প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের ওপর ছয় দফা সুপারিশ

নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্য রোধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা প্রকাশ করাসহ অংশীজনদের মতামতের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’। তারা শিক্ষা আইনের ওপর ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন।

গতকাল রাজধানীর ‘পিকেএসএফ’ সভাকক্ষে ‘শিক্ষা আইন : নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গণসাক্ষরতা এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এই সুপারিশ তুলে ধরেন। এ সময় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, উপরিচালক কেএম এনামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

যথাযথ আইন প্রণীত না হলে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা অধিকারের বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করনে গণসাক্ষরতা অভিযানের কর্তা-ব্যক্তিরা।

সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’-এর আলোকে ২০১২ সালে একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে একটি খসড়া আইন সবার মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচের সমন্বয়ে নাগরিক সমাজের মতামত সংকলন করে ওই সময় তখন কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আইনটির চূড়ান্ত রূপ আমরা এখনও দেখিনি।’

ছয় সুপারিশ হলো

১. ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ অতি দ্রুত প্রণয়ন ও গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

২. ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত শিক্ষা আইনের খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের আহ্বান করা হলে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও মতবিনিময় করে একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করে এবং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করে। সেই সুপারিশমালার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া পরিমার্জন করা হয়েছে কি না বা এ সংক্রান্ত কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা সবার জানা বাঞ্ছনীয়।

৩. নতুন খসড়া আইন হয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের আগে প্রকাশ করা জরুরি, যাতে সংশ্লিষ্ট এবং আগ্রহী কেউ থাকলে তাদের মতামত দিতে পারেন। বিশেষ করে শিক্ষা অধিকার, নোট বই, গাইড বই, কোচিং বাণিজ্য রোধে প্রস্তাবিত আইনে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এসব বিষয়ে নাগরিক সমাজকে জানানো এবং তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।

৪. বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও কোভিড প্রতিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটও আইনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচ্য।

৫. শিক্ষা বিষয়ে যথাযথ দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের’ বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করে এসব বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।

৬. অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্র্থীদের অধিকার হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংবিধানে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিধৃত, শিশুর অধিকার হিসেবে নয়।

উদাহরণ স্বরূপ ভারতে মৌলিক শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসেবে আইনিভাবে স্বীকৃত।

সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২ , ১৭ শ্রাবণ ১৪২৯ ২ মহররম ১৪৪৪

নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্য রোধে

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের ওপর ছয় দফা সুপারিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্য রোধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা প্রকাশ করাসহ অংশীজনদের মতামতের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’। তারা শিক্ষা আইনের ওপর ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন।

গতকাল রাজধানীর ‘পিকেএসএফ’ সভাকক্ষে ‘শিক্ষা আইন : নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গণসাক্ষরতা এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এই সুপারিশ তুলে ধরেন। এ সময় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, উপরিচালক কেএম এনামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

যথাযথ আইন প্রণীত না হলে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা অধিকারের বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করনে গণসাক্ষরতা অভিযানের কর্তা-ব্যক্তিরা।

সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’-এর আলোকে ২০১২ সালে একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে একটি খসড়া আইন সবার মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচের সমন্বয়ে নাগরিক সমাজের মতামত সংকলন করে ওই সময় তখন কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আইনটির চূড়ান্ত রূপ আমরা এখনও দেখিনি।’

ছয় সুপারিশ হলো

১. ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ অতি দ্রুত প্রণয়ন ও গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

২. ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত শিক্ষা আইনের খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের আহ্বান করা হলে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও মতবিনিময় করে একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করে এবং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পেশ করে। সেই সুপারিশমালার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া পরিমার্জন করা হয়েছে কি না বা এ সংক্রান্ত কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা সবার জানা বাঞ্ছনীয়।

৩. নতুন খসড়া আইন হয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের আগে প্রকাশ করা জরুরি, যাতে সংশ্লিষ্ট এবং আগ্রহী কেউ থাকলে তাদের মতামত দিতে পারেন। বিশেষ করে শিক্ষা অধিকার, নোট বই, গাইড বই, কোচিং বাণিজ্য রোধে প্রস্তাবিত আইনে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এসব বিষয়ে নাগরিক সমাজকে জানানো এবং তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।

৪. বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও কোভিড প্রতিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটও আইনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচ্য।

৫. শিক্ষা বিষয়ে যথাযথ দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের’ বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করে এসব বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।

৬. অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্র্থীদের অধিকার হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংবিধানে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিধৃত, শিশুর অধিকার হিসেবে নয়।

উদাহরণ স্বরূপ ভারতে মৌলিক শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসেবে আইনিভাবে স্বীকৃত।