৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায় আওয়ামী লীগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের তিনশ’ আসনে ইভিএমে ভোটের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে দলটি নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ছিলেন আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পুপ্পু, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ড. সেলিম মাহমুদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং বেগম শামসুন নাহার।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭০ থেকে আমরা নির্বাচন দেখে এসেছি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন আমরা জানি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন এক অর্থে সাম্প্রতিক। রাষ্ট্রপতিশাসিত নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে ১৯৯১ সাল থেকে সম্ভবত নির্বাচন হচ্ছে। অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই রাজনৈতিক পরিম-লে সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।’ সিইসি বলেন, ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কমিশনের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে কমিশনকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকেই সংলাপের আয়োজন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে চেষ্টা আন্তরিকভাবে করে যাব। এই সংলাপ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। বড় দলের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকে। পরপর তিনবার সরকারে অধিষ্ঠিত। এজন্য সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে থাকে। কিন্তু সংবিধানে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে কোন কথা নেই। আমি যদি ভুল বুঝে না থাকি, আওয়ামী লীগ আর দশটি দলের মতোই একটি রাজনৈতিক দল। সরকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এটি অবস্থানের একটি দ্বিমাত্রিকতা। কমিশনের ইচ্ছা, সদিচ্ছা এবং অনুভূতি, সরকার এবং আপনার দলের সবাইকে অবহিত করে বাধিত করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সংলাপে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। অনেক পার্টি মনে করছে একদিনে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপ্রতুলতার কথা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেকে বলেছেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য। জনমানুষের সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা অনেক বেশি বলে তারা মনে করছেন। আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।’

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৫ দফা লিখিত প্রস্তাব করা হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মনে-প্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। চেতনায় ধারণ করি। কোন বিশেষ এলাকা নয়। দেশের তিনশ’ আসনে ইভিএমে ভোট হোক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।’

সংলাপে নিজেদের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী উল্লেখ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’-কে সর্বাত্মক সহায়তা করবে বলে ইসিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।

দলটি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনভাবেই কোন দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

এছাড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোন দেশের কূটনীতিক কিংবা দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট দেশের স্বার্থের সংঘাত রয়েছেÑ এমন ব্যক্তিবর্গকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক করা যায় না উল্লেখ করে বলেছে, এই আইনের আওতায় কেবলমাত্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্য। বিগত সংসদ নির্বাচন এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই আইনের কিছু ব্যত্যয় ঘটেছিল, যা আমরা নির্বাচন কমিশনের নজরে এনেছিলাম। এই বিষয়ে আইন, বিধি-বিধান এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।

এ দেশে ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতি এবং প্রহসনের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ভিকটিম আওয়ামী লীগ উল্লেখ করে দলটি তার প্রস্তাবে জানায়, আমরা মনে করি, প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোন বিকল্প নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি এসব বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব। তারা দেশে ইভিএম পদ্ধতিটি জনগণের কাছে অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেছে।

বর্তমান ইসির হাতে থাকা এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি ইভিএম মেশিন দিয়ে ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেয়া সম্ভব। এ বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ বলেছে, আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে যেসব দল অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আমীর হোসেন আমু। আমু বলেন, ‘সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সবাই কিন্তু নির্বাচনে থাকে। যখন যাকে প্রয়োজন হয় তখন তাকে কাজে লাগানো হয়। আমি বলতে পারি যারা আপনাদের সঙ্গে সংলাপে এসেছে, তারা যে পথেরই হোক না কেন নির্বাচনে কিন্তু যাবে। যদিও কিছু কিছু কারণে তারা কিছু ব্যতিক্রম কথা বলেছে।

ওবায়দুল কাদের যে ১৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন সেগুলো হলো :

১. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন।

২. নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা।

৩. বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। এইসব ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

৪. ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং বিএনপি কর্তৃক এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টির অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ বৃদ্ধি করা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের মতো আমরাও মনে করি প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভিএমের কার্যকর ব্যবহার ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং নির্বাচনে নানা জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ করবে। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পরিবর্তে কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।

৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ।

৮. দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা।

কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী (আরপিও ১৯৭২, অনুচ্ছেদ ৯১সি) নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধানের আলোকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি প্রদান করতে হবে। আরপিও-এর অনুচ্ছেদ ৯১(সি) লঙ্ঘন করে কোন ব্যক্তি বা সংস্থাকে দেশি কিংবা বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমতি দেয়া যায় না।

প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনভাবেই কোন দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

৯. নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা।

১০. নির্বাচনের আগে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১১. নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা।

১২. নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।

১৩. অ্যাডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা।

১৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘ঢ়ধংঃ ধহফ পষড়ংবফ পযধঢ়ঃবৎ।’ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে দেশে দুটি জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এ বিষয়ে অন্য কোন কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোন মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘন করার শামিল।

১৫. আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে।

এ সময় কাদের বলেন, গত তিন মেয়াদে সব বাধা অতিক্রম করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে। সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাপকভিত্তিক আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকা- ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি, এবং আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র এই ধরনের উন্নয়নের নজির স্থাপন করতে পারেনি। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোন সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বরং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক বলেন, ‘এ দেশে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সাংবিধানিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পশ্চিমা বিশ্বের ‘অহমষড় ঝধীড়হ’ মডেলের। পশ্চিমা গণতন্ত্র শত শত বছরের চর্চার মধ্য দিয়ে টেকসই হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি প্রায় ১৫ কোটি

২০২১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ২১ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৬ টাকা। একই সময়ে দলটি ব্যয় করেছে ছয় কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৮৫২ টাকা। অর্থাৎ গত বছর খরচের চেয়ে প্রায় ১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে দলটির।

গতকাল গত বছরের (২০২১ সাল) আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকারের কাছে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এ হিসাব জমা দেন। সেখানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। দলটি মনোনয়নপত্র ও সদস্য ফরম বিক্রি থেকে বেশি আয় করেছে বলে হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের গত দুই বছরের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দলটির আয় বেড়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখের বেশি। তবে আগের বছরের (২০২০) তুলনায় ২০২১ সালে দলটির ব্যয় কমেছে তিন কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ব্যাংকে জমা আছে ৭০ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ১৬৬ টাকা।

সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২ , ১৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২ মহররম ১৪৪৪

৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায় আওয়ামী লীগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের তিনশ’ আসনে ইভিএমে ভোটের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে দলটি নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ছিলেন আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পুপ্পু, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ড. সেলিম মাহমুদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং বেগম শামসুন নাহার।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭০ থেকে আমরা নির্বাচন দেখে এসেছি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন আমরা জানি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন এক অর্থে সাম্প্রতিক। রাষ্ট্রপতিশাসিত নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে ১৯৯১ সাল থেকে সম্ভবত নির্বাচন হচ্ছে। অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই রাজনৈতিক পরিম-লে সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।’ সিইসি বলেন, ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কমিশনের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে কমিশনকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকেই সংলাপের আয়োজন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে চেষ্টা আন্তরিকভাবে করে যাব। এই সংলাপ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। বড় দলের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকে। পরপর তিনবার সরকারে অধিষ্ঠিত। এজন্য সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে থাকে। কিন্তু সংবিধানে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে কোন কথা নেই। আমি যদি ভুল বুঝে না থাকি, আওয়ামী লীগ আর দশটি দলের মতোই একটি রাজনৈতিক দল। সরকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এটি অবস্থানের একটি দ্বিমাত্রিকতা। কমিশনের ইচ্ছা, সদিচ্ছা এবং অনুভূতি, সরকার এবং আপনার দলের সবাইকে অবহিত করে বাধিত করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সংলাপে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। অনেক পার্টি মনে করছে একদিনে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপ্রতুলতার কথা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেকে বলেছেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য। জনমানুষের সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা অনেক বেশি বলে তারা মনে করছেন। আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।’

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৫ দফা লিখিত প্রস্তাব করা হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মনে-প্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। চেতনায় ধারণ করি। কোন বিশেষ এলাকা নয়। দেশের তিনশ’ আসনে ইভিএমে ভোট হোক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।’

সংলাপে নিজেদের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী উল্লেখ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’-কে সর্বাত্মক সহায়তা করবে বলে ইসিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।

দলটি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনভাবেই কোন দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

