একটু হাত বাড়ালে বাঁচতে পারে ফারুক

‘আরেকজনের রিক্সা চালাইয়া প্রতিদিন রিক্সার ভাড়া দিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রুজি করি। এই টেকা দিয়া সংসারটা কোনো রকমে চলছে। সমাজে তো অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারা কেউ যদি আমারে একটা রিক্সা দান করতো, তাইলে বেশি টাকা রুজি কইরা তারার লাগি দোয়া করতাম, আমার সংসারটাও ভাল চলত।’ কথাগুলি বলেন প্রতিবন্ধী ফারুক। এই প্রতিবেদককে অশ্রুসিক্ত চোখে এভাবেই তিনি তার মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

অন্য ১০টি শিশুর মত স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে জন্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু বিধিবাম একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। শিশু বয়সেই আগুনে পুড়ে এক হাতের কব্জি হারিয়ে হয়ে পড়েন প্রতিবন্ধী। তবুও জীবনযুদ্ধে তিনি থমকে যাননি। সঙ্গী করেন ভাড়ায় চালিত রিক্সা। জীবনযুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী যুবক ফারুক মিয়া বানেশ^র গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শানু মিয়া ও স্থানীয়রা জানায়, এক শতক ভিটে বাড়িতে তার ফুফু সহ ২টি পরিবার বাস করে। এছাড়া তেমন কিছুই নেই তার, নিকটাত্মীয় বলতে দুই বোন, আর ফুফু ছাড়া আর কেউই নেই ফারুকের। শিশুকালে আগুনে পুড়ে এক হাতের কব্জি হারায় সে। ১৩ বছর বয়সে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় হারায় তার গর্ভধারিণী মা ও বাবাকে। তাদের মৃত্যুর পর দিশাহারা হয়ে পড়ে ফারুক। ওলোট-পালোট করে দেয় তার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ। সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে ফারুকের কাঁধে। বাবা-মার মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই নেমে পড়েন কাজে। সংসারের হাল ধরতে কিশোর বয়সেই রিক্সার প্যাডেলে পা রাখতে হয় ফারুককে।

এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে, কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই অশ্রু ভেজা চোখে ফারুক বলেন, ভালো আছি। আব্বা-আম্মা মরার পরে সংসারের হাল ধরতে ভাড়ায় প্যাডেল রিক্সা চালানি শুরু করি। এখনো আরেকজনের রিক্সা চালাইয়া প্রতিদিন রিক্সার ভাড়া দিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রুজি করি। এই টেকা দিয়া সংসারটা কোনো রকমে চলছে। সমাজে তো অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারা কেউ যদি আমারে একটা রিক্সা দান করতো তাইলে বেশি টাকা রুজি কইরা তারার লাগি দোয়া করতাম, আমার সংসারটাও ভাল চলত।

প্রতিবন্ধী চালক দেখে যাত্রীরা উঠতে চায় কিনা? এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘ অনেকে প্রতিবন্ধী দেখে উঠতে চায় না। ভাবে চালাইতে পারমু কি না। আবার অনেকে আমারে খুঁইজা রিকশায় ওঠে।

বানেশ^র গ্রামের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ গোলাপ জানান, এই ছেলেটির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তার নিজস্ব একটি রিক্সা হবে টাকার অভাবে তার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। আমিও সমাজের বিত্তবান ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের কাছে তাকে একটি রিক্সা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করি।

মাধবপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. আশরাফ আলী জানান, আমরা প্রতিবন্ধী ফারুকের সাথে যোগাযোগ করে কিভাবে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা যায় এই বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন বলেন, তিনি সহযোগিতার আবেদন করলে তাকে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২ , ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ১ মহররম ১৪৪৪

একটু হাত বাড়ালে বাঁচতে পারে ফারুক

প্রতিনিধি, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

image

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : ভাড়ার রিকশা চালাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ফারুক -সংবাদ

‘আরেকজনের রিক্সা চালাইয়া প্রতিদিন রিক্সার ভাড়া দিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রুজি করি। এই টেকা দিয়া সংসারটা কোনো রকমে চলছে। সমাজে তো অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারা কেউ যদি আমারে একটা রিক্সা দান করতো, তাইলে বেশি টাকা রুজি কইরা তারার লাগি দোয়া করতাম, আমার সংসারটাও ভাল চলত।’ কথাগুলি বলেন প্রতিবন্ধী ফারুক। এই প্রতিবেদককে অশ্রুসিক্ত চোখে এভাবেই তিনি তার মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

অন্য ১০টি শিশুর মত স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে জন্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু বিধিবাম একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। শিশু বয়সেই আগুনে পুড়ে এক হাতের কব্জি হারিয়ে হয়ে পড়েন প্রতিবন্ধী। তবুও জীবনযুদ্ধে তিনি থমকে যাননি। সঙ্গী করেন ভাড়ায় চালিত রিক্সা। জীবনযুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী যুবক ফারুক মিয়া বানেশ^র গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শানু মিয়া ও স্থানীয়রা জানায়, এক শতক ভিটে বাড়িতে তার ফুফু সহ ২টি পরিবার বাস করে। এছাড়া তেমন কিছুই নেই তার, নিকটাত্মীয় বলতে দুই বোন, আর ফুফু ছাড়া আর কেউই নেই ফারুকের। শিশুকালে আগুনে পুড়ে এক হাতের কব্জি হারায় সে। ১৩ বছর বয়সে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় হারায় তার গর্ভধারিণী মা ও বাবাকে। তাদের মৃত্যুর পর দিশাহারা হয়ে পড়ে ফারুক। ওলোট-পালোট করে দেয় তার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ। সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে ফারুকের কাঁধে। বাবা-মার মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই নেমে পড়েন কাজে। সংসারের হাল ধরতে কিশোর বয়সেই রিক্সার প্যাডেলে পা রাখতে হয় ফারুককে।

এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে, কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই অশ্রু ভেজা চোখে ফারুক বলেন, ভালো আছি। আব্বা-আম্মা মরার পরে সংসারের হাল ধরতে ভাড়ায় প্যাডেল রিক্সা চালানি শুরু করি। এখনো আরেকজনের রিক্সা চালাইয়া প্রতিদিন রিক্সার ভাড়া দিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রুজি করি। এই টেকা দিয়া সংসারটা কোনো রকমে চলছে। সমাজে তো অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারা কেউ যদি আমারে একটা রিক্সা দান করতো তাইলে বেশি টাকা রুজি কইরা তারার লাগি দোয়া করতাম, আমার সংসারটাও ভাল চলত।

প্রতিবন্ধী চালক দেখে যাত্রীরা উঠতে চায় কিনা? এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘ অনেকে প্রতিবন্ধী দেখে উঠতে চায় না। ভাবে চালাইতে পারমু কি না। আবার অনেকে আমারে খুঁইজা রিকশায় ওঠে।

বানেশ^র গ্রামের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ গোলাপ জানান, এই ছেলেটির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তার নিজস্ব একটি রিক্সা হবে টাকার অভাবে তার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। আমিও সমাজের বিত্তবান ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের কাছে তাকে একটি রিক্সা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করি।

মাধবপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. আশরাফ আলী জানান, আমরা প্রতিবন্ধী ফারুকের সাথে যোগাযোগ করে কিভাবে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা যায় এই বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন বলেন, তিনি সহযোগিতার আবেদন করলে তাকে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।