৬ মাসের জ্বালানি তেলের জোগান নিশ্চিত আছে : বিপিসি

দেশে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনের কোন সংকট নেই জানিয়ে সরকার বলছে, আগামী ছয় মাসের জ্বালানি তেলের আমদানি নিশ্চিত করা আছে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

দেশে ডিজেলের মজুদ কমে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। যানবাহনের জ্বালানি পেট্রল ও অকটেনের মজুদও কমে গেছে। গত কয়েকদিন একাধিক গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে এ ধরনের খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। রাজধানীর কিছু পেট্রল পাম্প যানবাহনে তেল দেয়া সীমিত করেছে বলেও খবরে বলা হয়। এই প্রেক্ষাপটে কোন প্রকার জ্বালানি তেল কি পরিমাণ মজুদ আছে এবং দেশে চাহিদার বিপরীতে তা কতদিন যোগান দেয়া যাবে এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। গতকাল জ্বালানি বিভাগ জানায়, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোন ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোন আশঙ্কাও নেই। ইতোমধ্যে আগামী ৬ মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া ‘পাইপলাইনে’ আছে।

একই কথা বলেছেন জ্বালানি তেল আমদানি ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ। আগামী ছয় মাসের তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি শিডিউল করা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেল রয়েছে এবং আমদানির পথে রয়েছে, তাতে ছয় মাসের জ্বালানি নিশ্চিত রয়েছে। আর কোন তেল আমদানি না করলেও দেশে ৩২ দিনের ডিজেল ও ৪৪ দিনের ফার্নেস অয়েল মজুদ রয়েছে।’ এর বাইরে ৪৪ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বি এম আজাদ বলেন, পেট্রল পাম্পগুলোয় গ্রাহকদের কম তেল দেয়ার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যারা নিজ থেকে এরকম নোটিশ দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয়। তবে পেট্রলের চাহিদার পুরোটাই এবং অকটেনের প্রায় ৪০ ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়।

দেশে প্রতিদিন ডিজেলের চাহিদা ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন। আমদানি করা ডিজেলের বড় অংশ পরিবহন খাত এবং কৃষিকাজে সেচের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিছু অংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। উচ্চমূল্যে ডিজেল কিনে কম দামে বিক্রির কারণে প্রতি বছরই বিপুল ভর্তুকি গুনতে হয় সরকারকে।

সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় জ্বালানি তেলের ব্যবহারে ও আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাংলাদেশ। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত করা হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং চালু করে সরকার। ভথর্তুকি মূল্যে সরবরাহকৃত জ্বালানি তেল ব্যবহারে মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হতে ভোক্তা পর্যায়ে অনুরোধও জানায় সরকার।

তবে জ্বালানি তেলের আমদানি, মজুদ করা, সরবরাহ করার প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিকভাবে চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী ছয় মাস এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চলবে। যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে, তা নিয়ে আশঙ্কা করার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।’

বিপিসির চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে দেশে ডিজেল ৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন, অকটেন ১২ হাজার ২৩৮ মেট্রিক টন, পেট্রল ২১ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন, জেট ফুয়েল ৬২ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন এবং ফার্নেস অয়েল ৮৫ হাজার ৪১ মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি ধরে নেই, বিপিসি আর তেল আমদানি করলো না, তাহলে ডিজেল দিয়ে চলবে ৩২ দিন, অকটেন দিয়ে ৯ দিন, পেট্রল দিয়ে ১৫ দিন, জেট ফুয়েল দিয়ে ৪৪ দিন আর ফার্নেস অয়েল দিয়ে চলবে ৪৪ দিন। কিন্তু বিপিসি কি আমদানি আজ বন্ধ করে দেবে? এটা কখনোই আমদানি বন্ধ করবে না। বিপিসির আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা কনফার্ম করা আছে।’ আগামী এক থেকে দুই দিনের ভেতর আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন, সেই সঙ্গে দুই দিনের ভেতর ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলের একটি চালান আসছে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জুলাই মাসে ৯টি জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ২টি জাহাজে প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিকটন জেট-এ-১, একটি জাহাজ থেকে ২৪ হাজার ৬৭৭ মেট্রিক টন অকটেন এবং ২টি জাহাজ থেকে ৫৩ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন ফার্নেস ওয়েল গ্রহণ করা হয়েছে।

আগস্টে ৮টি জাহাজে ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, একটি জাহাজে ২৫ হাজার মেট্রিক টন জেট-এ-১, একটি জাহাজে ২৫ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আসবে।

মন্ত্রণালয় বলছে, এভাবে আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনানুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জ্বালানি তেল বাংলাদেশে আসবে। এর ৫০ ভাগ জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ ভাগ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে। তাই ঘাটতি হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২ , ১৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