এছাড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোন দেশের কূটনীতিক কিংবা দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট দেশের স্বার্থের সংঘাত রয়েছেÑ এমন ব্যক্তিবর্গকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক করা যায় না উল্লেখ করে বলেছে, এই আইনের আওতায় কেবলমাত্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্য। বিগত সংসদ নির্বাচন এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই আইনের কিছু ব্যত্যয় ঘটেছিল, যা আমরা নির্বাচন কমিশনের নজরে এনেছিলাম। এই বিষয়ে আইন, বিধি-বিধান এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।

এ দেশে ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতি এবং প্রহসনের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ভিকটিম আওয়ামী লীগ উল্লেখ করে দলটি তার প্রস্তাবে জানায়, আমরা মনে করি, প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোন বিকল্প নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি এসব বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায় সম্ভব। তারা দেশে ইভিএম পদ্ধতিটি জনগণের কাছে অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেছে।

বর্তমান ইসির হাতে থাকা এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি ইভিএম মেশিন দিয়ে ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেয়া সম্ভব। এ বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ বলেছে, আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে যেসব দল অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আমীর হোসেন আমু। আমু বলেন, ‘সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সবাই কিন্তু নির্বাচনে থাকে। যখন যাকে প্রয়োজন হয় তখন তাকে কাজে লাগানো হয়। আমি বলতে পারি যারা আপনাদের সঙ্গে সংলাপে এসেছে, তারা যে পথেরই হোক না কেন নির্বাচনে কিন্তু যাবে। যদিও কিছু কিছু কারণে তারা কিছু ব্যতিক্রম কথা বলেছে।

ওবায়দুল কাদের যে ১৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন সেগুলো হলো :

১. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন।

২. নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা।

৩. বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। এইসব ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

৪. ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং বিএনপি কর্তৃক এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টির অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ বৃদ্ধি করা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের মতো আমরাও মনে করি প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভিএমের কার্যকর ব্যবহার ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং নির্বাচনে নানা জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ করবে। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পরিবর্তে কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।

৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ।

৮. দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা।

কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী (আরপিও ১৯৭২, অনুচ্ছেদ ৯১সি) নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধানের আলোকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি প্রদান করতে হবে। আরপিও-এর অনুচ্ছেদ ৯১(সি) লঙ্ঘন করে কোন ব্যক্তি বা সংস্থাকে দেশি কিংবা বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমতি দেয়া যায় না।

প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনভাবেই কোন দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

৯. নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা।

১০. নির্বাচনের আগে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১১. নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা।

১২. নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবলমাত্র আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা।

১৩. অ্যাডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা।

১৪. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘ঢ়ধংঃ ধহফ পষড়ংবফ পযধঢ়ঃবৎ।’ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে দেশে দুটি জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এ বিষয়ে অন্য কোন কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোন মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘন করার শামিল।

১৫. আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে।

এ সময় কাদের বলেন, গত তিন মেয়াদে সব বাধা অতিক্রম করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে। সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাপকভিত্তিক আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকা- ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি, এবং আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এত অল্প সময়ে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র এই ধরনের উন্নয়নের নজির স্থাপন করতে পারেনি। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোন সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বরং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক বলেন, ‘এ দেশে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সাংবিধানিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পশ্চিমা বিশ্বের ‘অহমষড় ঝধীড়হ’ মডেলের। পশ্চিমা গণতন্ত্র শত শত বছরের চর্চার মধ্য দিয়ে টেকসই হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি প্রায় ১৫ কোটি

২০২১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ২১ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৬ টাকা। একই সময়ে দলটি ব্যয় করেছে ছয় কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৮৫২ টাকা। অর্থাৎ গত বছর খরচের চেয়ে প্রায় ১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে দলটির।

গতকাল গত বছরের (২০২১ সাল) আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকারের কাছে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এ হিসাব জমা দেন। সেখানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। দলটি মনোনয়নপত্র ও সদস্য ফরম বিক্রি থেকে বেশি আয় করেছে বলে হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের গত দুই বছরের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দলটির আয় বেড়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখের বেশি। তবে আগের বছরের (২০২০) তুলনায় ২০২১ সালে দলটির ব্যয় কমেছে তিন কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ব্যাংকে জমা আছে ৭০ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ১৬৬ টাকা।