পানির অভাবে পাট চাষিদের নীরব কান্না

১ আগস্ট ২০২২ শিবালয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ডোবা, নালা ও খাল-বিলে পানি না থাকায় মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার নিরীহ সাধারণ এবং প্রান্তিক কৃষকরা। আষাঢ় মাস শেষে শ্রাবণ মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ খাল-বিল, ডোবা, নালা ও ফসলি জমির মাঠ এখনও প্রায় শুষ্ক। ভরা বর্ষা মৌসুমের এই সময় চারদিকে পানিতে থৈ-থৈ করার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন দেখা গেছে। চারদিকের অবস্থা দেখে মনে হয় এ যেন চৈত্রের দাবদাহ চলছে এলাকায়। এতে করে এলাকার কৃষকরা পড়েছেন বিপদে। বিশেষ করে পাট চাষিরা পড়েছেন মহাবিপদে। নদী এবং মাছ চাষের পুকুর ছাড়া কোথাও পাট জাগে ফেলার মতো মিলছে না প্রয়োজনীয় পানি। কোন উপায় না পেয়ে কৃষকরা পাট কেটে খেতেই ফেলে রাখছেন। আবার অনেকে এখন পর্যন্ত খেত থেকে পাট কাটেননি কোথায় পাট জাগ দেবে এই ভাবনায় এবং জায়গা না পাওয়ায়। সেক্ষেত্রে তারা বর্ষার পানির আশায় জমিতে পাট রেখে দিয়েছেন। এতে অনেক পাট খেতের পাট গাছ খড়ায় মরে লাকড়ি হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানি না পেয়ে নিচু জায়গার মাটি কেটে গর্ত করে সেখানে অনেকে পাট জাগ দিচ্ছেন। তবে এতে পাটের আঁশের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পাটের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং ভালো দাম পাওয়া নিয়ে নতুন চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

এসব বিষয়ে উপজেলার কলাগাড়ীয়া গ্রামের কৃষক ভৈরব পাইন জানান, বর্ষার পানি না থাকার কারণে সড়কের খাদে জমে থাকা সামান্য বৃষ্টির পানিতে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। কম পানিতে জাগ দেয়ায় পাটের আঁশ কালো ও চটা হয়ে যায়। এত পাটের কদর কমে যায় এবং কম দামে বিক্রি করতে হয়। পাটের ফলন এবার ভালো হলেও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। অন্যদিকে কম পানির ডোবা, নালায় পাট জাগ দেয়ায় এ বছর মশার উৎপাদন অনেক বেশি। রাত তো দূরের কথা দিনের বেলাতেই মশার উপদ্রবে ঘরে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। মহাদেবপুর ইউনিয়নের বনগ্রাম গ্রামের পাট চাষি আবদুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে পাটের দাম বেশ সন্তোষজনক এবং পাট চাষে খরচ তুলনামূলক অনেক কম। সবদিক বিবেচনা করে লাভের আশায় এ বছর ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর পানির যে এমন অভাব হবে তা কে জানে! সিলেটে বন্যার সময় আমাদের এলাকার কিছু কিছু জায়গায় যখন পানি প্রবেশ করেছিল তখন ২ বিঘা জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই দিন পর থেকেই এলাকার পানি কমতে শুরু করে। তখন ওই পাট জাগ দুইবার দুই জায়গায় স্থানান্তর করেছি। এতে বাড়তি শ্রমিকের খরচ বাদ দিলে কোন লাভই আর থাকবে না। বাকি ৪ বিঘা জমির পাট পানির অভাবে এখনও কাটিনি। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির পাট খড়ায় পুড়ে মরে গেছে। এক কথায় লাভের ধন পিঁপড়ায় খাচ্ছে।

