কৌশলপত্র তৈরির পর বিশেষ সংলাপে বসবে ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক করার পর ফের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আবারও আমন্ত্রণ জানানো হবে বিএনপিকে। সেই সংলাপে চূড়ান্ত হবে, ইভিএমসহ অন্য বিষয়। আগামী জুনে নির্বাচনী কাজ গুছিয়ে আনতে চায় কমিশন, আর বাস্তবায়ন শুরু হবে জুলাই থেকে। সদ্য সমাপ্ত সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ পর্যালোচনা করে শীঘ্রই একটি কৌশলপত্র প্রস্তুত করবে ইসি।

গণমাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে তারা পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ফের গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ জন ও দলগুলোকে ডাকা হবে। এক্ষেত্রে ডাকা হবে প্রথম সংলাপে সাড়া না দেয়া বিএনপিকেও।

রোডম্যাপ তৈরির পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আবারও সংলাপ করবে ইসি, তখনও বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। গতকাল তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল ইসির কাছে সমান। যখন প্রয়োজন হবে তাদের ডাকা হবে। আবার যেকোন রাজনৈতিক দল তাদের প্রয়োজনে ইসির সঙ্গে বসতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আমন্ত্রিত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এতে বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। তবে, সময় চেয়েছে দুটি দল। সংলাপে ২৮ দলের কাছ থেকে প্রায় ৩৫০ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দল নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানিয়েছে। জানা গেছে, রোডম্যাপ তৈরির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপ করবে ইসি।

সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ১৫টি দল নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন ১১টি দল। সংলাপে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের সরাসরি বিরোধিতা করেছে ৭টি দল। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় ছয়টি দল। এরমধ্যে চারটি রাজনৈতিক দল এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে ৮টি রাজনৈতিক দল। ওই দলগুলো ইসির নিজস্ব জনবল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে সংলাপে অংশ নিতে না পারায় দুটি দল সময় চেয়েছে।

তবে, বিএনপি ইসির ডাকে সাড়া না দিলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ছাড়া ভোটে অংশগ্রহণ করবেন না। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির সমমনারা দলগুলো ৩০০ আসনে ইভিএম নির্বাচন করার প্রস্তাব দিলেও বিরোধীপক্ষ তা নাকচ করে দিয়েছেন। গত রোববার সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। চেতনায় ধারণ করি। কোন বিশেষ এলাকা নয়। দেশের ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট হোক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।’ জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন ‘ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে কোন আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, ইভিএমে ভোট পাল্টে দেয়া হলে কিছু করার নেই। কারণ, ফল রি-চেক করা যায় না।’

তবে ক্ষমতাসীন দল এসব নাকচ করে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে নেই। কারো সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

সংলাপের শেষ দিনে কিছু বিষয় তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি ইভিএম প্রসঙ্গে বলেন, ‘আরেকটি বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইভিএম। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছু সমর্থন পেয়েছি। আবার বেশিরভাগ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী যেন একটা আছে আমাদের ইভিএম নিয়ে যে অনুভূতি। আমরা ইভিএম ব্যবহার করেছি, এটাকে ডিসকারেজ করছি না। আমরা এ পর্যন্ত যে ইভিএম ব্যবহার করেছি, তাতে ভোটার ৭১ শতাংশ পর্যন্ত টার্নআউট হয়েছে। কিন্তু অনেককে আমরা আস্থায় আনতে পারছি না। কথাও বলেছি, কিন্তু তারা বলেছে ‘না’ এখানে একটা...। আপনাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইবো যে ইভিএম নিয়ে একটা সংকট থাকবে। এটার বিষয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরাই নেবো সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি, এর ওপরে পুরোপুরি ঐকমত্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা ইসির সংবিধানের সংবিধিবদ্ধ কর্তব্য। আর সেটি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বতভাবে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

বর্তমান ইসির হাতে আছে এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি ইভিএম মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে দেশের ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট নেয়া সম্ভব। এ বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ বলেছে, আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দেয়া দলগুলো হলোÑ বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে, ওয়ার্কার্স পার্টি (নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করা), মুসলীম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়া দলগুলো হলোÑ তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, এনপিপি, বিকল্পধারা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, খেলাফত মজলিস ও আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের আগে ক্রটি সারতে ও আস্থা অর্জনের তাগিদ দিয়েছে কয়েকটি দল।

সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করা দলগুলো হলোÑ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মুসলীম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিশ।

এদিকে, নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় ছয় দল। দলগুলো হলোÑ তরীকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাসদ, খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস।

চারটি রাজনৈতিক দল এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে। এছাড়া ৮টি রাজনৈতিক দল জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে। ইসির নিজস্ব জনবল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে দলগুলো। এ ছাড়া একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব করেছে কয়েকটি দল।

অন্যদিকে, ইসি নির্ধারিত সময়ে সংলাপে অংশ নিতে না পারায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাতীয় পার্টি- জেপি পরে সময় চেয়েছে বলেও জানা গেছে।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসি গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে। সংলাপে ইসির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ , ১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩ মহররম ১৪৪৪

