যশোরের নওয়াপাড়া উপকর কমিশনার কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীর নাম মোজাম্মেল হক। অফিসের বাইরে নওয়াপাড়া শহরে তিনি নিজস্ব দুটি চেম্বারে বসে কর ফাইল দেখেন। ট্যাক্স ফাঁকির নয়-ছয় কাগজপত্র তৈরি করেন। দুই হাত ভরে করেন অর্থ উপার্জন। রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন মোজাম্মেল। নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদ। কর ফাঁকির পথ দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে হয়েছেন আস্থাভাজন। এখন অনেকে তাকে বড় কর্মকর্তা বলেও জানেন। যশোর ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন নেতারা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে খুলনা অঞ্চলের কর কমিশনারকে দুই বার পত্র দিয়েছেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী বলেন, ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী কর মামলায় প্রতিনিধিত্ব করার সুনির্দিষ্ট বিধান আছে। কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী কিভাবে শত শত করদাতার প্রতিনিধিত্ব করেন বোধগম্য নয়। তার বিষয়ে দুই দফা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও রহস্যজনক কারণে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
নিরাপত্তাকর্মী মোজাম্মেল হকের অনিয়ম অনুসন্ধানে গত রোববার উপকর কমিশনার সার্কেল-১১ নওয়াপাড়া কার্যালয়ে যান প্রতিবেদক। দেখা যায় অফিসটি ঘিরে মোজাম্মেল হক গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যখন যে কর্মকর্তা আসেন, তিনি অবৈধ রোজগারের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন মোজাম্মেলকে। এর ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হলেও কোটিপতি বনে যান ঘুষবাণিজ্যের চক্রটি। কর্মকর্তার বাইরেও অসাধু কিছু কর্মচারী সিন্ডিকেটকে করে তুলেছেন শক্তিশালী। কর্মকর্তা আসেন, যান। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙে না। নিরাপত্তাকর্র্মী মোজাম্মেল দিনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। অডিট না করার নিশ্চয়তা ও রাজস্ব কমিয়ে দেয়ার শর্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নেন চুক্তির টাকা।
অফিস কার্যালয়ে কথা হয় অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার রেবেকা খানম ও সুপার আল ইমরানের সঙ্গে। রেবেকা খানম বলেন, প্রায়ই মানুষ ফোন করে জানতে চান ‘মোজাম্মেল হক সাহেব’ আছেন। সে কর্মকর্তা নামেই পরিচিতি পেয়েছে। এতে আমি তিক্ত-বিরক্ত হয়ে আছি। আমার নাম বিক্রি করে যারা খাচ্ছে আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।
এ সময় সুপারভাইজার আল ইমরান বলেন, এ রকম মোজাম্মেল, সব কর কমিশনার কার্যালয়ে আছে। এতে অফিসের বদনাম হচ্ছে। হঠাৎই অফিসে প্রবেশ করেন নিরাপত্তাকর্মী মোজাম্মেল হক। তিনি সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, স্যার আপনিই (রেবেকা খানম) বলেন, আমি কী এসব করি?
