শস্য রপ্তানি করতে ইউক্রেন প্রস্তত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। প্রথম চালান পাঠানোর সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে কিয়েভ। কৃষ্ণসাগরের চোরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন শেষে একথা জানান জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ অভিযান শুরুর কয়েক দিন পর কৃষ্ণসাগরে অবরোধ দেয় মস্কো। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক বিঘœ ঘটে। এ অবস্থা কাটাতে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। চুক্তি অনুযায়ী শস্যবাহী জাহাজ থাকবে অবরোধমুক্ত।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওডেসার কাছে বন্দরটি পরিদর্শন শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া যা করছে, তা পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি। তারা কৃষ্ণসাগর অবরোধ দিয়েছে। ইউক্রেনকে শস্য রপ্তানি করতে বাধা দিচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী শস্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে।’
‘আমরা ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুত। এখন অংশীদারদের কাছ থেকে সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছি।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলছে, কৃষ্ণসাগরে ১৭টি জাহাজ নোঙর করা আছে। এগুলোতে প্রায় ৬ লাখ টন শস্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি জাহাজে আছে শুধু ইউক্রেনের গম; পরিমাণ ৫ লাখ ৮০ হাজার টন।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাদানকারী হিসেবে বহাল থাকা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কৃষ্ণ সাগরে অবরোধ দিয়ে কেউ অন্য দেশের মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, আমরা তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ দিচ্ছি।
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ গম সরবরাহকারী দেশ মস্কো ও কিয়েভ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গেল পাঁচ মাস ধরে কৃষ্ণসাগর দিয়ে বাধাগ্রস্ত হয় শস্য রপ্তানি। গত সপ্তাহে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বন্দর দিয়ে শস্য রপ্তানি ফের শুরুর জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। রুশ হামলার পর বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংকট নিরসনে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রুশ আক্রমণের পর বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সংকট লাঘবের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তি সই নিয়ে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, চুক্তিটি ইউক্রেন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে দেবে এবং দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো এ থেকে উপকৃত হবে। চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চুক্তি অনুযায়ি কৃষ্ণসাগরের পূর্বপরিকল্পিত পথে পণ্যবাহী জাহাজ যাত্রা করার আগে ইউক্রেনীয় বন্দরগুলোতে শস্য ভর্তির কাজ নিরীক্ষণ করবে তুরস্ক, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের কর্মীদের একটি দল। ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে পেতে রাখা মাইন এড়াতে ইউক্রেনীয় নাবিকেরা জাহাজ মানচিত্র ব্যবহার করে শস্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলো নিয়ে যাবে। জাহাজগুলো কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করে তুরস্কের বসফরাস প্রণালির দিকে যাবে। জাতিসংঘ, ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা ইস্তাম্বুলের একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র থেকে জাহাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। ইউক্রেনে প্রবেশকারী জাহাজগুলোও একইভাবে যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হবে, যাতে তারা ইউক্রেনে অস্ত্র বহন করতে না পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেন অত্যাবশ্যক শস্য পরিবহন নিযুক্ত কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ বা বন্দরগুলোতে আক্রমণ করবে না।
গুতেরেস বলেন, ‘দুটি যুদ্ধরত দেশের মধ্যে এ ধরনের একটি চুক্তি ঐতিহাসিক। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে। বিশেষত, আমরা যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, তা তিনটি মূল ইউক্রেনীয় বন্দর ওদেসা, চেরনোমর্স্ক ও ইউঝনি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্যিক খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে দেবে।’
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলা জোরদার হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা ও অবিশ্বাস এখনো অনেক গভীর। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, জাতিসংঘের সঙ্গে শস্য রপ্তানি নিয়ে চুক্তি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে অন্য কোন নথিতে তারা সই করবেন না। তিনি বলেন, উসকানির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সামরিক জবাব দেবে ইউক্রেন।
চুক্তির অধীনে ইউক্রেনের বৃহত্তম রপ্তানি বন্দর ওদেসাসহ তিনটি বন্দর উন্মুক্ত করা হবে। গত সপ্তাহে কূটনীতিকেরা বলেছিলেন, চুক্তির আওতায় পোতাশ্রয়ে শস্যের চালানগুলো যৌথভাবে তল্লাশি করে দেখা হবে। রাশিয়ার উদ্বেগ, ইউক্রেনে অস্ত্র চোরাচালানের জন্য নৌপথ ব্যবহার হতে পারে। ওদেসা বন্দরে দুই কোটি টন শস্য আটকে রয়েছে। এ ছাড়া রুশ সেনাদের বাধার মুখে বেশ কিছু জাহাজ আটকে রয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, বর্তমান খাদ্যসংকট দূর করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২ , ১৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ১ মহররম ১৪৪৪
