নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সবুজ পাহাড়ি এলাকায় এবছর লটকনের ফলন অনেকটাই কম। তবে বাজার দর ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় গত বছরের তুলনায় ফলন এবার কম হয়েছে বলে জানান লটকন চাষিরা। বিশেষ করে উপজেলার জয়নগর,যোশর ও বাঘাব ইউনিয়নে সবুজ পাহাড়ি এলাকায় এ লটকনের চাষ ব্যাপকভাবে করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশী ছোট-বড় লটকনের বাগান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,উপজেলার প্রায় ১৪৫০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার সমতল এ ভূমি গুলোর মাটি লটকন চাষে খুবই উপযোগী হওয়ায় এবং এর চাষ খুবই লাভজনক তাই প্রতি বছরই এলাকা গুলোতে লটকন চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে এবং বাগানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর,আজকিতলা ,গিলাবের ও যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা,কামারটেক গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এলাকাগুলোতে বিগত প্রায় ২৫-৩০ বছর পূর্বে স্বল্প পরিষরে লটকনের চাষ শুরু করা হয়েছিল।সে সময় লটকনের তেমন চাহিদা ছিলনা এবং দামও ছিল কম। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই এলাকার লটকনের পরিচিতি লাভকরে এবং এখানকার লটকন গুলো সুস্বাদু হওয়ায় প্রতিনিয়তই এর চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও বাজারদর ও ভালো হতে থাকে। অন্যান্য ফল চাষের তুলনায় লটকন চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরাও লটকন চাষে ঝুকে পরেছে। বর্তমানে শিবপুরের লটকনের চাহিদা সারা দেশব্যাপী এমনকি রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও। জয়নগর গ্রামের লটকন চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন,আমার প্রায় ২০০ শতাংশ জমিতে লটকনের বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন ভালো হয়েছিল কিন্তু বাজারদর এবছরের তুলনায় কম থাকলেও আমি প্রায় ৮ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে কিন্তু বাজারদর ভালো হওয়ায় প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা গ্রামের লটকন চাষি ইমাম উদ্দিন সরকার বলেন,আমার ৩০০ শতাংশ জমিতে লটকন বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন খুবই ভালো হয়েছিল এবং প্রায় ১৭-১৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবার ফলন অনেকটাই কম হয়েছে কিন্তু বাজারদর ইনশাআল্লাহ ভালো। এ বছর বাজারে প্রকারভেদে লটকনের দাম কেজি প্রতি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা তাই আশা করছি ১৪-১৫ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারব। লটকনের পাইকারী বাজার চৈতন্যা ,কামারটেক ,মরজাল বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়,বাজার গুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাবসায়ীরা এসে চাষিদের কাছ থেকে পাইকারী দরে লটকন ক্রয় করে তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে বিক্রয় করার জন্য। মরজাল বাসস্ট্যান্ড বাজারে কথা হয় মানিকগঞ্জ থেকে আশা লটকন ব্যাবসায়ী সোলায়মান এর সাথে। তিনি বলেন,আমি প্রায় ১০ বছর যাবত এই এলাকার লটকন কিনে নিয়ে ব্যাবসায় করে আসছি। এ বছর ভালো মানের লটকন ১২০-১৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। কামারটেক বাজারে সিলেট থেকে আসা ব্যাবসায়ী আলম জানান,আমি মধ্যম ধরনের লটকন কেজি প্রতি ৯০-১১০ টাকা দরে প্রায় ৭-৮ মন লটকন ক্রয় করে আমার এলাকায় নিয়ে বিক্রি করি। আমার যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা ব্যাবসা হয়। এব্যাপারে শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন,উপজেলার পাহাড়ী এলাকার মাটি লটকন চাষে খুবই উপযোগী এবং এই এলাকার লটকনের চাহিদা রয়েছে সারা দেশব্যাপী এমনকি এখানকার লটকন দেশের বাহিরেও রপ্তানী হচ্ছে। গত বছর দুই থেকে তিন টন লটকন দেশের বাহিরে রপ্তানী হয়েছে। এবছর আরো বেশী চাহিদা রয়েছে। শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফারহানা আহম্মেদ বলেন,লটকন একটি সুস্বাদু পুষ্টিগুন ও ভিটামিন -সি সমৃদ্ধ ফল।
সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২ , ১৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২ মহররম ১৪৪৪
