প্রশাসন কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে

প্রশিক্ষণের ঘাটতি ও পদায়নে দলপ্রীতির কারণে সরকারের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়মিত বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

কোন কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সঙ্গে প্রায় বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও ডিসিদের বিরুদ্ধে-এই ধরনের অভিযোগ বেশি উঠছে। কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা ও স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টানতে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি ঘটছে না।

সরকারি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কর্মকর্তাদের ‘প্রশিক্ষণ ঘাটতি’র ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মাঠ প্রশাসনের অন্তত চারজন কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন অংশীজনের নানা রকম ‘অযাচিত’ তদবির ও আবদার সামলাতে হয়। এগুলো নিয়েই বেশি সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব ভাগিয়ে নেয়। এভাবে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ বেশি উঠে বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলায় ইউএনওরা কর্মরত আছেন। তাদের সবাই খারাপ নয়, তারা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, দায়িত্বপালন করছেন। দু-একজনের আচার-আচরণ নিয়ে অভিযোগ আসছে; সেই অনুযায়ী তারা শাস্তিও পাচ্ছেন। এর মধ্যে গত তিন-চার বছরের ঘটনা যদি ধরি, এই ইউএনও’র (টেকনাফ) একটি ঘটনা, আর কুড়িগ্রামের ডিসির একটি ঘটনা। এটি হলো ওই ব্যক্তি...ব্যক্তিগত রাখ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে ওই সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিভিল সার্ভিসে যোগদানের সময় ওইসব বিষয়ে বলা হয়...ব্যক্তিগত রাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করা যাবে না।’

কর্মকর্তাদের কাছে সেবাপ্রত্যাশীরা কেন নাজেহাল হচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। মাঠ প্রশাসনের পদায়নের পর কর্মকর্তাদের পর সেই বিষয়টিও কিন্তু বারবার বলা হয়, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অর্থাৎ জনগণের সঙ্গেই ইউএনও, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হয়। এখানে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণের সুযোগ নেই।’

এই ধরনের ঘটনা এড়াতে সাবেক এই সচিব বলেন, ‘প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। তারা কীভাবে দায়িত্বপালন করছেন সেটিও ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারতের মনিটরিং করা প্রয়োজন। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নানা রকম দায়িত্বপালন করতে হয়। সারাক্ষণই তাদের চাপ মোকাবিলা করতে হয়।’

বর্তমানে ৫৪১ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৯২টি উপজেলায় একজন করে এবং বাকিরা বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়গুলোতে কর্মরত আছেন। ইউএনও ছাড়া মাঠ প্রশাসনের সব উপজেলায় প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার (ভূমি বা এসিল্যান্ড)..... কর্মকর্তা রয়েছেন।

একটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফের ইউএনও কায়সার খসরু স্থানীয় এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ ঘটনায় ইউএনও সর্ম্পকে উচ্চ আদালতের এক বিচারপতি বলেন, ‘কোন রং হেডেড পার্সন ছাড়া এমনভাবে বলতে পারে না।’

ইউএনও কায়সার খসরু সর্ম্পকে গত ২৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ইউএনওদের প্রশিক্ষণে কোন দুর্বলতা বা ঘাটতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২৪ জুলাই বিভাগীয় কমিশনারদের সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘খুব জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা যে সমস্ত জেলায় যাবেন, সেখানকার সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে তাদের আচার ব্যবহার কেমন হবে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।’

এর আগে ২৭ এপ্রিল ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের দুই কর্মচারী একটি দেওয়ানি মামলার সমন নোটিশ জারি করতে বোয়ালমারীর ইউএনও’র কার্যালয়ে যান। তখন ইউএনও রেজাউল করিম তার সহকর্মীদের নিয়ে জজ আদালতের কর্মচারীদের আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মুচলেকা নেন।