শস্য রপ্তানি করতে ইউক্রেন প্রস্তত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। প্রথম চালান পাঠানোর সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে কিয়েভ। কৃষ্ণসাগরের চোরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন শেষে একথা জানান জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ অভিযান শুরুর কয়েক দিন পর কৃষ্ণসাগরে অবরোধ দেয় মস্কো। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক বিঘœ ঘটে। এ অবস্থা কাটাতে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। চুক্তি অনুযায়ী শস্যবাহী জাহাজ থাকবে অবরোধমুক্ত।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওডেসার কাছে বন্দরটি পরিদর্শন শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া যা করছে, তা পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি। তারা কৃষ্ণসাগর অবরোধ দিয়েছে। ইউক্রেনকে শস্য রপ্তানি করতে বাধা দিচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী শস্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে।’
‘আমরা ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুত। এখন অংশীদারদের কাছ থেকে সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছি।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলছে, কৃষ্ণসাগরে ১৭টি জাহাজ নোঙর করা আছে। এগুলোতে প্রায় ৬ লাখ টন শস্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি জাহাজে আছে শুধু ইউক্রেনের গম; পরিমাণ ৫ লাখ ৮০ হাজার টন।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তাদানকারী হিসেবে বহাল থাকা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কৃষ্ণ সাগরে অবরোধ দিয়ে কেউ অন্য দেশের মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, আমরা তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ দিচ্ছি।
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ গম সরবরাহকারী দেশ মস্কো ও কিয়েভ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গেল পাঁচ মাস ধরে কৃষ্ণসাগর দিয়ে বাধাগ্রস্ত হয় শস্য রপ্তানি। গত সপ্তাহে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বন্দর দিয়ে শস্য রপ্তানি ফের শুরুর জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। রুশ হামলার পর বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংকট নিরসনে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রুশ আক্রমণের পর বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সংকট লাঘবের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তি সই নিয়ে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, চুক্তিটি ইউক্রেন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে দেবে এবং দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলো এ থেকে উপকৃত হবে। চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চুক্তি অনুযায়ি কৃষ্ণসাগরের পূর্বপরিকল্পিত পথে পণ্যবাহী জাহাজ যাত্রা করার আগে ইউক্রেনীয় বন্দরগুলোতে শস্য ভর্তির কাজ নিরীক্ষণ করবে তুরস্ক, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের কর্মীদের একটি দল। ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে পেতে রাখা মাইন এড়াতে ইউক্রেনীয় নাবিকেরা জাহাজ মানচিত্র ব্যবহার করে শস্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলো নিয়ে যাবে। জাহাজগুলো কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করে তুরস্কের বসফরাস প্রণালির দিকে যাবে। জাতিসংঘ, ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা ইস্তাম্বুলের একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র থেকে জাহাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। ইউক্রেনে প্রবেশকারী জাহাজগুলোও একইভাবে যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হবে, যাতে তারা ইউক্রেনে অস্ত্র বহন করতে না পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেন অত্যাবশ্যক শস্য পরিবহন নিযুক্ত কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ বা বন্দরগুলোতে আক্রমণ করবে না।
গুতেরেস বলেন, ‘দুটি যুদ্ধরত দেশের মধ্যে এ ধরনের একটি চুক্তি ঐতিহাসিক। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে। বিশেষত, আমরা যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, তা তিনটি মূল ইউক্রেনীয় বন্দর ওদেসা, চেরনোমর্স্ক ও ইউঝনি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্যিক খাদ্য রপ্তানির পথ খুলে দেবে।’
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলা জোরদার হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা ও অবিশ্বাস এখনো অনেক গভীর। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, জাতিসংঘের সঙ্গে শস্য রপ্তানি নিয়ে চুক্তি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে অন্য কোন নথিতে তারা সই করবেন না। তিনি বলেন, উসকানির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সামরিক জবাব দেবে ইউক্রেন।
চুক্তির অধীনে ইউক্রেনের বৃহত্তম রপ্তানি বন্দর ওদেসাসহ তিনটি বন্দর উন্মুক্ত করা হবে। গত সপ্তাহে কূটনীতিকেরা বলেছিলেন, চুক্তির আওতায় পোতাশ্রয়ে শস্যের চালানগুলো যৌথভাবে তল্লাশি করে দেখা হবে। রাশিয়ার উদ্বেগ, ইউক্রেনে অস্ত্র চোরাচালানের জন্য নৌপথ ব্যবহার হতে পারে। ওদেসা বন্দরে দুই কোটি টন শস্য আটকে রয়েছে। এ ছাড়া রুশ সেনাদের বাধার মুখে বেশ কিছু জাহাজ আটকে রয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, বর্তমান খাদ্যসংকট দূর করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।