এ.কে.এম মাসুদ রানা, শিবপুর (নরসিংদী)
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সবুজ পাহাড়ি এলাকায় এবছর লটকনের ফলন অনেকটাই কম। তবে বাজার দর ভালো পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি। আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় গত বছরের তুলনায় ফলন এবার কম হয়েছে বলে জানান লটকন চাষিরা। বিশেষ করে উপজেলার জয়নগর,যোশর ও বাঘাব ইউনিয়নে সবুজ পাহাড়ি এলাকায় এ লটকনের চাষ ব্যাপকভাবে করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশী ছোট-বড় লটকনের বাগান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,উপজেলার প্রায় ১৪৫০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার সমতল এ ভূমি গুলোর মাটি লটকন চাষে খুবই উপযোগী হওয়ায় এবং এর চাষ খুবই লাভজনক তাই প্রতি বছরই এলাকা গুলোতে লটকন চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে এবং বাগানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর,আজকিতলা ,গিলাবের ও যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা,কামারটেক গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এলাকাগুলোতে বিগত প্রায় ২৫-৩০ বছর পূর্বে স্বল্প পরিষরে লটকনের চাষ শুরু করা হয়েছিল।সে সময় লটকনের তেমন চাহিদা ছিলনা এবং দামও ছিল কম। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই এলাকার লটকনের পরিচিতি লাভকরে এবং এখানকার লটকন গুলো সুস্বাদু হওয়ায় প্রতিনিয়তই এর চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও বাজারদর ও ভালো হতে থাকে। অন্যান্য ফল চাষের তুলনায় লটকন চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরাও লটকন চাষে ঝুকে পরেছে। বর্তমানে শিবপুরের লটকনের চাহিদা সারা দেশব্যাপী এমনকি রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও। জয়নগর গ্রামের লটকন চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন,আমার প্রায় ২০০ শতাংশ জমিতে লটকনের বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন ভালো হয়েছিল কিন্তু বাজারদর এবছরের তুলনায় কম থাকলেও আমি প্রায় ৮ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে কিন্তু বাজারদর ভালো হওয়ায় প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। যোশর ইউনিয়নের চৈতন্যা গ্রামের লটকন চাষি ইমাম উদ্দিন সরকার বলেন,আমার ৩০০ শতাংশ জমিতে লটকন বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন খুবই ভালো হয়েছিল এবং প্রায় ১৭-১৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এবার ফলন অনেকটাই কম হয়েছে কিন্তু বাজারদর ইনশাআল্লাহ ভালো। এ বছর বাজারে প্রকারভেদে লটকনের দাম কেজি প্রতি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা তাই আশা করছি ১৪-১৫ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারব। লটকনের পাইকারী বাজার চৈতন্যা ,কামারটেক ,মরজাল বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়,বাজার গুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাবসায়ীরা এসে চাষিদের কাছ থেকে পাইকারী দরে লটকন ক্রয় করে তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে বিক্রয় করার জন্য। মরজাল বাসস্ট্যান্ড বাজারে কথা হয় মানিকগঞ্জ থেকে আশা লটকন ব্যাবসায়ী সোলায়মান এর সাথে। তিনি বলেন,আমি প্রায় ১০ বছর যাবত এই এলাকার লটকন কিনে নিয়ে ব্যাবসায় করে আসছি। এ বছর ভালো মানের লটকন ১২০-১৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। কামারটেক বাজারে সিলেট থেকে আসা ব্যাবসায়ী আলম জানান,আমি মধ্যম ধরনের লটকন কেজি প্রতি ৯০-১১০ টাকা দরে প্রায় ৭-৮ মন লটকন ক্রয় করে আমার এলাকায় নিয়ে বিক্রি করি। আমার যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা ব্যাবসা হয়। এব্যাপারে শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন,উপজেলার পাহাড়ী এলাকার মাটি লটকন চাষে খুবই উপযোগী এবং এই এলাকার লটকনের চাহিদা রয়েছে সারা দেশব্যাপী এমনকি এখানকার লটকন দেশের বাহিরেও রপ্তানী হচ্ছে। গত বছর দুই থেকে তিন টন লটকন দেশের বাহিরে রপ্তানী হয়েছে। এবছর আরো বেশী চাহিদা রয়েছে। শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফারহানা আহম্মেদ বলেন,লটকন একটি সুস্বাদু পুষ্টিগুন ও ভিটামিন -সি সমৃদ্ধ ফল।