লোকান্তরে দুই বাংলার দুই কবি : শ্রদ্ধাঞ্জলি

গত ২৬ জুলাই একই দিনে লোকান্তরিত হলেন দুই বাংলার দুই বিশিষ্ট কবি। সিলেটে বসবাসরত কবি ফজলুল হক (৭৫) ও আগরতলায় বসবাসরত কবি প্রবুদ্ধসুন্দর কর (৫৩)। তাঁদের এই হঠাৎ চলে যাওয়ায় কাব্যাঙ্গনে শোকের আবহ বইছে। এই দুই কবির স্মরণে আজকের ‘সংবাদ সাময়িকী’তে প্রকাশিত হলো দু’জনের কবিতাগুচ্ছ

ফজলুল হকের

কবিতা

সব দুঃখ সঙ্গে নেবো না

সব দুঃখ সঙ্গে নেবো না, কিছুকিছু স্বপ্নচূর্ণ

সুখের মোড়কে এঁটে গেণ্ডাফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে

পথে রেখে যাবো।

যদি যেতে চাও, যাও

দারুগন্ধময় কোনো মিতবাক মেঘ মেঘলা দিনে

নতোন্নত শারীরিক রেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে

নরম পাথরে তৈরি কাঁধের পাহাড় থেকে

যে হাত নেমেছে-

সে তোমাকে কখনো পাবে না।

তবু কোথায় দাঁড়াবে তুমি

চারিদিকে এতো শূন্যতায়?

সব দুঃখ সঙ্গে যাবে না,

কিছু কিছু উৎকণ্ঠাও

যে রকম কৃষকের থাকে,

থাকবে সেটাও

যদি নিতে চাও, নেবে।

নির্বাক, একা গৌরবে

রোদ্দুরের নির্জন ছায়ায় ওরা এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।

না

এখনও অস্পষ্ট

বহুদিন আগের এক দীর্ঘ না!

তারপর চরাচরহীন অনেক বিরাণ গন্তব্যে

খুঁজে খুঁজে ফিরে গেছি, সেই

না

অর্থহীন ধ্বনিবিহীন-রঙরিক্ত ব্যর্থ বেদুঈন।

ক্রমশ জল ভেঙ্গে বনের পথ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেছি

নক্ষত্র বিছানো রাত এবং

নরম নোলকপরা ভোরের স্বপ্নগুচ্ছ দেখেছি মৃত

কতো

পরিশ্রমী হাত!

এখনও বিস্ময়

অনেক দিন আগেকার পরমাগত গরিয়সী

সেই

না

আজও ভালোবাসি

নিবিষ্ট ধাত্রীর মমতায়।

পথ হাঁটবে না

প্রফেট হাঁটতেন

পথের কাঁটা চিনে পাতা সরিয়ে।

আমরা চিনেছি পথ

না চেনার ভান করে যতবার, পায়ে কাঁটা ফুটে

ততবার ধাঁধায় পড়েছি।

রবীন্দ্রনাথও পথে নেমেছিলেন।

কোথায় গর্ত এবং নর্দমা খুঁজতে খুঁজতে

একদিন বুদ্ধ যীশু এবং মার্কসের

দীর্ঘশ্বাসের মতো ভাবেন,

পথের শেষ কোথায়...?

এসব গল্প জানে পথ, আরেক জেনেছে ইতিহাস।

আসলে, ভালোবাসার হাত না বাড়ালে

পথ কোনদিনই আমাদের সাথে হাঁটবে না।

যুদ্ধ ও কুয়াশা

কতোটুকু ফুল আর কতোটা পুষ্প

এই দ্বন্দে শেষতক

পাতায় রৌদ্রের ভিড়ে রেখে এসেছিল, অন্ধকারের মুখ

মাটি হেরে গিয়েছিল।

সেই সঙ্গে, যদ্দুর মনে পড়ে

এমন কথাও সকলেই জেনেছিল

নদীর সব জায়গায় কুয়াশা এবং চোখের পাপড়ির মাঝখানে

আকাশটা আরও নীল হবে

আকাশটা আরও নীল হবে।

অগত্যা, সতীর্থ দশজনের সাথে কবিও

জলে নেমে গিয়ে দেখে, নদীতে এতো জল!