এ সময় রেবেকা বলেন, আমি তাকে দিয়ে চিঠিপত্র পাঠাই কর কমিশনারের কার্যালয়ে। এর বাইরে আর কিছু জানি না। এ সময় আরও কিছু বলতে চান তিনি। কিন্তু আল ইমরানের চোখের ইশারায় বন্ধ হয়ে যায় কর্মকর্তার মুখ।
এক পর্যায়ে মোজাম্মেল হক বলেন, আমার দুটো বাড়ি আছে। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় বানিয়েছি। আমার মায়ের ৩০ বিঘা ও বাবার ৭ বিঘা জমি আছে। এর আগে মণিরামপুর উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বিপ্রকোনা গ্রামে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে যান প্রতিবেদক। সেখানে কথা হয় তার বৃদ্ধ মা রিজিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের মাঠে দুই বিঘা জমি আছে। দুই ছেলে নওয়াপাড়ায় চাকরি করে। তারা আমার জন্য একতলা বাড়িটি বানিয়ে দিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী গ্রামের বাড়িতেই থাকি। এ সময় মোজাম্মেল হকের চাচাতো ভাই ষাটোর্ধ্ব হযরত আলী বলেন, তারা নওয়াপাড়ায় থাকেন। শুনেছি চাকরি করে।
বিপ্রকোনা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, শুনেছি ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চাকরি করেন মোজাম্মেল। তারা দুই ভাই নওয়াপাড়াতেই থাকেন। গ্রামে খুব কম আসেন। গত ঈদে নিজস্ব প্রাইভেটকারে (ঢাকা মেট্র-ক ১১-৩৩৮৯) বাড়িতে এসেছিলেন।
এদিকে তার অফিসে সরেজমিন গেলে ভিন্ন তথ্য দেন মোজাম্মেল হক। দাবি করেন মা-বাবা মিলে দু’জনের ৩৭ বিঘা জমি আছে। ওই জমি বিক্রির টাকায় বাড়ি বানিয়েছি। ভাই গাওসুল আজম নিজে নওয়াপাড়ায় বাড়ি বানিয়ে আলাদা থাকেন। অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার কিছু জানা নেই। শুনেছি নওয়াপাড়ায় বাড়ি বানিয়েছেন। অফিসের একাধিক সূত্রের দাবি, অফিসের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এই টাকার ভাগ পৌঁছে যায় ঊর্ধ্বতন কর কমিশনারসহ কর্মকর্তাদের পকেটেও।
বিভিন্ন মহলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদক যান নওয়াপাড়ার কদমতলায়। সেখানে দেখা যায় চার শতক জমির ওপর মোজাম্মেল হক বানিয়েছেন পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের একতলা বাড়ি। বাড়িতে রয়েছে একটি চেম্বার। বাড়ির দুই পাশে তাক করে আছে সিসি ক্যামেরা। এ সময় কথা হয় জমি বিক্রেতা আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, চার বছর আগে জমি বিক্রি করেছিলাম এক লাখ ২০ হাজার টাকা শতক। এখন দাম বেড়ে গেছে।
কদমতলার মুদি দোকানি ইদ্রিস আলী জানান, তার দোকানের পাশেই আরও একটি জমি আছে মোজাম্মেল হকের। শুনেছি তার মায়ের নামে কিনেছেন। পাশেই মোজাম্মেল হকের ভাই গওসুল আযমের বাড়ি। সেখানে রয়েছে আরও একটি চেম্বার। দিন-রাত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসা-যাওয়া করেন। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে একটি প্রাইভেটকার চালিয়ে বেড়াচ্ছেন মোজাম্মেল হক।
কদমতলার বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কদমতলায় নিজ বাড়ির সঙ্গে একটি ও মেইন রাস্তার সঙ্গে আরও একটি অফিস রয়েছে তাদের। প্রায়ই রাতে মোজাম্মেল ও তার ভাই গওসুল আযমকে দিন-রাত সব সময় চেম্বারে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসা-যাওয়া করেন। দুই ভাই মিলে ট্যাক্স ফাঁকির নয়-ছয় কাগজপত্র তৈরি করেন। দুই হাত ভরে অবৈধ আয়-রোজগারের অভিযোগের কথাও শোনা যায়।