কৌশলপত্র তৈরির পর বিশেষ সংলাপে বসবে ইসি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক করার পর ফের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আবারও আমন্ত্রণ জানানো হবে বিএনপিকে। সেই সংলাপে চূড়ান্ত হবে, ইভিএমসহ অন্য বিষয়। আগামী জুনে নির্বাচনী কাজ গুছিয়ে আনতে চায় কমিশন, আর বাস্তবায়ন শুরু হবে জুলাই থেকে। সদ্য সমাপ্ত সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ পর্যালোচনা করে শীঘ্রই একটি কৌশলপত্র প্রস্তুত করবে ইসি।

গণমাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে তারা পর্যালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর ফের গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ জন ও দলগুলোকে ডাকা হবে। এক্ষেত্রে ডাকা হবে প্রথম সংলাপে সাড়া না দেয়া বিএনপিকেও।

রোডম্যাপ তৈরির পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আবারও সংলাপ করবে ইসি, তখনও বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। গতকাল তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল ইসির কাছে সমান। যখন প্রয়োজন হবে তাদের ডাকা হবে। আবার যেকোন রাজনৈতিক দল তাদের প্রয়োজনে ইসির সঙ্গে বসতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আমন্ত্রিত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এতে বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। তবে, সময় চেয়েছে দুটি দল। সংলাপে ২৮ দলের কাছ থেকে প্রায় ৩৫০ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দল নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানিয়েছে। জানা গেছে, রোডম্যাপ তৈরির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপ করবে ইসি।

সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ১৫টি দল নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন ১১টি দল। সংলাপে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের সরাসরি বিরোধিতা করেছে ৭টি দল। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় ছয়টি দল। এরমধ্যে চারটি রাজনৈতিক দল এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে ৮টি রাজনৈতিক দল। ওই দলগুলো ইসির নিজস্ব জনবল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে সংলাপে অংশ নিতে না পারায় দুটি দল সময় চেয়েছে।

তবে, বিএনপি ইসির ডাকে সাড়া না দিলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ছাড়া ভোটে অংশগ্রহণ করবেন না। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির সমমনারা দলগুলো ৩০০ আসনে ইভিএম নির্বাচন করার প্রস্তাব দিলেও বিরোধীপক্ষ তা নাকচ করে দিয়েছেন। গত রোববার সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। চেতনায় ধারণ করি। কোন বিশেষ এলাকা নয়। দেশের ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট হোক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।’ জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন ‘ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে কোন আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, ইভিএমে ভোট পাল্টে দেয়া হলে কিছু করার নেই। কারণ, ফল রি-চেক করা যায় না।’

তবে ক্ষমতাসীন দল এসব নাকচ করে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে নেই। কারো সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

সংলাপের শেষ দিনে কিছু বিষয় তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি ইভিএম প্রসঙ্গে বলেন, ‘আরেকটি বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইভিএম। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছু সমর্থন পেয়েছি। আবার বেশিরভাগ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী যেন একটা আছে আমাদের ইভিএম নিয়ে যে অনুভূতি। আমরা ইভিএম ব্যবহার করেছি, এটাকে ডিসকারেজ করছি না। আমরা এ পর্যন্ত যে ইভিএম ব্যবহার করেছি, তাতে ভোটার ৭১ শতাংশ পর্যন্ত টার্নআউট হয়েছে। কিন্তু অনেককে আমরা আস্থায় আনতে পারছি না। কথাও বলেছি, কিন্তু তারা বলেছে ‘না’ এখানে একটা...। আপনাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইবো যে ইভিএম নিয়ে একটা সংকট থাকবে। এটার বিষয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরাই নেবো সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি, এর ওপরে পুরোপুরি ঐকমত্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা ইসির সংবিধানের সংবিধিবদ্ধ কর্তব্য। আর সেটি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বতভাবে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

বর্তমান ইসির হাতে আছে এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি ইভিএম মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে দেশের ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট নেয়া সম্ভব। এ বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ বলেছে, আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।

সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দেয়া দলগুলো হলোÑ বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে, ওয়ার্কার্স পার্টি (নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করা), মুসলীম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়া দলগুলো হলোÑ তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, এনপিপি, বিকল্পধারা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, খেলাফত মজলিস ও আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের আগে ক্রটি সারতে ও আস্থা অর্জনের তাগিদ দিয়েছে কয়েকটি দল।

সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করা দলগুলো হলোÑ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মুসলীম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিশ।

এদিকে, নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় ছয় দল। দলগুলো হলোÑ তরীকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাসদ, খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস।

চারটি রাজনৈতিক দল এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে। এছাড়া ৮টি রাজনৈতিক দল জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে। ইসির নিজস্ব জনবল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে দলগুলো। এ ছাড়া একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব করেছে কয়েকটি দল।

অন্যদিকে, ইসি নির্ধারিত সময়ে সংলাপে অংশ নিতে না পারায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাতীয় পার্টি- জেপি পরে সময় চেয়েছে বলেও জানা গেছে।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসি গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে। সংলাপে ইসির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।