রাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাস এজেন্সি থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ

ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে আসা বাস এজেন্সি ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’-এর পরিচালকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে নেয়া হয় এ চাঁদা। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আলী আজম তুহিন ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ নামে একটি বাস এজেন্সির পরিচালক। ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে চুক্তিভিত্তিক ভ্রমণ বা ভর্তি পরীক্ষার সময় যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়া দিয়ে থাকে। আর এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম সাবরুন জামিল সুস্ময়। তিনি রাবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী। রাবির সমাজকর্ম বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী মাস্টার্স শেষ করেছেন ২০১৮ সালে। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলা সমিতির কয়েকজন নেতার নামও উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী। তাদের মধ্যে আছেন শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তুর্য এবং ধ্রুব। ঘটনার সময় আরও বেশ কয়েকজন ছিলেন জানালেও না চেনায় নাম বলতে পারেননি ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সরবরাহ করা কল রেকর্ড এবং বিকাশ থেকে লেনদেনের স্ক্রিনশট অনুযায়ী, একটি নম্বর থেকে ২৫ জুলাই বিকেল ৩টা ১১ মিনিটে ১০ হাজার এবং অন্য একটিতে একই দিন বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে ১০ হাজার ২০০ টাকা মিলিয়ে মোট ২০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্তের সঙ্গে ভুক্তভোগীর হওয়া একটি কল রেকর্ড ও বিকাশ লেনদেনের স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রাবি ভর্তি পরীক্ষায় ২৪টি বাসে করে ময়মনসিংহ থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুলের মাঠে পার্কিং করা বাসে লাগানো ব্যানার থেকে নম্বর নিয়ে টিকেটের কথা বলে ডাকা হয় তাকে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীরা বাসে আসা-যাওয়া করতে থাকায় নিজে না গিয়ে হৃদয় নামের তার এক কর্মচারীকে পাঠান। হৃদয়কে জিম্মি করে, মিষ্টি খাওয়ার জন্য তার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত। শেষ পর্যন্ত ২৪ বাসের জন্য ১২ হাজার টাকা দাবি করেন সুষ্ময়। সে সময় ১০ হাজার টাকা দিয়ে পার পেলেও একইদিন (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর ১৪ নম্বর বাসটি রাজশাহী আসার পথে সমস্যা সৃষ্টি করেছে দাবি করে তার কাছ থেকে আরও ১০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেন অভিযুক্ত।

আলী আজম তুহিন বলেন, ‘সেদিন (২৫ তারিখ) আমাদের ১৪টা বাস যায়। দুপুরে আমাকে একজন ফোন করে ময়মনসিংহ যাওয়ার টিকেট চেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে। পরে স্টুডেন্টদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কালো শার্ট পড়া (পরে নাম জানতে পারলাম সুষ্ময়) আমার বাসের একজন স্টাফকে মোটর সাইকেলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রেখে আমার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। সে সময় ১০ হাজার টাকায় মিটমাট হলেও বিকেল ৫টার দিকে এসে বাস আসার সময় সমস্যা করেছে বলে ভাঙচুর করার হুমকি দিয়ে আরও ১০ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুকে জানালে তিনি আমার কাছে তার নম্বর চান। আমি নম্বর ম্যাসেজ করে দিয়েছি। পরে আর কিছু জানিনা।’

অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা সুষ্ময় বলেন, ‘অসম্ভব! ভার্সিটির সঙ্গে আমার যোগাযোগই নাই কতদিন থেকে। ২০১৮ সালে আমি মাস্টার্স করে বের হয়েছি, তারপর থেকে আমার কোন যোগাযোগই নাই ক্যাম্পাসের সঙ্গে। এখানে কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা অন্য কেউ করতে পারে, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি ১০-১৫ দিন বাসায়। ২০ তারিখের দিকে এসেছি।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবক্স হলের ৩১৮ নম্বর রুমে ছিলেন ২৪ তারিখ রাতে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ জানালে আমরা তাদের (অভিযুক্ত) ডেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সে (সুষ্ময়) পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। সেদিন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২ , ১৫ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩০ জিলহজ ১৪৪৩

রাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাস এজেন্সি থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ

প্রতিনিধি, রাবি

ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে আসা বাস এজেন্সি ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’-এর পরিচালকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে নেয়া হয় এ চাঁদা। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আলী আজম তুহিন ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ নামে একটি বাস এজেন্সির পরিচালক। ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে চুক্তিভিত্তিক ভ্রমণ বা ভর্তি পরীক্ষার সময় যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়া দিয়ে থাকে। আর এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম সাবরুন জামিল সুস্ময়। তিনি রাবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী। রাবির সমাজকর্ম বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী মাস্টার্স শেষ করেছেন ২০১৮ সালে। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলা সমিতির কয়েকজন নেতার নামও উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী। তাদের মধ্যে আছেন শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তুর্য এবং ধ্রুব। ঘটনার সময় আরও বেশ কয়েকজন ছিলেন জানালেও না চেনায় নাম বলতে পারেননি ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সরবরাহ করা কল রেকর্ড এবং বিকাশ থেকে লেনদেনের স্ক্রিনশট অনুযায়ী, একটি নম্বর থেকে ২৫ জুলাই বিকেল ৩টা ১১ মিনিটে ১০ হাজার এবং অন্য একটিতে একই দিন বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে ১০ হাজার ২০০ টাকা মিলিয়ে মোট ২০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্তের সঙ্গে ভুক্তভোগীর হওয়া একটি কল রেকর্ড ও বিকাশ লেনদেনের স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রাবি ভর্তি পরীক্ষায় ২৪টি বাসে করে ময়মনসিংহ থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুলের মাঠে পার্কিং করা বাসে লাগানো ব্যানার থেকে নম্বর নিয়ে টিকেটের কথা বলে ডাকা হয় তাকে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীরা বাসে আসা-যাওয়া করতে থাকায় নিজে না গিয়ে হৃদয় নামের তার এক কর্মচারীকে পাঠান। হৃদয়কে জিম্মি করে, মিষ্টি খাওয়ার জন্য তার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত। শেষ পর্যন্ত ২৪ বাসের জন্য ১২ হাজার টাকা দাবি করেন সুষ্ময়। সে সময় ১০ হাজার টাকা দিয়ে পার পেলেও একইদিন (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর ১৪ নম্বর বাসটি রাজশাহী আসার পথে সমস্যা সৃষ্টি করেছে দাবি করে তার কাছ থেকে আরও ১০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেন অভিযুক্ত।

আলী আজম তুহিন বলেন, ‘সেদিন (২৫ তারিখ) আমাদের ১৪টা বাস যায়। দুপুরে আমাকে একজন ফোন করে ময়মনসিংহ যাওয়ার টিকেট চেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে। পরে স্টুডেন্টদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কালো শার্ট পড়া (পরে নাম জানতে পারলাম সুষ্ময়) আমার বাসের একজন স্টাফকে মোটর সাইকেলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রেখে আমার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। সে সময় ১০ হাজার টাকায় মিটমাট হলেও বিকেল ৫টার দিকে এসে বাস আসার সময় সমস্যা করেছে বলে ভাঙচুর করার হুমকি দিয়ে আরও ১০ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুকে জানালে তিনি আমার কাছে তার নম্বর চান। আমি নম্বর ম্যাসেজ করে দিয়েছি। পরে আর কিছু জানিনা।’

অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা সুষ্ময় বলেন, ‘অসম্ভব! ভার্সিটির সঙ্গে আমার যোগাযোগই নাই কতদিন থেকে। ২০১৮ সালে আমি মাস্টার্স করে বের হয়েছি, তারপর থেকে আমার কোন যোগাযোগই নাই ক্যাম্পাসের সঙ্গে। এখানে কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা অন্য কেউ করতে পারে, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি ১০-১৫ দিন বাসায়। ২০ তারিখের দিকে এসেছি।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবক্স হলের ৩১৮ নম্বর রুমে ছিলেন ২৪ তারিখ রাতে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ জানালে আমরা তাদের (অভিযুক্ত) ডেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সে (সুষ্ময়) পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। সেদিন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।