এক জন্মের এই মামুলী দেখার মধ্যে চোখটিপে অনন্তকাল

জল-জংলার পথ ভাঙতে ভাঙতে

জানা গেল, প্রকৃতই

পথ গেছে জঙ্গলের দিকে।

এখন অবস্থা যা’ দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে হয়

এই নিজ হাতে নিজের অক্ষরে

এতো গিরিপথ-বৃক্ষ-জলধারা এবং অন্ধকারের নির্জন মুখশ্রী

বাঘের চোখের আলোয় আজকাল বেশি নিরাপদ।

ভাবে, অন্তত শৈশবের ঘাসফড়িং ধরার মতো এই গল্প

বিদ্যাপতির খাগের কলম

আর কেশবদাসের ব্রজভাষায়

সেই কোন দূর যুগ থেকে দশমুখে দশবার

যুদ্ধ ও জিঘাংসাদগ্ধ একেকজন কবির গরিমাকাহিনী।

প্রবুদ্ধসুন্দর করের

কবিতা

বকলমা

আমার সময় নেই। অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ চেপে

বেদনানাশক খেয়ে শুতে হবে রাতে।

লেখালেখি? নামজপতপ?

লেখালেখির বকলমা আমি কবেই দিয়েছি

কবিবন্ধুদের কাছে

জপতপের বকলমা তো ঠাকুর তোমাকে সঁপেছি

ব্যথার বকলমা শুধু নিঃশর্ত নিয়েছি।

৭ জানুয়ারি

কেক প্লাজা থেকে এসেছে তোমার ক্রিমমাখা মাংসপিণ্ড

শ্বাসের ঔরসে ফুলে উঠেছে অজস্র বেলুনের পেট

দালির মোমবাতি থেকে ফোঁটা ফোঁটা গলে পড়ছে সময়।

বন্ধুরা তোমাকে শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে

তীব্র স্মৃতিকাতরতা নিয়ে তুমি ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছ

অন্ধকার এক বিস্মৃতির দিকে।

সুর করে করে সবাই তোমাকে ঘিরে গাইছে বার্থ ডে সং

রেসকোর্সে যেভাবে জকির পেছনে পেছনে

ধেয়ে আসে তুমুল চিৎকার।

সাতচল্লিশ বছর তোমার কেটে গেল এই গ্রহে

পৃথিবীর তিনভাগ বিষ আর একভাগ বিষাদ বলেই

চাঁদ থেকে নাকি এই গ্রহকে দেখে নীল মনে হয়।

এক নীলের ভিতর দিয়ে তুমি এগিয়ে চলেছ

বিস্মৃতির দিকে।

বিষাক্ত স্মৃতির এক উপগ্রহ কাতর তোমার অবয়ব থেকে

ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল, যার আলো ও পাক্ষিক অন্ধকার

