কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়বে উৎপাদন

একটানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির নতুন ফেইস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল) কয়লা উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

নির্ধারিত সময়সীমার ২০ দিন আগেই গত বুধবার থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ডিভিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৩০৬নং নতুন কোল ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কয়লা সংকট নিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট চালু থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। সে অবস্থা হতে উত্তরণ মিলবে নতুন ফেইস হতে কয়লা উৎপাদন শুরু হওয়ার ফলে। দীর্ঘ দুই মাস ২৭ দিন বন্ধের পর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার।

খনির সূত্রে জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, খনি ভূগর্ভে ১৩১০ নম্বর কোল ফেইসে মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ ছিল। এরপর ১৩১০ নম্বর ফেইসে ব্যবহৃত উৎপাদন যন্ত্রপাতি সরিয়ে ১৩০৬ নম্বর ফেইসে স্থানান্তর করে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল) কয়লা উৎপাদন শুরু হয়।

খনির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৩০৬নং নতুন কোল ফেইস (কূপ) থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য কূপের উন্নয়ন কাজ শুরুসহ পূর্বের কোল ফেইস থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থানান্তরসহ সার্বিক কার্যক্রম শেষ করে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে নতুন কোল ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল খনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্ধারিত সময়সীমার ২০ দিন আগেই পরীক্ষামূলকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু করতে সক্ষম হয়েছেন খনি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পূর্বের ফেইস হতে কয়লা উত্তোলন শেষে ইয়ার্ডে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ ছিল যা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। এ কারণে শুধুমাত্র কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রাও কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিলেন তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এতে উত্তর জনপদের আট জেলায় ক্রমান্বয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, সংশ্লিষ্টদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় অধিক জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার ২০ দিন আগে ১৩০৬নং নতুন কোল ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে কিছুটা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। গত দু’দিন আগে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৩৫ জন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ১৪৩ জন শ্রমিকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। তাদের করোনা পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে কোন মাত্রায় কাজ করা হবে। আগের উৎপাদিত ইয়ার্ডে বর্তমানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে দিনে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন সম্ভব হবে। এতে বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি কিছুটা কমে আসবে।

শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২ , ১৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা উৎপাদন শুরু

কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়বে উৎপাদন

চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর

একটানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির নতুন ফেইস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল) কয়লা উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

নির্ধারিত সময়সীমার ২০ দিন আগেই গত বুধবার থেকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ডিভিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৩০৬নং নতুন কোল ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কয়লা সংকট নিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট চালু থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। সে অবস্থা হতে উত্তরণ মিলবে নতুন ফেইস হতে কয়লা উৎপাদন শুরু হওয়ার ফলে। দীর্ঘ দুই মাস ২৭ দিন বন্ধের পর বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার।

খনির সূত্রে জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, খনি ভূগর্ভে ১৩১০ নম্বর কোল ফেইসে মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ ছিল। এরপর ১৩১০ নম্বর ফেইসে ব্যবহৃত উৎপাদন যন্ত্রপাতি সরিয়ে ১৩০৬ নম্বর ফেইসে স্থানান্তর করে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল) কয়লা উৎপাদন শুরু হয়।

খনির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৩০৬নং নতুন কোল ফেইস (কূপ) থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য কূপের উন্নয়ন কাজ শুরুসহ পূর্বের কোল ফেইস থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থানান্তরসহ সার্বিক কার্যক্রম শেষ করে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে নতুন কোল ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল খনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্ধারিত সময়সীমার ২০ দিন আগেই পরীক্ষামূলকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু করতে সক্ষম হয়েছেন খনি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পূর্বের ফেইস হতে কয়লা উত্তোলন শেষে ইয়ার্ডে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ ছিল যা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। এ কারণে শুধুমাত্র কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রাও কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিলেন তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এতে উত্তর জনপদের আট জেলায় ক্রমান্বয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, সংশ্লিষ্টদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় অধিক জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার ২০ দিন আগে ১৩০৬নং নতুন কোল ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে কিছুটা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। গত দু’দিন আগে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৩৫ জন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ১৪৩ জন শ্রমিকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। তাদের করোনা পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে কোন মাত্রায় কাজ করা হবে। আগের উৎপাদিত ইয়ার্ডে বর্তমানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে দিনে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন সম্ভব হবে। এতে বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি কিছুটা কমে আসবে।