দাপুটে মোজাম্মেল হক ও তার ভাই গওসুল আযমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আয়কর আইনজীবীরা। তার বিরদ্ধে অভিযোগ করে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ও ২০২২ সালের ১৯ জুন দুই দফায় খুলনার কর কমিশনারের কাছে চিঠি দেন ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন যশোরের নেতারা। অনুলিপি পাঠানো হয়েছিল নওয়াপাড়ার কার্যালয়েও। কিন্তু আজ অবধি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানতে চাইলে নওয়াপাড়ার অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার রেবেকা খানম জানান, ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তার কি করার আছে।
বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২ , ১৩ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩
যশোর অফিস
যশোরের নওয়াপাড়া উপকর কমিশনার কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীর নাম মোজাম্মেল হক। অফিসের বাইরে নওয়াপাড়া শহরে তিনি নিজস্ব দুটি চেম্বারে বসে কর ফাইল দেখেন। ট্যাক্স ফাঁকির নয়-ছয় কাগজপত্র তৈরি করেন। দুই হাত ভরে করেন অর্থ উপার্জন। রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন মোজাম্মেল। নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদ। কর ফাঁকির পথ দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে হয়েছেন আস্থাভাজন। এখন অনেকে তাকে বড় কর্মকর্তা বলেও জানেন। যশোর ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন নেতারা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে খুলনা অঞ্চলের কর কমিশনারকে দুই বার পত্র দিয়েছেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী বলেন, ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী কর মামলায় প্রতিনিধিত্ব করার সুনির্দিষ্ট বিধান আছে। কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী কিভাবে শত শত করদাতার প্রতিনিধিত্ব করেন বোধগম্য নয়। তার বিষয়ে দুই দফা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও রহস্যজনক কারণে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
নিরাপত্তাকর্মী মোজাম্মেল হকের অনিয়ম অনুসন্ধানে গত রোববার উপকর কমিশনার সার্কেল-১১ নওয়াপাড়া কার্যালয়ে যান প্রতিবেদক। দেখা যায় অফিসটি ঘিরে মোজাম্মেল হক গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যখন যে কর্মকর্তা আসেন, তিনি অবৈধ রোজগারের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন মোজাম্মেলকে। এর ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হলেও কোটিপতি বনে যান ঘুষবাণিজ্যের চক্রটি। কর্মকর্তার বাইরেও অসাধু কিছু কর্মচারী সিন্ডিকেটকে করে তুলেছেন শক্তিশালী। কর্মকর্তা আসেন, যান। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙে না। নিরাপত্তাকর্র্মী মোজাম্মেল দিনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। অডিট না করার নিশ্চয়তা ও রাজস্ব কমিয়ে দেয়ার শর্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নেন চুক্তির টাকা।
অফিস কার্যালয়ে কথা হয় অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার রেবেকা খানম ও সুপার আল ইমরানের সঙ্গে। রেবেকা খানম বলেন, প্রায়ই মানুষ ফোন করে জানতে চান ‘মোজাম্মেল হক সাহেব’ আছেন। সে কর্মকর্তা নামেই পরিচিতি পেয়েছে। এতে আমি তিক্ত-বিরক্ত হয়ে আছি। আমার নাম বিক্রি করে যারা খাচ্ছে আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।
এ সময় সুপারভাইজার আল ইমরান বলেন, এ রকম মোজাম্মেল, সব কর কমিশনার কার্যালয়ে আছে। এতে অফিসের বদনাম হচ্ছে। হঠাৎই অফিসে প্রবেশ করেন নিরাপত্তাকর্মী মোজাম্মেল হক। তিনি সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, স্যার আপনিই (রেবেকা খানম) বলেন, আমি কী এসব করি?
