ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর, পাল্টে গেছে দাসিয়ারছড়া

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর পূর্তি আজ। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দীদশা ও গ্লানি কেটে প্রথম নাগরিক পরিচয় পায় সাবেক ছিটবাসীরা। সংযুক্ত হয় স্ব-স্ব দেশের মূল ভূখ-ে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষ জানিয়েছে এই ৭ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মকা-ের ফলে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া। বদলে গেছে তাদের জীবনমান।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিল সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য একটি মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। বিশে^র ইতিহাসে এইদিনে রক্তপাতহীনভাবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ পান রাষ্ট্রীয় অধিকার। এ সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং ৫১টি ছিটমহল একীভূত হয় ভারতের সঙ্গে। এরফলে মুজিব-ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সফল সমাপ্তী ঘটে শেখ হাসিনা ও মোদী সরকারের উদ্যোগের কারণে। ছিট মিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালায় দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায়। এই ৭ বছরে সরকার ৫৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে ২ হাজারেরও বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।

পাকা করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক ও ৫টি ব্রিজ-কালভার্ট। নতুনভাবে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। এমপিওভুক্ত করেছে নি¤œমাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দিরসহ তৈরি করে দেয়া হয়েছে রিসোর্স সেন্টার। ৩ হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এছাড়া শতভাগ সেচের আওতায় নেয়া হয়েছে কৃষি জমি। সরকারের এই উন্নয়ন পদক্ষেপে খুব খুশী সাবেক ছিঠমহলবাসী।

সাবেক ছিটের অধিবাসী শিল্পী, রাতুল ও রনজনা জানায়, আমাদের এখন দূরে গিয়ে বা পরিচয় লুকিয়ে পড়াশুনা করতে হচ্ছে না। এখানে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় বাড়ি থেকে সহজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়তে পারছে তারা। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধায় আমাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো।

বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন জানান, বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরফলে পিছিয়ে পরা মানুষগুলো উন্নয়নের ছোঁয়ায় সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে। এজন্য শেখ হাসিনা সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান সাবেক এই নেতা।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, ইতোমধ্যে সরকারের নেয়া পরিকল্পনাগুলোর বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। সাবেক ছিটমহলবাসীদের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যা যা করা দরকার তার পদক্ষেপ নেবে সরকার। এমনটাই জানালেন এই কর্মকর্তা।

রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২ , ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ১ মহররম ১৪৪৪

ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর, পাল্টে গেছে দাসিয়ারছড়া

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

image

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর পূর্তি আজ। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দীদশা ও গ্লানি কেটে প্রথম নাগরিক পরিচয় পায় সাবেক ছিটবাসীরা। সংযুক্ত হয় স্ব-স্ব দেশের মূল ভূখ-ে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষ জানিয়েছে এই ৭ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মকা-ের ফলে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া। বদলে গেছে তাদের জীবনমান।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিল সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য একটি মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। বিশে^র ইতিহাসে এইদিনে রক্তপাতহীনভাবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ পান রাষ্ট্রীয় অধিকার। এ সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং ৫১টি ছিটমহল একীভূত হয় ভারতের সঙ্গে। এরফলে মুজিব-ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সফল সমাপ্তী ঘটে শেখ হাসিনা ও মোদী সরকারের উদ্যোগের কারণে। ছিট মিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালায় দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায়। এই ৭ বছরে সরকার ৫৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে ২ হাজারেরও বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।

পাকা করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক ও ৫টি ব্রিজ-কালভার্ট। নতুনভাবে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। এমপিওভুক্ত করেছে নি¤œমাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দিরসহ তৈরি করে দেয়া হয়েছে রিসোর্স সেন্টার। ৩ হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এছাড়া শতভাগ সেচের আওতায় নেয়া হয়েছে কৃষি জমি। সরকারের এই উন্নয়ন পদক্ষেপে খুব খুশী সাবেক ছিঠমহলবাসী।

সাবেক ছিটের অধিবাসী শিল্পী, রাতুল ও রনজনা জানায়, আমাদের এখন দূরে গিয়ে বা পরিচয় লুকিয়ে পড়াশুনা করতে হচ্ছে না। এখানে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় বাড়ি থেকে সহজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়তে পারছে তারা। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধায় আমাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো।

বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন জানান, বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরফলে পিছিয়ে পরা মানুষগুলো উন্নয়নের ছোঁয়ায় সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে। এজন্য শেখ হাসিনা সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান সাবেক এই নেতা।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, ইতোমধ্যে সরকারের নেয়া পরিকল্পনাগুলোর বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। সাবেক ছিটমহলবাসীদের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যা যা করা দরকার তার পদক্ষেপ নেবে সরকার। এমনটাই জানালেন এই কর্মকর্তা।