এ ঘটনার পর ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ইউএনওকে শো-কজ করার পরও তিনি হাজির হননি। পরে হাইকোর্ট তলব করলে গত ২১ জুন আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ইউএনও ও নাজির। এরপর গত ২৫ জুলাই ইউএনও রেজাউল করিমকে সতর্ক করে ক্ষমা করে হাইকোর্ট।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত দশ বছরে প্রশাসনের প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জমা হয়েছে। এ হিসাবে বছরে তিনশ’ এবং মাসে অন্তত ২৫টি অভিযোগ জমা হচ্ছে।

বিভিন্ন অভিযোগে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচশ’র মতো বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। এগুলোতে একশ’র মতো কর্মকর্তাকে গুরুদন্ড ও লঘুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি বা চাকরিচ্যুতির নজির একেবারেই কম।

২০২১ সালে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচিত কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে ‘লঘুদন্ড’ দিয়েছে সরকার। তার দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। এরপর এ বছর সুলতানাকে যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতিও দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী বিভাগের একজন ইউএনও সংবাদকে বলেন, বেশি সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় খাস জমি নিয়ে। স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিদের অনেকেই খাস জমি দখলে নিতে চান। এগুলো ঠেকাতে গেলেই প্রতিবন্ধকতা আসে। আবার না ঠেকাতে গেলে সরকারি চাকরিও ঝুঁকিতে পড়ে।

ময়মনসিংহ বিভাগের একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, একটি খাস জমি নিয়ে সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির মধ্যে বিরোধ বাধে। দু’জন নিজেদের স্বজনদের নামে ওই জমির নাম জারি করতে চান। ওই চাপ সামলাতে না পেরে ওই কর্মকর্তাই বদলি হয়ে যান।

চট্টগ্রাম বিভাগের একজন ইউএনও নাম প্রকাশ না করে সংবাদকে বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ নিয়ে এক জনপ্রতিনিধি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগপত্র দেয়। এতে ইউএনওকে বদলি করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, জনপ্রতিনিধির অভিযোগ ভিত্তিহীন।

শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২ , ১৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

সুযোগ-সুবিধা বাড়া সত্ত্বেও

প্রশাসন কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে

রাকিব উদ্দিন

প্রশিক্ষণের ঘাটতি ও পদায়নে দলপ্রীতির কারণে সরকারের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়মিত বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

কোন কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সঙ্গে প্রায় বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও ডিসিদের বিরুদ্ধে-এই ধরনের অভিযোগ বেশি উঠছে। কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা ও স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টানতে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি ঘটছে না।

সরকারি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কর্মকর্তাদের ‘প্রশিক্ষণ ঘাটতি’র ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মাঠ প্রশাসনের অন্তত চারজন কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন অংশীজনের নানা রকম ‘অযাচিত’ তদবির ও আবদার সামলাতে হয়। এগুলো নিয়েই বেশি সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব ভাগিয়ে নেয়। এভাবে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ বেশি উঠে বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলায় ইউএনওরা কর্মরত আছেন। তাদের সবাই খারাপ নয়, তারা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, দায়িত্বপালন করছেন। দু-একজনের আচার-আচরণ নিয়ে অভিযোগ আসছে; সেই অনুযায়ী তারা শাস্তিও পাচ্ছেন। এর মধ্যে গত তিন-চার বছরের ঘটনা যদি ধরি, এই ইউএনও’র (টেকনাফ) একটি ঘটনা, আর কুড়িগ্রামের ডিসির একটি ঘটনা। এটি হলো ওই ব্যক্তি...ব্যক্তিগত রাখ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে ওই সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিভিল সার্ভিসে যোগদানের সময় ওইসব বিষয়ে বলা হয়...ব্যক্তিগত রাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করা যাবে না।’

কর্মকর্তাদের কাছে সেবাপ্রত্যাশীরা কেন নাজেহাল হচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। মাঠ প্রশাসনের পদায়নের পর কর্মকর্তাদের পর সেই বিষয়টিও কিন্তু বারবার বলা হয়, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অর্থাৎ জনগণের সঙ্গেই ইউএনও, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হয়। এখানে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণের সুযোগ নেই।’

