চার দেয়ালে বন্দি ‘হাওয়’র ‘সাদা কালা’ গানের স্রষ্টা হাশিম মাহমুদ

একতলা বাড়ির একটি কক্ষ। কক্ষে একটি বিছানা, সোফা ও টেবিল। এখানেই দিন কাটে ‘হাওয়া’ সিনেমার ভাইরাল হওয়া ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের স্রষ্টা হাশিম মাহমুদের। একসময় যার নিয়মিত পদচারণা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও চারুকলা ইনস্টিটিউটে, সেই তিনি নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন এই চার দেয়ালের মধ্যে। বিশেষ দরকার ছাড়া কোথাও বের হন না, মুড ভালো না থাকলে কারও সঙ্গে কথাও বলেন না। ছোট্ট ওই ঘরের মধ্যেই তৈরি করে নিয়েছেন নিজের এক ভিন্ন জগৎ। সময় কাটে চিন্তাভাবনা করে, গান-ছড়া লিখে। টেবিলের খাতা ও ডায়েরিভর্তি তার লেখা গান ও ছড়া। মাঝে মধ্যে গান করেন। তবে গানের জগতের মানুষের সঙ্গে তার তেমন একটা যোগাযোগ নেই বললেই চলে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা সবুজবাগ এলাকায় মা জামিলা আক্তার ও ছোট বোনকে নিয়ে হাশিম মাহমুদের বসবাস। বাবা আবুল হাশেম অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন। হাশিম মাহমুদ সাত ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। ছয় ভাইবোন বিয়ে করলেও ৫১ বছর বয়সী এই শিল্পী বিয়ে করেননি।

‘১৯৭১ সালে হাশিম মাহমুদের জন্ম। নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও পরে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর থেকে চারুকলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু হয়। ছায়ানটে নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীতের কোর্সে ভর্তি হন। তবে কোর্স সম্পন্ন করেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন শাপলা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অনেক সংগঠনে যাতায়াত ছিল। নব্বইয়ের দশকে বৈরাগী নামে একটি ব্যান্ডদল করেছিলেন। লালনের আখড়ায় সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল। সেখানে একটি মেয়েকে ভালো লেগেছিল। সে ভালো লাগা থেকেই সাদা সাদা কালা কালা গানটি লিখেছেন। সর্বপ্রথম ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে গানটি গেয়েছিলেন। ’ ২০০৪ সালের পর নিজেকে আড়াল করতে শুরু করেন হাশিম। এরপর থেকে কিছুটা অন্যরকম আচরণ লক্ষ করা যায়। ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে। গত ছয়-সাত বছর ধরে ঢাকায় আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। চিকিৎসক বলেছেন, কোনও রোগ নেই। তাকে বেশি করে সময় দিতে হবে।’

‘ছোটবেলা থেকে একটু ভুলোমনের হাশিম মাহমুদ। এখন এটি একটু বেশি হয়েছে। তবে নিজের গান ও গানের লাইন কখনও ভোলেন না। অনেক সময় বলেন, আমার অনেক কিছু নিয়ে গেছে তারা। তবে সেটি কি তা মনে করতে পারেন না। তার মধ্যে এক ধরনের না পাওয়ার কষ্ট আছে।’ ভাবুক ও ভুলোমনের হাশিম মাহমুদ একবার একটি চাকরিতেও ঢুকেছিলেন। একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি হয়েছিল তার। ‘অল্প কিছু দিন চাকরি করেছেন। কাউকে স্যার ডাকতে পারবেন না বলে চাকরি ছেড়ে দেন।’ পদাতিক নাট্য সংসদ নারায়ণগঞ্জ শাখায় একসময় সদস্য ছিলেন হাশিম। নাট্যদলে একটা শৃঙ্খলা থাকে। কিন্তু হাশিম নিয়মকানুনের বাইরে চলতেন। ইচ্ছে হলে দলে আসেন, না হয় আসেন না। তারপর একসময় নাট্যদলে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেন।’

রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২ , ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ১ মহররম ১৪৪৪

