৩০ জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নেই ২৮টিতেই

আইন অনুযায়ী প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায় থাকলেও তাদের কোন অবদান নেই। এদিকে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অবকাঠামো থাকলেও চরম জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক গবেষণায় এসব চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হামিদ এই গবেষণা উপস্থাপন করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাদে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোন অবদান নেই। এমনকি কর্মক্ষেত্রগুলোতে দায়িত্বরত কর্মচারীরাও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত নন।

সুপারিশে বলা হয়েছে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বিত উদ্যোগ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

জেলার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেকটা জেলা ও উপজেলায় একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তবে জনবল সংকটে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশের ৩০ জেলার মধ্যে ২৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নেই। দুটি জেলাতে থাকলেও চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তবে এই কেন্দ্রগুলোতে চরম জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। ৩০ জেলার মধ্যে মাত্র দুটি জেলা ছাড়া বাকি কোনটিতেই মেডিকেল অফিসার নেই। ভালো সুযোগ পেলে তাদেরও চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫০টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় কোন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে না। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও বাস্তবায়ন হয় না। এসব উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডিং কমিটির কোন মিটিংও অনুষ্ঠিত হয় না। যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার এই মিটিং হওয়ার কথা। এসব এলাকায় গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে (প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি) তাদের কোন কার্যক্রম নেই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য মানেই শুধু রোগ আর হাসপাতাল নয়। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। শারীরিক, মানসিকসহ সব স্বাস্থ্যকেই বুঝায়। করোনায় অসংখ্য মানুষ ডিপ্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সেক্ষেত্রে শুধু করোনার চিকিৎসাতেই স্বাস্থ্যসেবা সীমাবদ্ধ নয়। মেন্টাল হেলথের বিষয়টাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। করোনাপরবর্তী নানা জটিলতাকেও সামনে নিয়ে আসতে হবে। এটিও কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু স্থাপনা করে দিলাম, আর কিছু জনবল দিয়ে দিলাম, তাহলেই কিন্তু শেষ নয়। দক্ষ জনবলের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’ উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ নিউট্রিশন সার্ভিসে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগে অসংখ্য মানুষ রাতকানা রোগে ভুগতো, কিন্তু এখন সেই হার অনেক কমে এসেছে। পুষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে পাচ্ছে তা জানতেই এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাটি করতে দেশের ১২৮টি সংস্থা ও ৩ হাজার ৪২০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২ , ১৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবা

৩০ জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নেই ২৮টিতেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আইন অনুযায়ী প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায় থাকলেও তাদের কোন অবদান নেই। এদিকে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অবকাঠামো থাকলেও চরম জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক গবেষণায় এসব চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হামিদ এই গবেষণা উপস্থাপন করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাদে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোন অবদান নেই। এমনকি কর্মক্ষেত্রগুলোতে দায়িত্বরত কর্মচারীরাও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত নন।

সুপারিশে বলা হয়েছে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বিত উদ্যোগ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

জেলার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্যেকটা জেলা ও উপজেলায় একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তবে জনবল সংকটে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশের ৩০ জেলার মধ্যে ২৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নেই। দুটি জেলাতে থাকলেও চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আবদুল হামিদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তবে এই কেন্দ্রগুলোতে চরম জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। ৩০ জেলার মধ্যে মাত্র দুটি জেলা ছাড়া বাকি কোনটিতেই মেডিকেল অফিসার নেই। ভালো সুযোগ পেলে তাদেরও চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫০টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় কোন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে না। এমনকি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও বাস্তবায়ন হয় না। এসব উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডিং কমিটির কোন মিটিংও অনুষ্ঠিত হয় না। যদিও নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার এই মিটিং হওয়ার কথা। এসব এলাকায় গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে (প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি) তাদের কোন কার্যক্রম নেই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য মানেই শুধু রোগ আর হাসপাতাল নয়। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। শারীরিক, মানসিকসহ সব স্বাস্থ্যকেই বুঝায়। করোনায় অসংখ্য মানুষ ডিপ্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সেক্ষেত্রে শুধু করোনার চিকিৎসাতেই স্বাস্থ্যসেবা সীমাবদ্ধ নয়। মেন্টাল হেলথের বিষয়টাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। করোনাপরবর্তী নানা জটিলতাকেও সামনে নিয়ে আসতে হবে। এটিও কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু স্থাপনা করে দিলাম, আর কিছু জনবল দিয়ে দিলাম, তাহলেই কিন্তু শেষ নয়। দক্ষ জনবলের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’ উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ নিউট্রিশন সার্ভিসে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগে অসংখ্য মানুষ রাতকানা রোগে ভুগতো, কিন্তু এখন সেই হার অনেক কমে এসেছে। পুষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে পাচ্ছে তা জানতেই এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণাটি করতে দেশের ১২৮টি সংস্থা ও ৩ হাজার ৪২০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।