তোমাকে উন্মাদ বা কবির মান্যতা দিয়েছে।

স্যানাটোরিয়াম

স্তব্ধতার প্রতিধ্বনি এসে টোকা দিলে রাতারাতি

রুকস্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় জম্পুই হিলের পথে।

পথের বাঁকেই পাথর ফাটিয়ে নেমে আসা প্লবঙ্গ ঝর্নায়

পূর্ত পাপ ধুয়ে উঠে যেও সর্বোচ্চ শৃঙ্গের দিকে।

সবুজ ট্রপিজ থেকে ঝুলে পড়া বৃষ্টি সহসা ভিজিয়ে দিলে

তোমাকে আশ্রয় দেবে পাহাড়ি বাজার।

মাতৃতান্ত্রিক দোকানে বসে চায়ের কাপে ঠোঁট রেখে

আর চোখে দেখে নিও মিজো যুবতির গালে প্লামের লালিমা।

অসুস্থ শহর থেকে আরোগ্যের লোভে তুমি পাহাড়ে এসেছ

নক্ষত্র যেভাবে হাতে ধরে অন্ধ নাবিককে গন্তব্যে পৌঁছায়

সাদা এ্যাপ্রোনের মেঘেও তেমনি তোমাকে নিয়ে যাবে স্যানাটোরিয়ামে

নিসর্গ স্তব্ধতা আর সান্ধ্য গির্জা থেকে ভেসে আসা

ড্রাম আর গিটারের ধ্বনি তোমাকে আরোগ্য দেবে

তোমার ঔষধি আছে মিজো যুবতির পরায়ণ হাসি ও লাবণ্যে

যদিও যৌনতা নিয়ে ট্যাবু নেই কোনো, তবু সম্মোহিত

প্রেমিকের মতো সমর্পণ নিও। পার্সের পকেটে কনডম নিও না।

দরজা

যে তোমাকে ছেড়ে যেতে চায়

তাকে যেতে দাও

আটকে রেখ না।

একটি কথাও না বলে তার

ব্রিফকেস গোছাতে সাহায্য করো।

প্রেসার বা থাইরয়েডের ওষুধ সে যেন

ভুল করে ফেলে না যায়। শূন্যতা ছাড়া

সে যেন ছেড়ে না যায় আর কোনও স্মৃতি।

অশ্রুগ্রন্থি থেকে যেন বেরিয়ে না আসে সুচ্যগ্র তরল

ঘুণাক্ষরেও তোমার মুখে যেন জলবসন্তের মতো

আর্তি আর হাহাকার ফুটে না ওঠে।

শুধু এগিয়ে দেওয়ার পথে নীচু স্বরে বোলো

দরজা ভেজানো থাকবে

টোকা দেওয়ার দরকার নেই।

আলতো ঠেলে দিলেই কপাট খুলে যাবে।

রেডিয়ো স্টেশন

জঙ্গলের ভেতর কোথাও এক পরিত্যক্ত রেডিও স্টেশন

কোনো একদিন খুঁজে পেলে জেনো, স্তব্ধতাই এর সিগনেচার টিউন

নৈঃশব্দ্য ব্যতীত হাহাকার, বিলাপ, অশ্রুপাতের ধারাবিবরণী

২৩৬.৪ মিটারব্যান্ড তথা ১২৬৯ কিলোহার্টজে প্রচারিত হয়নি কখনো

অধিবেশনের শুরুতে বা শেষে ঘোষিত হয়নি স্টেশনের নাম।

জঙ্গলের ভেতর কোথাও স্তব্ধতার সিগনেচার টিউন শুনতে পেলে

জেনো, আত্মকণ্ডূয়নমুগ্ধ এই স্টেশনের ধ্বংসাবশেষই আকাশবাণী প্রবুদ্ধসুন্দর।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২ , ১৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

লোকান্তরে দুই বাংলার দুই কবি : শ্রদ্ধাঞ্জলি

image

গত ২৬ জুলাই একই দিনে লোকান্তরিত হলেন দুই বাংলার দুই বিশিষ্ট কবি। সিলেটে বসবাসরত কবি ফজলুল হক (৭৫) ও আগরতলায় বসবাসরত কবি প্রবুদ্ধসুন্দর কর (৫৩)। তাঁদের এই হঠাৎ চলে যাওয়ায় কাব্যাঙ্গনে শোকের আবহ বইছে। এই দুই কবির স্মরণে আজকের ‘সংবাদ সাময়িকী’তে প্রকাশিত হলো দু’জনের কবিতাগুচ্ছ

ফজলুল হকের

কবিতা

সব দুঃখ সঙ্গে নেবো না

সব দুঃখ সঙ্গে নেবো না, কিছুকিছু স্বপ্নচূর্ণ

সুখের মোড়কে এঁটে গেণ্ডাফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে

পথে রেখে যাবো।

যদি যেতে চাও, যাও

দারুগন্ধময় কোনো মিতবাক মেঘ মেঘলা দিনে

নতোন্নত শারীরিক রেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে

নরম পাথরে তৈরি কাঁধের পাহাড় থেকে

যে হাত নেমেছে-

সে তোমাকে কখনো পাবে না।

তবু কোথায় দাঁড়াবে তুমি

চারিদিকে এতো শূন্যতায়?

সব দুঃখ সঙ্গে যাবে না,

কিছু কিছু উৎকণ্ঠাও

যে রকম কৃষকের থাকে,

থাকবে সেটাও

যদি নিতে চাও, নেবে।

নির্বাক, একা গৌরবে

রোদ্দুরের নির্জন ছায়ায় ওরা এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।

না

এখনও অস্পষ্ট

বহুদিন আগের এক দীর্ঘ না!