এ সময় রেবেকা বলেন, আমি তাকে দিয়ে চিঠিপত্র পাঠাই কর কমিশনারের কার্যালয়ে। এর বাইরে আর কিছু জানি না। এ সময় আরও কিছু বলতে চান তিনি। কিন্তু আল ইমরানের চোখের ইশারায় বন্ধ হয়ে যায় কর্মকর্তার মুখ।
এক পর্যায়ে মোজাম্মেল হক বলেন, আমার দুটো বাড়ি আছে। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় বানিয়েছি। আমার মায়ের ৩০ বিঘা ও বাবার ৭ বিঘা জমি আছে। এর আগে মণিরামপুর উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বিপ্রকোনা গ্রামে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে যান প্রতিবেদক। সেখানে কথা হয় তার বৃদ্ধ মা রিজিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের মাঠে দুই বিঘা জমি আছে। দুই ছেলে নওয়াপাড়ায় চাকরি করে। তারা আমার জন্য একতলা বাড়িটি বানিয়ে দিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী গ্রামের বাড়িতেই থাকি। এ সময় মোজাম্মেল হকের চাচাতো ভাই ষাটোর্ধ্ব হযরত আলী বলেন, তারা নওয়াপাড়ায় থাকেন। শুনেছি চাকরি করে।
বিপ্রকোনা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, শুনেছি ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চাকরি করেন মোজাম্মেল। তারা দুই ভাই নওয়াপাড়াতেই থাকেন। গ্রামে খুব কম আসেন। গত ঈদে নিজস্ব প্রাইভেটকারে (ঢাকা মেট্র-ক ১১-৩৩৮৯) বাড়িতে এসেছিলেন।
এদিকে তার অফিসে সরেজমিন গেলে ভিন্ন তথ্য দেন মোজাম্মেল হক। দাবি করেন মা-বাবা মিলে দু’জনের ৩৭ বিঘা জমি আছে। ওই জমি বিক্রির টাকায় বাড়ি বানিয়েছি। ভাই গাওসুল আজম নিজে নওয়াপাড়ায় বাড়ি বানিয়ে আলাদা থাকেন। অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার কিছু জানা নেই। শুনেছি নওয়াপাড়ায় বাড়ি বানিয়েছেন। অফিসের একাধিক সূত্রের দাবি, অফিসের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এই টাকার ভাগ পৌঁছে যায় ঊর্ধ্বতন কর কমিশনারসহ কর্মকর্তাদের পকেটেও।
বিভিন্ন মহলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদক যান নওয়াপাড়ার কদমতলায়। সেখানে দেখা যায় চার শতক জমির ওপর মোজাম্মেল হক বানিয়েছেন পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের একতলা বাড়ি। বাড়িতে রয়েছে একটি চেম্বার। বাড়ির দুই পাশে তাক করে আছে সিসি ক্যামেরা। এ সময় কথা হয় জমি বিক্রেতা আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, চার বছর আগে জমি বিক্রি করেছিলাম এক লাখ ২০ হাজার টাকা শতক। এখন দাম বেড়ে গেছে।
কদমতলার মুদি দোকানি ইদ্রিস আলী জানান, তার দোকানের পাশেই আরও একটি জমি আছে মোজাম্মেল হকের। শুনেছি তার মায়ের নামে কিনেছেন। পাশেই মোজাম্মেল হকের ভাই গওসুল আযমের বাড়ি। সেখানে রয়েছে আরও একটি চেম্বার। দিন-রাত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসা-যাওয়া করেন। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে একটি প্রাইভেটকার চালিয়ে বেড়াচ্ছেন মোজাম্মেল হক।
কদমতলার বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কদমতলায় নিজ বাড়ির সঙ্গে একটি ও মেইন রাস্তার সঙ্গে আরও একটি অফিস রয়েছে তাদের। প্রায়ই রাতে মোজাম্মেল ও তার ভাই গওসুল আযমকে দিন-রাত সব সময় চেম্বারে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসা-যাওয়া করেন। দুই ভাই মিলে ট্যাক্স ফাঁকির নয়-ছয় কাগজপত্র তৈরি করেন। দুই হাত ভরে অবৈধ আয়-রোজগারের অভিযোগের কথাও শোনা যায়।
দাপুটে মোজাম্মেল হক ও তার ভাই গওসুল আযমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আয়কর আইনজীবীরা। তার বিরদ্ধে অভিযোগ করে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ও ২০২২ সালের ১৯ জুন দুই দফায় খুলনার কর কমিশনারের কাছে চিঠি দেন ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন যশোরের নেতারা। অনুলিপি পাঠানো হয়েছিল নওয়াপাড়ার কার্যালয়েও। কিন্তু আজ অবধি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানতে চাইলে নওয়াপাড়ার অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার রেবেকা খানম জানান, ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তার কি করার আছে।