আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছাড়াও বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছেও ঋণ চেয়েছে সরকার। এই দুই সংস্থার কাছে ২০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক, দুই সংস্থার কাছেই ১০০ কোটি ডলার করে চাওয়া হয়েছে। এডিবির কাছে পুরোটাই বাজেট সহায়তা। আর বিশ্বব্যাংকের কাছে ২৫ কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত তহবিল থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন তিনি আইএমএফের কাছে লেখা চিঠিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেননি।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সামাল দিতেই এ সব ঋণ চাওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ‘সংকট’ আরও গভীর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। সে কারণে বিদেশি ঋণের প্রয়োজন।
আইএমএফের ঋণ নিয়ে দেশে দেশে সমালোচনা আছে। ঋণদাতা হিসেবে বিশ্বে বেশ অজনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। আইএমএফের বিরুদ্ধ সবচেয়ে বড় অভিযোগ, বাস্তবতা যাই হোক না কেন সব দেশের জন্য তাদের শর্ত প্রায় একই। আর এসব শর্ত পূরণ করতেই ঝামেলায় পড়ে অনেক দেশ, আরও বিপদে পড়ে অর্থনীতি।
১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া সংকটের সময় আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আরও বিপদে পড়ে যায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। তাদের মন্দা আরও তীব্র হয়েছিল, বেড়েছিল বেকারত্ব। ২০০১ সালে আর্জেন্টিনাও আইএমএফের বড় ব্যর্থতা। তবে ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সম্প্রতি গ্রিস ও সাইপ্রাস ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সাম্প্রতিক গ্রিস ও সাইপ্রাস সফলতা বলেই অনেকে বলেন।
আইএমএফের ঋণ পেতে অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো কী, কীভাবে তা পূরণ করা হবে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলছেন, ‘আমরা চাই ভালো শর্তে, ভালো সুদহারে ঋণ। আইএমএফ কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, তা দেখতে হবে। আইএমএফকে ইতিবাচক দেখা গেলে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেয়ার কথা বিবেচনা করা যায়।’
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণ
আগামী তিন অর্থবছরে ২৫ কোটি ডলার করে মোট ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের কাছে দেয়া হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবিলায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর যে তহবিল গঠন করেছে তাতে বাংলাদেশও প্রায় ২৫ কোটি ডলারের মতো সহয়তা পেতে পারে।
আগামী অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে নতুন বাজেট সহায়তার আকার ঠিক হতে পারে।
এডিবির কাছে গত এপ্রিল মাসে সামষ্টিক অর্থনীতে সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলায় ১০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। তবে এডিবি এখনও ‘চূড়ান্ত কিছু জানায়নি’ বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। প্রতি অর্থবছরে ৫০ কোটি বা ২৫ কোটি ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় পেতে আলোচনা করবে সরকার।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবিলায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে চুক্তি করেছিল সরকার। তার মধ্যে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। আর বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি অর্থবছরে ছাড় হবে।
আর এডিবি আগে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবিলায় ৯৪ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল। সেখান থেকে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হওয়া বাকি আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ওই অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
আইএমএফের ঋণ ও শর্তের আলোচনা
ইতোমধ্যেই আইএমএফের সঙ্গে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন ‘তহবিলের বিদ্যমান নীতি ও প্রক্রিয়ার আলোকে কর্মসূচি প্রণয়নে আইএমএফ কর্মকর্তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনায় যে কর্মসূচি ঠিক হবে, সে অনুযায়ী সহায়তার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।’
ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসের শেষের দিকে আইএমএফকে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে বলা হয়, সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থ প্রয়োজন।
আর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলছে, এর মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরটিএস) কর্মসূচির আওতায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারও রয়েছে।
বাংলাদেশ আইএমএফের রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিটিস বা আরএসএফ ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।
যে তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ চেয়েছে বলে আইএমএফের তরফে বলা হচ্ছে, তা থেকে নি¤œ আয়ের দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ঋণ দেয়া হয়। কোভিড মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য নীতি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়া হয় এই প্রকল্পে। ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ, তার প্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। আর ঋণে সুদের হার আলোচনার মধ্যদিয়ে ঠিক হবে।
মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ , ১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩ মহররম ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছাড়াও বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছেও ঋণ চেয়েছে সরকার। এই দুই সংস্থার কাছে ২০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক, দুই সংস্থার কাছেই ১০০ কোটি ডলার করে চাওয়া হয়েছে। এডিবির কাছে পুরোটাই বাজেট সহায়তা। আর বিশ্বব্যাংকের কাছে ২৫ কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত তহবিল থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন তিনি আইএমএফের কাছে লেখা চিঠিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেননি।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সামাল দিতেই এ সব ঋণ চাওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ‘সংকট’ আরও গভীর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। সে কারণে বিদেশি ঋণের প্রয়োজন।
আইএমএফের ঋণ নিয়ে দেশে দেশে সমালোচনা আছে। ঋণদাতা হিসেবে বিশ্বে বেশ অজনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আইএমএফ। আইএমএফের বিরুদ্ধ সবচেয়ে বড় অভিযোগ, বাস্তবতা যাই হোক না কেন সব দেশের জন্য তাদের শর্ত প্রায় একই। আর এসব শর্ত পূরণ করতেই ঝামেলায় পড়ে অনেক দেশ, আরও বিপদে পড়ে অর্থনীতি।
১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া সংকটের সময় আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আরও বিপদে পড়ে যায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। তাদের মন্দা আরও তীব্র হয়েছিল, বেড়েছিল বেকারত্ব। ২০০১ সালে আর্জেন্টিনাও আইএমএফের বড় ব্যর্থতা। তবে ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সম্প্রতি গ্রিস ও সাইপ্রাস ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সাম্প্রতিক গ্রিস ও সাইপ্রাস সফলতা বলেই অনেকে বলেন।
আইএমএফের ঋণ পেতে অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো কী, কীভাবে তা পূরণ করা হবে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলছেন, ‘আমরা চাই ভালো শর্তে, ভালো সুদহারে ঋণ। আইএমএফ কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, তা দেখতে হবে। আইএমএফকে ইতিবাচক দেখা গেলে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেয়ার কথা বিবেচনা করা যায়।’
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণ
আগামী তিন অর্থবছরে ২৫ কোটি ডলার করে মোট ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের কাছে দেয়া হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবিলায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর যে তহবিল গঠন করেছে তাতে বাংলাদেশও প্রায় ২৫ কোটি ডলারের মতো সহয়তা পেতে পারে।
আগামী অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে নতুন বাজেট সহায়তার আকার ঠিক হতে পারে।
এডিবির কাছে গত এপ্রিল মাসে সামষ্টিক অর্থনীতে সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলায় ১০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। তবে এডিবি এখনও ‘চূড়ান্ত কিছু জানায়নি’ বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। প্রতি অর্থবছরে ৫০ কোটি বা ২৫ কোটি ডলারের ঋণের অর্থ ছাড় পেতে আলোচনা করবে সরকার।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবিলায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে চুক্তি করেছিল সরকার। তার মধ্যে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। আর বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি অর্থবছরে ছাড় হবে।
আর এডিবি আগে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবিলায় ৯৪ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল। সেখান থেকে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হওয়া বাকি আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ওই অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
আইএমএফের ঋণ ও শর্তের আলোচনা
ইতোমধ্যেই আইএমএফের সঙ্গে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন ‘তহবিলের বিদ্যমান নীতি ও প্রক্রিয়ার আলোকে কর্মসূচি প্রণয়নে আইএমএফ কর্মকর্তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনায় যে কর্মসূচি ঠিক হবে, সে অনুযায়ী সহায়তার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।’
ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসের শেষের দিকে আইএমএফকে একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে বলা হয়, সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থ প্রয়োজন।
আর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলছে, এর মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরটিএস) কর্মসূচির আওতায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারও রয়েছে।
বাংলাদেশ আইএমএফের রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিটিস বা আরএসএফ ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ এগিয়ে নিতে অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।
যে তহবিল থেকে বাংলাদেশ অর্থ চেয়েছে বলে আইএমএফের তরফে বলা হচ্ছে, তা থেকে নি¤œ আয়ের দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ঋণ দেয়া হয়। কোভিড মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য নীতি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়া হয় এই প্রকল্পে। ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ, তার প্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। আর ঋণে সুদের হার আলোচনার মধ্যদিয়ে ঠিক হবে।