৬ মাসের জ্বালানি তেলের জোগান নিশ্চিত আছে : বিপিসি

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

দেশে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনের কোন সংকট নেই জানিয়ে সরকার বলছে, আগামী ছয় মাসের জ্বালানি তেলের আমদানি নিশ্চিত করা আছে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

দেশে ডিজেলের মজুদ কমে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। যানবাহনের জ্বালানি পেট্রল ও অকটেনের মজুদও কমে গেছে। গত কয়েকদিন একাধিক গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে এ ধরনের খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। রাজধানীর কিছু পেট্রল পাম্প যানবাহনে তেল দেয়া সীমিত করেছে বলেও খবরে বলা হয়। এই প্রেক্ষাপটে কোন প্রকার জ্বালানি তেল কি পরিমাণ মজুদ আছে এবং দেশে চাহিদার বিপরীতে তা কতদিন যোগান দেয়া যাবে এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। গতকাল জ্বালানি বিভাগ জানায়, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোন ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোন আশঙ্কাও নেই। ইতোমধ্যে আগামী ৬ মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া ‘পাইপলাইনে’ আছে।

একই কথা বলেছেন জ্বালানি তেল আমদানি ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ। আগামী ছয় মাসের তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি শিডিউল করা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেল রয়েছে এবং আমদানির পথে রয়েছে, তাতে ছয় মাসের জ্বালানি নিশ্চিত রয়েছে। আর কোন তেল আমদানি না করলেও দেশে ৩২ দিনের ডিজেল ও ৪৪ দিনের ফার্নেস অয়েল মজুদ রয়েছে।’ এর বাইরে ৪৪ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বি এম আজাদ বলেন, পেট্রল পাম্পগুলোয় গ্রাহকদের কম তেল দেয়ার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যারা নিজ থেকে এরকম নোটিশ দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয়। তবে পেট্রলের চাহিদার পুরোটাই এবং অকটেনের প্রায় ৪০ ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়।

দেশে প্রতিদিন ডিজেলের চাহিদা ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন। আমদানি করা ডিজেলের বড় অংশ পরিবহন খাত এবং কৃষিকাজে সেচের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিছু অংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। উচ্চমূল্যে ডিজেল কিনে কম দামে বিক্রির কারণে প্রতি বছরই বিপুল ভর্তুকি গুনতে হয় সরকারকে।

সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় জ্বালানি তেলের ব্যবহারে ও আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাংলাদেশ। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত করা হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং চালু করে সরকার। ভথর্তুকি মূল্যে সরবরাহকৃত জ্বালানি তেল ব্যবহারে মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হতে ভোক্তা পর্যায়ে অনুরোধও জানায় সরকার।

তবে জ্বালানি তেলের আমদানি, মজুদ করা, সরবরাহ করার প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিকভাবে চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী ছয় মাস এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চলবে। যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে, তা নিয়ে আশঙ্কা করার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।’

বিপিসির চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে দেশে ডিজেল ৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন, অকটেন ১২ হাজার ২৩৮ মেট্রিক টন, পেট্রল ২১ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন, জেট ফুয়েল ৬২ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন এবং ফার্নেস অয়েল ৮৫ হাজার ৪১ মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি ধরে নেই, বিপিসি আর তেল আমদানি করলো না, তাহলে ডিজেল দিয়ে চলবে ৩২ দিন, অকটেন দিয়ে ৯ দিন, পেট্রল দিয়ে ১৫ দিন, জেট ফুয়েল দিয়ে ৪৪ দিন আর ফার্নেস অয়েল দিয়ে চলবে ৪৪ দিন। কিন্তু বিপিসি কি আমদানি আজ বন্ধ করে দেবে? এটা কখনোই আমদানি বন্ধ করবে না। বিপিসির আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা কনফার্ম করা আছে।’ আগামী এক থেকে দুই দিনের ভেতর আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন, সেই সঙ্গে দুই দিনের ভেতর ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলের একটি চালান আসছে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জুলাই মাসে ৯টি জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ২টি জাহাজে প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিকটন জেট-এ-১, একটি জাহাজ থেকে ২৪ হাজার ৬৭৭ মেট্রিক টন অকটেন এবং ২টি জাহাজ থেকে ৫৩ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন ফার্নেস ওয়েল গ্রহণ করা হয়েছে।

আগস্টে ৮টি জাহাজে ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, একটি জাহাজে ২৫ হাজার মেট্রিক টন জেট-এ-১, একটি জাহাজে ২৫ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আসবে।

মন্ত্রণালয় বলছে, এভাবে আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনানুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জ্বালানি তেল বাংলাদেশে আসবে। এর ৫০ ভাগ জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ ভাগ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে। তাই ঘাটতি হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই।