চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গতকাল লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। লেভেল ক্রসিংয়ের এমন দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্তত লেভেল ক্রসিংয়ে ৩১০টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৮১ জন মারা গেছেন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটছে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। তবে এসব দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে না কেউ। কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই রেলওয়ে দায় চাপাচ্ছেন সড়ক বিভাগের ওপর। আবার সড়ক বিভাগ বলছে এর দায়-দায়িত্ব রেলওয়ের।
সারাদেশে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং রয়েছে ২ হাজার ৭৮৯টি। এর মধ্যে রেলওয়ের অনুমোদিত ‘বৈধ’ লেভেল ক্রসিং এক হাজার ৪৯৬টি। আর অনুমোদন ছাড়া ‘অবৈধ’ লেভেল ক্রসিং রয়েছে এক হাজার ৩৬১টি।
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, করে সারাদেশে যেসব অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে সেগুলো মৃতুকূপে পরিণত হয়েছে। যত দুর্ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলোতেও মাত্র ৯৮১ জন গেটম্যান অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন। ফলে সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকছে না গেটম্যানরা। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রেলওয়ের আইন অনুযায়ী বৈধ লেভেল ক্রসিং ছাড়া পার হওয়া যাবে না। রেল লাইনের নিজ দিয়ে অথবা ওপর দিয়ে পার হতে হবে। যার ফলে রেলওয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে কোন মামলাও হচ্ছে না। এই থেকে বেরিয়ে এসে দুর্ঘটনার দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনারোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের বাইরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পূর্বাঞ্চলে ২৩৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৫৮টি, ইউনিয়ন পরিষদের পূর্বাঞ্চলে ২৯৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২০৪টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) পূর্বাঞ্চলে ৫টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭টি, সিটি করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলে ২২টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩২টি, উপজেলা পরিষদের পূর্বাঞ্চলে ৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২টি, পৌরসভার পূর্বাঞ্চলে ৫৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৫৯টি রেল ক্রসিং নির্মাণ করেছে। এর বাইরেই পূর্বাঞ্চলে অন্তত ১০৯টি ও পশ্চিমাঞ্চলে অন্তত ৬১টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে।
লেভেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেল নিজস্ব পথে চলে, ট্রেন কখনও সড়কে উঠে না। দিনের পর দিন লেভেল ক্রসিংয়ে সড়ক যান উঠে পড়ছে। দুর্ঘটনায় রেলের ব্যাপক ক্ষতিসহ সাধারণ ট্রেনযাত্রীও নিহত হচ্ছে। লেভেল ক্রসিং বৈধ কিংবা অবৈধ যেটাই দুর্ঘটনা ঘটে, সেজন্য রেল দায়ী নয়। তবুও রেলকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার দায় সড়ক বিভাগের।’
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘লাইনের যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। তাছাড়া রেলের প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর চাহিদা থাকলেও সেখানে অর্ধেক কর্মী দিয়ে চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে লাইনম্যানের সংকট রয়েছে। তবে এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২ , ১৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩০ জিলহজ ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গতকাল লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। লেভেল ক্রসিংয়ের এমন দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্তত লেভেল ক্রসিংয়ে ৩১০টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৮১ জন মারা গেছেন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটছে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। তবে এসব দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে না কেউ। কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই রেলওয়ে দায় চাপাচ্ছেন সড়ক বিভাগের ওপর। আবার সড়ক বিভাগ বলছে এর দায়-দায়িত্ব রেলওয়ের।
সারাদেশে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং রয়েছে ২ হাজার ৭৮৯টি। এর মধ্যে রেলওয়ের অনুমোদিত ‘বৈধ’ লেভেল ক্রসিং এক হাজার ৪৯৬টি। আর অনুমোদন ছাড়া ‘অবৈধ’ লেভেল ক্রসিং রয়েছে এক হাজার ৩৬১টি।
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’-এর নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, করে সারাদেশে যেসব অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে সেগুলো মৃতুকূপে পরিণত হয়েছে। যত দুর্ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলোতেও মাত্র ৯৮১ জন গেটম্যান অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন। ফলে সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকছে না গেটম্যানরা। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রেলওয়ের আইন অনুযায়ী বৈধ লেভেল ক্রসিং ছাড়া পার হওয়া যাবে না। রেল লাইনের নিজ দিয়ে অথবা ওপর দিয়ে পার হতে হবে। যার ফলে রেলওয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে কোন মামলাও হচ্ছে না। এই থেকে বেরিয়ে এসে দুর্ঘটনার দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনারোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের বাইরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পূর্বাঞ্চলে ২৩৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৫৮টি, ইউনিয়ন পরিষদের পূর্বাঞ্চলে ২৯৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২০৪টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) পূর্বাঞ্চলে ৫টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭টি, সিটি করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলে ২২টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩২টি, উপজেলা পরিষদের পূর্বাঞ্চলে ৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২টি, পৌরসভার পূর্বাঞ্চলে ৫৭টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৫৯টি রেল ক্রসিং নির্মাণ করেছে। এর বাইরেই পূর্বাঞ্চলে অন্তত ১০৯টি ও পশ্চিমাঞ্চলে অন্তত ৬১টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে।
লেভেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেল নিজস্ব পথে চলে, ট্রেন কখনও সড়কে উঠে না। দিনের পর দিন লেভেল ক্রসিংয়ে সড়ক যান উঠে পড়ছে। দুর্ঘটনায় রেলের ব্যাপক ক্ষতিসহ সাধারণ ট্রেনযাত্রীও নিহত হচ্ছে। লেভেল ক্রসিং বৈধ কিংবা অবৈধ যেটাই দুর্ঘটনা ঘটে, সেজন্য রেল দায়ী নয়। তবুও রেলকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার দায় সড়ক বিভাগের।’
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘লাইনের যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। তাছাড়া রেলের প্রায় ৫০ হাজার কর্মীর চাহিদা থাকলেও সেখানে অর্ধেক কর্মী দিয়ে চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে লাইনম্যানের সংকট রয়েছে। তবে এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।