ব্যাংকে জাল টাকা : চাকরিচ্যুত পুলিশ-অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা (চাকরিচ্যুত) মো. হুমায়ুন কবির। সহযোগীদের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন তিনি। আবার ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন। প্রতি এক লাখ জাল টাকার বিনিময়ে কারখানার মালিক হুমায়ুন পেতেন ১০ হাজার টাকা। আসন্ন দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে মাসে ৬০ লাখ টাকা রোলিং করার টার্গেটে এখন থেকেই কাজ শুরু করেছিল চক্রটি। জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ চক্রের মূলহোতা মো. হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। যারা ব্যাংকে টাকা লেনদেন করেন তাদের ভালো করে চেক করে মেশিনে যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ১৬ লাখ জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি লেমিনেশন মেশিন, একটি পেস্টিং গামের কৌটা, তিনটি টাকা তৈরির ডাইস, দুই বান্ডেল ফয়েল পেপার, দুই প্যাকেট টাকা তৈরির কাগজ ও দুইটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

কোন কোন ব্যাংকে জাল টাকা দিয়েছে চক্রটি এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান ব্যাংকগুলোর নাম জানাননি। এই অবৈধ কাজে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, কোন একসময় তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। এখন তিনি জাল টাকা তৈরি করছেন। তাই বলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ছাড় দিচ্ছে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনবো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন জানিয়েছেন, তারা জাল টাকা পাচারও করত। হুমায়ুন কবির মোহাম্মদপুরে ভাড়া নেয়া বাসায় জাল টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। তার অন্যান্য সহযোগী পলাতক। তারা হলো- ইমাম হোসেন (৩০), মো. আলাউদ্দিন (৩৫), মো. সাইফুল (৩০), মো. মজিবর (৩২) ও আলাউদ্দিন (৪২)। তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল টাকা প্রস্তুত এবং বিপণন করে আসছিল। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামির পিসিপিআর যাচাই করে জানা যায় তার বিরুদ্ধে এর আগেও ৪টি জাল টাকার মামলা রয়েছে। অনেক দিন থেকেই তারা এই ব্যবসা করে আসছে। প্রতি মাসে ৬০ লাখ জাল টাকা তারা তৈরি করে। সারা দেশে ৪/৫টা নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের মাধ্যমে এই নকল টাকা তারা ছড়িয়ে থাকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন জানিয়েছেন, তারা জাল টাকা পাচারও করতেন। তাদের এই পাচারের সত্যতা আছে কি-না সেটিও যাচাই-বাছাই চলছে।

শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২ , ১৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

ব্যাংকে জাল টাকা : চাকরিচ্যুত পুলিশ-অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা (চাকরিচ্যুত) মো. হুমায়ুন কবির। সহযোগীদের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন তিনি। আবার ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন। প্রতি এক লাখ জাল টাকার বিনিময়ে কারখানার মালিক হুমায়ুন পেতেন ১০ হাজার টাকা। আসন্ন দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে মাসে ৬০ লাখ টাকা রোলিং করার টার্গেটে এখন থেকেই কাজ শুরু করেছিল চক্রটি। জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ চক্রের মূলহোতা মো. হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। যারা ব্যাংকে টাকা লেনদেন করেন তাদের ভালো করে চেক করে মেশিনে যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ১৬ লাখ জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি লেমিনেশন মেশিন, একটি পেস্টিং গামের কৌটা, তিনটি টাকা তৈরির ডাইস, দুই বান্ডেল ফয়েল পেপার, দুই প্যাকেট টাকা তৈরির কাগজ ও দুইটি মোবাইল জব্দ করা হয়।

কোন কোন ব্যাংকে জাল টাকা দিয়েছে চক্রটি এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান ব্যাংকগুলোর নাম জানাননি। এই অবৈধ কাজে তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, কোন একসময় তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। এখন তিনি জাল টাকা তৈরি করছেন। তাই বলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ছাড় দিচ্ছে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনবো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন জানিয়েছেন, তারা জাল টাকা পাচারও করত। হুমায়ুন কবির মোহাম্মদপুরে ভাড়া নেয়া বাসায় জাল টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। তার অন্যান্য সহযোগী পলাতক। তারা হলো- ইমাম হোসেন (৩০), মো. আলাউদ্দিন (৩৫), মো. সাইফুল (৩০), মো. মজিবর (৩২) ও আলাউদ্দিন (৪২)। তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল টাকা প্রস্তুত এবং বিপণন করে আসছিল। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামির পিসিপিআর যাচাই করে জানা যায় তার বিরুদ্ধে এর আগেও ৪টি জাল টাকার মামলা রয়েছে। অনেক দিন থেকেই তারা এই ব্যবসা করে আসছে। প্রতি মাসে ৬০ লাখ জাল টাকা তারা তৈরি করে। সারা দেশে ৪/৫টা নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের মাধ্যমে এই নকল টাকা তারা ছড়িয়ে থাকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন জানিয়েছেন, তারা জাল টাকা পাচারও করতেন। তাদের এই পাচারের সত্যতা আছে কি-না সেটিও যাচাই-বাছাই চলছে।