চার দেয়ালে বন্দি ‘হাওয়’র ‘সাদা কালা’ গানের স্রষ্টা হাশিম মাহমুদ

বিনোদন প্রতিবেদক

image

একতলা বাড়ির একটি কক্ষ। কক্ষে একটি বিছানা, সোফা ও টেবিল। এখানেই দিন কাটে ‘হাওয়া’ সিনেমার ভাইরাল হওয়া ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের স্রষ্টা হাশিম মাহমুদের। একসময় যার নিয়মিত পদচারণা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও চারুকলা ইনস্টিটিউটে, সেই তিনি নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন এই চার দেয়ালের মধ্যে। বিশেষ দরকার ছাড়া কোথাও বের হন না, মুড ভালো না থাকলে কারও সঙ্গে কথাও বলেন না। ছোট্ট ওই ঘরের মধ্যেই তৈরি করে নিয়েছেন নিজের এক ভিন্ন জগৎ। সময় কাটে চিন্তাভাবনা করে, গান-ছড়া লিখে। টেবিলের খাতা ও ডায়েরিভর্তি তার লেখা গান ও ছড়া। মাঝে মধ্যে গান করেন। তবে গানের জগতের মানুষের সঙ্গে তার তেমন একটা যোগাযোগ নেই বললেই চলে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা সবুজবাগ এলাকায় মা জামিলা আক্তার ও ছোট বোনকে নিয়ে হাশিম মাহমুদের বসবাস। বাবা আবুল হাশেম অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন। হাশিম মাহমুদ সাত ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। ছয় ভাইবোন বিয়ে করলেও ৫১ বছর বয়সী এই শিল্পী বিয়ে করেননি।

‘১৯৭১ সালে হাশিম মাহমুদের জন্ম। নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও পরে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর থেকে চারুকলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু হয়। ছায়ানটে নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীতের কোর্সে ভর্তি হন। তবে কোর্স সম্পন্ন করেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন শাপলা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অনেক সংগঠনে যাতায়াত ছিল। নব্বইয়ের দশকে বৈরাগী নামে একটি ব্যান্ডদল করেছিলেন। লালনের আখড়ায় সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল। সেখানে একটি মেয়েকে ভালো লেগেছিল। সে ভালো লাগা থেকেই সাদা সাদা কালা কালা গানটি লিখেছেন। সর্বপ্রথম ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে গানটি গেয়েছিলেন। ’ ২০০৪ সালের পর নিজেকে আড়াল করতে শুরু করেন হাশিম। এরপর থেকে কিছুটা অন্যরকম আচরণ লক্ষ করা যায়। ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে। গত ছয়-সাত বছর ধরে ঢাকায় আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। চিকিৎসক বলেছেন, কোনও রোগ নেই। তাকে বেশি করে সময় দিতে হবে।’

‘ছোটবেলা থেকে একটু ভুলোমনের হাশিম মাহমুদ। এখন এটি একটু বেশি হয়েছে। তবে নিজের গান ও গানের লাইন কখনও ভোলেন না। অনেক সময় বলেন, আমার অনেক কিছু নিয়ে গেছে তারা। তবে সেটি কি তা মনে করতে পারেন না। তার মধ্যে এক ধরনের না পাওয়ার কষ্ট আছে।’ ভাবুক ও ভুলোমনের হাশিম মাহমুদ একবার একটি চাকরিতেও ঢুকেছিলেন। একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি হয়েছিল তার। ‘অল্প কিছু দিন চাকরি করেছেন। কাউকে স্যার ডাকতে পারবেন না বলে চাকরি ছেড়ে দেন।’ পদাতিক নাট্য সংসদ নারায়ণগঞ্জ শাখায় একসময় সদস্য ছিলেন হাশিম। নাট্যদলে একটা শৃঙ্খলা থাকে। কিন্তু হাশিম নিয়মকানুনের বাইরে চলতেন। ইচ্ছে হলে দলে আসেন, না হয় আসেন না। তারপর একসময় নাট্যদলে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেন।’