এই ধরনের ঘটনা এড়াতে সাবেক এই সচিব বলেন, ‘প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। তারা কীভাবে দায়িত্বপালন করছেন সেটিও ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারতের মনিটরিং করা প্রয়োজন। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নানা রকম দায়িত্বপালন করতে হয়। সারাক্ষণই তাদের চাপ মোকাবিলা করতে হয়।’

বর্তমানে ৫৪১ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৯২টি উপজেলায় একজন করে এবং বাকিরা বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়গুলোতে কর্মরত আছেন। ইউএনও ছাড়া মাঠ প্রশাসনের সব উপজেলায় প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার (ভূমি বা এসিল্যান্ড)..... কর্মকর্তা রয়েছেন।

একটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফের ইউএনও কায়সার খসরু স্থানীয় এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ ঘটনায় ইউএনও সর্ম্পকে উচ্চ আদালতের এক বিচারপতি বলেন, ‘কোন রং হেডেড পার্সন ছাড়া এমনভাবে বলতে পারে না।’

ইউএনও কায়সার খসরু সর্ম্পকে গত ২৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ইউএনওদের প্রশিক্ষণে কোন দুর্বলতা বা ঘাটতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২৪ জুলাই বিভাগীয় কমিশনারদের সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘খুব জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তারা যে সমস্ত জেলায় যাবেন, সেখানকার সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে তাদের আচার ব্যবহার কেমন হবে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।’

এর আগে ২৭ এপ্রিল ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের দুই কর্মচারী একটি দেওয়ানি মামলার সমন নোটিশ জারি করতে বোয়ালমারীর ইউএনও’র কার্যালয়ে যান। তখন ইউএনও রেজাউল করিম তার সহকর্মীদের নিয়ে জজ আদালতের কর্মচারীদের আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মুচলেকা নেন।

এ ঘটনার পর ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ইউএনওকে শো-কজ করার পরও তিনি হাজির হননি। পরে হাইকোর্ট তলব করলে গত ২১ জুন আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ইউএনও ও নাজির। এরপর গত ২৫ জুলাই ইউএনও রেজাউল করিমকে সতর্ক করে ক্ষমা করে হাইকোর্ট।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত দশ বছরে প্রশাসনের প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জমা হয়েছে। এ হিসাবে বছরে তিনশ’ এবং মাসে অন্তত ২৫টি অভিযোগ জমা হচ্ছে।

বিভিন্ন অভিযোগে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচশ’র মতো বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। এগুলোতে একশ’র মতো কর্মকর্তাকে গুরুদন্ড ও লঘুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি বা চাকরিচ্যুতির নজির একেবারেই কম।

২০২১ সালে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচিত কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে ‘লঘুদন্ড’ দিয়েছে সরকার। তার দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। এরপর এ বছর সুলতানাকে যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতিও দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী বিভাগের একজন ইউএনও সংবাদকে বলেন, বেশি সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় খাস জমি নিয়ে। স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিদের অনেকেই খাস জমি দখলে নিতে চান। এগুলো ঠেকাতে গেলেই প্রতিবন্ধকতা আসে। আবার না ঠেকাতে গেলে সরকারি চাকরিও ঝুঁকিতে পড়ে।

ময়মনসিংহ বিভাগের একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, একটি খাস জমি নিয়ে সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির মধ্যে বিরোধ বাধে। দু’জন নিজেদের স্বজনদের নামে ওই জমির নাম জারি করতে চান। ওই চাপ সামলাতে না পেরে ওই কর্মকর্তাই বদলি হয়ে যান।

চট্টগ্রাম বিভাগের একজন ইউএনও নাম প্রকাশ না করে সংবাদকে বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ নিয়ে এক জনপ্রতিনিধি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগপত্র দেয়। এতে ইউএনওকে বদলি করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, জনপ্রতিনিধির অভিযোগ ভিত্তিহীন।