চা। চায়ের উৎপাদন চালু রাখতে গিয়ে কোনো কোন বাগান গ্যাস জেনারেটর ব্যবহার করার কারণে তাদের উৎপাদন খরচও বাড়ছে।

খড়ার কারণে পাওয়া যাচ্ছে না চায়ের পাতা, ফ্যাক্টরি চালু রাখতে বাগানগুলোতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ। অথচ নিলামে চায়ের মূল্য না বেড়ে দিন দিন কমছে। ফলে চায়ের উৎপাদন এবং মূল্য ধরে রাখতে না পেয়ে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন চা বাগানগুলো। চান্দপুর চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক শামীমুল হুদা বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে চা পাতা পাওয়া যাচ্ছে না, পাতা চয়ন কমে গেছে কয়েকগুণ। বৃষ্টি নেই, তাই রোগের আক্রমণও বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে প্রচ- খড়ায় আমাদের সেচ দিতে হচ্ছ। নতুন করে বিদ্যুত সমস্যা আমাদের মরার ওপর খারার গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেচ এবং জেনারেটর ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বাড়ছে। এছাড়া নানা রোগের আক্রমণ তো আছেই। লস্করপুর চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক তারিফ আহম্মেদ বলেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চায়ের গুণমান নষ্ট হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। লস্করপুর ভ্যালি চেয়ারম্যান ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো ভ্যালিতেই এবার চায়ের উৎপাদনে বাধা দীর্ঘমেয়াদী খড়া, নানা রোগ। নতুন যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ লোডশেডিং।

সবমিলিয়ে চা শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। লোডশেডিং নিয়ে চুনারুঘাট পৌরশহরের সৈয়দ কামরুল হাসান নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সারাদিনে বিদ্যুৎ নাই কইলেই চলে।

নিজ ব্যবসা সঠিকভাবে করতে পারছি না। বিদ্যুৎ কোথাও ১০ ঘণ্টা আবার কোথাও গড়ে ১২-১৩ ঘণ্টা থাকছে না। কোন দিন এর চেয়েও বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। চুনারুঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জুনায়দুর রহমান দৈনিক সংবাদকে বলেন, আমাদের চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট। পাচ্ছি ৩ থেকে ৫ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

আর বিদ্যুৎ কখন থাকবে আর কখন থাকবে না এই তালিকা করলেও এখন তা প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিচ্ছে না। তাই আরও কিছু দিন দেখে তা প্রকাশ করা হবে।