দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অনিরাপদ। এসব রেলক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাই রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে কোন গেইটম্যান ছিল না। দেশের ২ হাজার ৯৫৯ কিলোমিটার রেলপথে ২ হাজার ৮৫৬টি রেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৯৫টি বৈধ এবং এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। ৯৬১টি রেলক্রসিংয়ে কোন গেইটম্যান নেই।
গত আড়াই বছরে সারাদেশে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ১১৬টি দুর্ঘটনায় ২১৯ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোড সেফটি ফাউন্টেশন। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৩৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৯ জন; ২০২১ সালে ৪৩টি দুর্ঘটনা ৭৬ জন; ২০২২ সাল (২৮ জুলাই পর্যন্ত) ৩৫টি দুর্ঘটনা ৭৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি।
রেলক্রসিং দুর্ঘটনার কারণসমূহ
১. অননুমোদিত ও অবৈধ বিবেচনা করে বহু সংখ্যক রেলক্রসিংয়ে গেইটম্যান ও গেইটবারের ব্যবস্থা না করা; ২. বৈধ রেলক্রসিংসমূহে গেটম্যানদের দায়িত্বে অবহেলা এবং গেটম্যান হিসেবে লোকবলের সংকট; ৩. যানবাহনের চালক ও সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতা ও অধৈর্যের মনমানসিকতা; ৪. দুর্ঘটনায় দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া এবং রেলপথ ব্যবস্থাপনায় আইনের শাসনের অভাব।
সুপারিশসমূহ
১. সব রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও উপযুক্ত গেটবারের ব্যবস্থা করা; ২. রেলক্রসিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করা; ৩. জনবল সংকট নিরসন করে রেলপথ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা; ৪. সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো।
এ বিষয়ে রাড সেফটি ফাউন্টেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না। বৈধ ও অবৈধ সব মিলেই ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অনিরাপদ। তবে রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বয়হীনতা রয়েছে।’ কারণ অনেক ক্ষেত্রে তারা সড়ক নির্মাণের সময় রেলওয়ে অনুমতি নেয় না বলে জানান তিনি।
বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে কোন গেটম্যান ছিল না
‘রেলক্রসিংয়ে গেট খোলা ছিল। গেটম্যান দেখিনি। গাড়িটি লাইনে উঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। বিকট শব্দে আমরা হতবিহ্বল। নিচে পড়ে যাই আমি।’ Ñএভাবে গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশনের কাছে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন মাইক্রোবাস যাত্রী জুনায়েদ কায়সার ইমন। তিনি বসেছিলেন ওই মাইক্রোবাসের নিছনের সিটে। জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা পাঁচজন পেছনে বসি। আমি ছাড়া এক বন্ধু মাহিম আর তিন এসএসসি পরীক্ষার্থী আয়াত, সৈকত ও তাসফির ছিল। গাড়িতে ট্রেন ধাক্কা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির পেছনের ডালা (ব্যাকডালা) খুলে যায়। আমরা নিচে পড়ে যাই। ধাক্কা দিয়ে ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে যাত্রীরাও নেমে আসেন ট্রেন থেকে। হাঁটতে গিয়ে দেখি পায়ে ব্যথা লাগছে। রক্ত পড়ছে কয়েক জায়গা থেকে। মাইক্রোবাসের কাছে গিয়ে দেখি সবাই রক্তাক্ত। আমি আর পারিনি দেখতে।’
রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২ , ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ১ মহররম ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অনিরাপদ। এসব রেলক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাই রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে কোন গেইটম্যান ছিল না। দেশের ২ হাজার ৯৫৯ কিলোমিটার রেলপথে ২ হাজার ৮৫৬টি রেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৯৫টি বৈধ এবং এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। ৯৬১টি রেলক্রসিংয়ে কোন গেইটম্যান নেই।
গত আড়াই বছরে সারাদেশে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ১১৬টি দুর্ঘটনায় ২১৯ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোড সেফটি ফাউন্টেশন। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৩৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৯ জন; ২০২১ সালে ৪৩টি দুর্ঘটনা ৭৬ জন; ২০২২ সাল (২৮ জুলাই পর্যন্ত) ৩৫টি দুর্ঘটনা ৭৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি।
রেলক্রসিং দুর্ঘটনার কারণসমূহ
১. অননুমোদিত ও অবৈধ বিবেচনা করে বহু সংখ্যক রেলক্রসিংয়ে গেইটম্যান ও গেইটবারের ব্যবস্থা না করা; ২. বৈধ রেলক্রসিংসমূহে গেটম্যানদের দায়িত্বে অবহেলা এবং গেটম্যান হিসেবে লোকবলের সংকট; ৩. যানবাহনের চালক ও সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতা ও অধৈর্যের মনমানসিকতা; ৪. দুর্ঘটনায় দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া এবং রেলপথ ব্যবস্থাপনায় আইনের শাসনের অভাব।
সুপারিশসমূহ
১. সব রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও উপযুক্ত গেটবারের ব্যবস্থা করা; ২. রেলক্রসিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করা; ৩. জনবল সংকট নিরসন করে রেলপথ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা; ৪. সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো।
এ বিষয়ে রাড সেফটি ফাউন্টেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে না। বৈধ ও অবৈধ সব মিলেই ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অনিরাপদ। তবে রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বয়হীনতা রয়েছে।’ কারণ অনেক ক্ষেত্রে তারা সড়ক নির্মাণের সময় রেলওয়ে অনুমতি নেয় না বলে জানান তিনি।
বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে কোন গেটম্যান ছিল না
‘রেলক্রসিংয়ে গেট খোলা ছিল। গেটম্যান দেখিনি। গাড়িটি লাইনে উঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। বিকট শব্দে আমরা হতবিহ্বল। নিচে পড়ে যাই আমি।’ Ñএভাবে গত শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশনের কাছে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন মাইক্রোবাস যাত্রী জুনায়েদ কায়সার ইমন। তিনি বসেছিলেন ওই মাইক্রোবাসের নিছনের সিটে। জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা পাঁচজন পেছনে বসি। আমি ছাড়া এক বন্ধু মাহিম আর তিন এসএসসি পরীক্ষার্থী আয়াত, সৈকত ও তাসফির ছিল। গাড়িতে ট্রেন ধাক্কা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির পেছনের ডালা (ব্যাকডালা) খুলে যায়। আমরা নিচে পড়ে যাই। ধাক্কা দিয়ে ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে যাত্রীরাও নেমে আসেন ট্রেন থেকে। হাঁটতে গিয়ে দেখি পায়ে ব্যথা লাগছে। রক্ত পড়ছে কয়েক জায়গা থেকে। মাইক্রোবাসের কাছে গিয়ে দেখি সবাই রক্তাক্ত। আমি আর পারিনি দেখতে।’