তারপর চরাচরহীন অনেক বিরাণ গন্তব্যে

খুঁজে খুঁজে ফিরে গেছি, সেই

না

অর্থহীন ধ্বনিবিহীন-রঙরিক্ত ব্যর্থ বেদুঈন।

ক্রমশ জল ভেঙ্গে বনের পথ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেছি

নক্ষত্র বিছানো রাত এবং

নরম নোলকপরা ভোরের স্বপ্নগুচ্ছ দেখেছি মৃত

কতো

পরিশ্রমী হাত!

এখনও বিস্ময়

অনেক দিন আগেকার পরমাগত গরিয়সী

সেই

না

আজও ভালোবাসি

নিবিষ্ট ধাত্রীর মমতায়।

পথ হাঁটবে না

প্রফেট হাঁটতেন

পথের কাঁটা চিনে পাতা সরিয়ে।

আমরা চিনেছি পথ

না চেনার ভান করে যতবার, পায়ে কাঁটা ফুটে

ততবার ধাঁধায় পড়েছি।

রবীন্দ্রনাথও পথে নেমেছিলেন।

কোথায় গর্ত এবং নর্দমা খুঁজতে খুঁজতে

একদিন বুদ্ধ যীশু এবং মার্কসের

দীর্ঘশ্বাসের মতো ভাবেন,

পথের শেষ কোথায়...?

এসব গল্প জানে পথ, আরেক জেনেছে ইতিহাস।

আসলে, ভালোবাসার হাত না বাড়ালে

পথ কোনদিনই আমাদের সাথে হাঁটবে না।

যুদ্ধ ও কুয়াশা

কতোটুকু ফুল আর কতোটা পুষ্প

এই দ্বন্দে শেষতক

পাতায় রৌদ্রের ভিড়ে রেখে এসেছিল, অন্ধকারের মুখ

মাটি হেরে গিয়েছিল।

সেই সঙ্গে, যদ্দুর মনে পড়ে

এমন কথাও সকলেই জেনেছিল

নদীর সব জায়গায় কুয়াশা এবং চোখের পাপড়ির মাঝখানে

আকাশটা আরও নীল হবে

আকাশটা আরও নীল হবে।

অগত্যা, সতীর্থ দশজনের সাথে কবিও

জলে নেমে গিয়ে দেখে, নদীতে এতো জল!

এক জন্মের এই মামুলী দেখার মধ্যে চোখটিপে অনন্তকাল

জল-জংলার পথ ভাঙতে ভাঙতে

জানা গেল, প্রকৃতই

পথ গেছে জঙ্গলের দিকে।

এখন অবস্থা যা’ দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে হয়

এই নিজ হাতে নিজের অক্ষরে

এতো গিরিপথ-বৃক্ষ-জলধারা এবং অন্ধকারের নির্জন মুখশ্রী

বাঘের চোখের আলোয় আজকাল বেশি নিরাপদ।

ভাবে, অন্তত শৈশবের ঘাসফড়িং ধরার মতো এই গল্প

বিদ্যাপতির খাগের কলম

আর কেশবদাসের ব্রজভাষায়

সেই কোন দূর যুগ থেকে দশমুখে দশবার

যুদ্ধ ও জিঘাংসাদগ্ধ একেকজন কবির গরিমাকাহিনী।

প্রবুদ্ধসুন্দর করের

কবিতা

বকলমা

আমার সময় নেই। অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ চেপে

বেদনানাশক খেয়ে শুতে হবে রাতে।

লেখালেখি? নামজপতপ?

লেখালেখির বকলমা আমি কবেই দিয়েছি

কবিবন্ধুদের কাছে

জপতপের বকলমা তো ঠাকুর তোমাকে সঁপেছি

ব্যথার বকলমা শুধু নিঃশর্ত নিয়েছি।

৭ জানুয়ারি

কেক প্লাজা থেকে এসেছে তোমার ক্রিমমাখা মাংসপিণ্ড

শ্বাসের ঔরসে ফুলে উঠেছে অজস্র বেলুনের পেট

দালির মোমবাতি থেকে ফোঁটা ফোঁটা গলে পড়ছে সময়।

বন্ধুরা তোমাকে শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে

তীব্র স্মৃতিকাতরতা নিয়ে তুমি ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছ

অন্ধকার এক বিস্মৃতির দিকে।

সুর করে করে সবাই তোমাকে ঘিরে গাইছে বার্থ ডে সং

রেসকোর্সে যেভাবে জকির পেছনে পেছনে

ধেয়ে আসে তুমুল চিৎকার।

সাতচল্লিশ বছর তোমার কেটে গেল এই গ্রহে

পৃথিবীর তিনভাগ বিষ আর একভাগ বিষাদ বলেই

চাঁদ থেকে নাকি এই গ্রহকে দেখে নীল মনে হয়।

এক নীলের ভিতর দিয়ে তুমি এগিয়ে চলেছ

বিস্মৃতির দিকে।

বিষাক্ত স্মৃতির এক উপগ্রহ কাতর তোমার অবয়ব থেকে

ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল, যার আলো ও পাক্ষিক অন্ধকার

তোমাকে উন্মাদ বা কবির মান্যতা দিয়েছে।

স্যানাটোরিয়াম

স্তব্ধতার প্রতিধ্বনি এসে টোকা দিলে রাতারাতি

রুকস্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় জম্পুই হিলের পথে।

পথের বাঁকেই পাথর ফাটিয়ে নেমে আসা প্লবঙ্গ ঝর্নায়

পূর্ত পাপ ধুয়ে উঠে যেও সর্বোচ্চ শৃঙ্গের দিকে।

সবুজ ট্রপিজ থেকে ঝুলে পড়া বৃষ্টি সহসা ভিজিয়ে দিলে

তোমাকে আশ্রয় দেবে পাহাড়ি বাজার।

মাতৃতান্ত্রিক দোকানে বসে চায়ের কাপে ঠোঁট রেখে

আর চোখে দেখে নিও মিজো যুবতির গালে প্লামের লালিমা।

অসুস্থ শহর থেকে আরোগ্যের লোভে তুমি পাহাড়ে এসেছ

নক্ষত্র যেভাবে হাতে ধরে অন্ধ নাবিককে গন্তব্যে পৌঁছায়

সাদা এ্যাপ্রোনের মেঘেও তেমনি তোমাকে নিয়ে যাবে স্যানাটোরিয়ামে

নিসর্গ স্তব্ধতা আর সান্ধ্য গির্জা থেকে ভেসে আসা

ড্রাম আর গিটারের ধ্বনি তোমাকে আরোগ্য দেবে

তোমার ঔষধি আছে মিজো যুবতির পরায়ণ হাসি ও লাবণ্যে

যদিও যৌনতা নিয়ে ট্যাবু নেই কোনো, তবু সম্মোহিত

প্রেমিকের মতো সমর্পণ নিও। পার্সের পকেটে কনডম নিও না।

দরজা

যে তোমাকে ছেড়ে যেতে চায়

তাকে যেতে দাও

আটকে রেখ না।

একটি কথাও না বলে তার

ব্রিফকেস গোছাতে সাহায্য করো।

প্রেসার বা থাইরয়েডের ওষুধ সে যেন

ভুল করে ফেলে না যায়। শূন্যতা ছাড়া

সে যেন ছেড়ে না যায় আর কোনও স্মৃতি।

অশ্রুগ্রন্থি থেকে যেন বেরিয়ে না আসে সুচ্যগ্র তরল

ঘুণাক্ষরেও তোমার মুখে যেন জলবসন্তের মতো

আর্তি আর হাহাকার ফুটে না ওঠে।

শুধু এগিয়ে দেওয়ার পথে নীচু স্বরে বোলো

দরজা ভেজানো থাকবে

টোকা দেওয়ার দরকার নেই।

আলতো ঠেলে দিলেই কপাট খুলে যাবে।

রেডিয়ো স্টেশন

জঙ্গলের ভেতর কোথাও এক পরিত্যক্ত রেডিও স্টেশন

কোনো একদিন খুঁজে পেলে জেনো, স্তব্ধতাই এর সিগনেচার টিউন

নৈঃশব্দ্য ব্যতীত হাহাকার, বিলাপ, অশ্রুপাতের ধারাবিবরণী

২৩৬.৪ মিটারব্যান্ড তথা ১২৬৯ কিলোহার্টজে প্রচারিত হয়নি কখনো

অধিবেশনের শুরুতে বা শেষে ঘোষিত হয়নি স্টেশনের নাম।

জঙ্গলের ভেতর কোথাও স্তব্ধতার সিগনেচার টিউন শুনতে পেলে

জেনো, আত্মকণ্ডূয়নমুগ্ধ এই স্টেশনের ধ্বংসাবশেষই আকাশবাণী প্রবুদ্ধসুন্দর।