রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। শুনানি শেষে ঢাকা অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) আসাদুজ্জামান নুর তাদের প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেনÑ জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুর রহমান সোহেল (ঘাতক সোহেল), মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটু। টিপুর হত্যার প্রধান সমন্বয়কারী সুমন শিকদার ওরফে মুসার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, টিপু হত্যায় এর আগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া জবানবন্দি এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে খুনের সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী সুমন সিকদার মুসাকে ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনা হয়। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার মতিঝিল ও আশপাশের এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

তিনি বলেন, টিপু হত্যায় এদের কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক তথ্য সামনে আসবে। ডিবি সূত্রে জানা যায়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফেরানোর পর একাধিক দফায় হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মুসা। কিলিং মিশনে কার কী ভূমিকা ছিল সেটি তার বক্তব্যে উঠে আসে। মুসার তথ্য যাচাই করতে বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি। টিপু হত্যার পরিকল্পনায় টিটু, রবিন ও সোহেল সম্পৃক্ত। এরমধ্যে টিটু সবচেয়ে দুর্ধর্ষ। তার সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কীর সঙ্গে এক সময় তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কীকে হত্যা করা হয়েছিল।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন টিপু হত্যার ঘটনায় শুটার ছিলেন মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। পুরানা পল্টনের আর্মস মিউজিয়াম নামের একটি অস্ত্রের দোকানের গুলি টিপু হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়। ওই দোকানের কর্ণধার ইমরান হোসেন জিতুর কাছ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি নিয়ে মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুর রহমান রাকিব পৌঁছে দেন সুমন সিকদার মুসার হাতে। এছাড়া দুবাইয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টির নির্দেশে ইশতিয়াক আহমেদ জিতু অস্ত্র দেন মোল্লা শামীমের কাছে।

কিলিং মিশনের সময় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মোল্লা শামীম। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। মুসার মতো ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরাতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ বছরের ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানাধীন ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটা শো-রুমের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম টিপুর ওপর হামলা করেন। তারা তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। দুই খুনের ঘটনায় সর্বশেষ চারজনসহ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও চার থেকে পাঁচজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলে ডিবি সূত্রে জানা গেছে।