উলাইল ইউনিয়নের কৃষক বারেক মিয়া জানান, মানভেদে প্রতি মণ পাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। ভালো দামের জন্য এ বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। প্রতি বছর আমরা খেতের পাট খেতেই জাগ দেই। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে ভ্যানগাড়িতে পাট নিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের নদীতে জাগ দিয়েছি। শুধু তাই নয়, এ বছর পাট কাটতে গিয়ে কৃষকদের শরীরে মারাত্মক চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। প্রথমে শরীরে চুলকানি হয়, তারপর ফোসকা পড়ে জ্বর এসে যায়। ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ খরচ বাবদ এক একজন কৃষকের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর পাট চাষ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে খাজনার চেয়ে বাজনার মূল্য অনেক বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান জানান, এ বছর শিবালয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ হয়েছে। দেশি-বিদেশি পিভিএল-৮, বিজিআরআই তোষা-৮সহ বিভিন্ন প্রজাতির মোট ৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অনাবৃষ্টি এবং যথাসময়ে বর্ষার পানি না আসায় উপজেলায় কৃষকরা পাট জাগ দেয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দেশে যথেষ্ট বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাট চাষিদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। তারপরও যদি পানির সংকট থাকে সেক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের কৃত্রিম পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ , ১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩ মহররম ১৪৪৪

পানির অভাবে পাট চাষিদের নীরব কান্না

প্রতিনিধি, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)

image

মানিকগঞ্জ : জমিতে কোনরকম গর্ত করে পাট জাগ দিচ্ছে কৃষক -সংবাদ

১ আগস্ট ২০২২ শিবালয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ডোবা, নালা ও খাল-বিলে পানি না থাকায় মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার নিরীহ সাধারণ এবং প্রান্তিক কৃষকরা। আষাঢ় মাস শেষে শ্রাবণ মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ খাল-বিল, ডোবা, নালা ও ফসলি জমির মাঠ এখনও প্রায় শুষ্ক। ভরা বর্ষা মৌসুমের এই সময় চারদিকে পানিতে থৈ-থৈ করার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন দেখা গেছে। চারদিকের অবস্থা দেখে মনে হয় এ যেন চৈত্রের দাবদাহ চলছে এলাকায়। এতে করে এলাকার কৃষকরা পড়েছেন বিপদে। বিশেষ করে পাট চাষিরা পড়েছেন মহাবিপদে। নদী এবং মাছ চাষের পুকুর ছাড়া কোথাও পাট জাগে ফেলার মতো মিলছে না প্রয়োজনীয় পানি। কোন উপায় না পেয়ে কৃষকরা পাট কেটে খেতেই ফেলে রাখছেন। আবার অনেকে এখন পর্যন্ত খেত থেকে পাট কাটেননি কোথায় পাট জাগ দেবে এই ভাবনায় এবং জায়গা না পাওয়ায়। সেক্ষেত্রে তারা বর্ষার পানির আশায় জমিতে পাট রেখে দিয়েছেন। এতে অনেক পাট খেতের পাট গাছ খড়ায় মরে লাকড়ি হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানি না পেয়ে নিচু জায়গার মাটি কেটে গর্ত করে সেখানে অনেকে পাট জাগ দিচ্ছেন। তবে এতে পাটের আঁশের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পাটের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং ভালো দাম পাওয়া নিয়ে নতুন চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

এসব বিষয়ে উপজেলার কলাগাড়ীয়া গ্রামের কৃষক ভৈরব পাইন জানান, বর্ষার পানি না থাকার কারণে সড়কের খাদে জমে থাকা সামান্য বৃষ্টির পানিতে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। কম পানিতে জাগ দেয়ায় পাটের আঁশ কালো ও চটা হয়ে যায়। এত পাটের কদর কমে যায় এবং কম দামে বিক্রি করতে হয়। পাটের ফলন এবার ভালো হলেও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। অন্যদিকে কম পানির ডোবা, নালায় পাট জাগ দেয়ায় এ বছর মশার উৎপাদন অনেক বেশি। রাত তো দূরের কথা দিনের বেলাতেই মশার উপদ্রবে ঘরে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। মহাদেবপুর ইউনিয়নের বনগ্রাম গ্রামের পাট চাষি আবদুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে পাটের দাম বেশ সন্তোষজনক এবং পাট চাষে খরচ তুলনামূলক অনেক কম। সবদিক বিবেচনা করে লাভের আশায় এ বছর ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর পানির যে এমন অভাব হবে তা কে জানে! সিলেটে বন্যার সময় আমাদের এলাকার কিছু কিছু জায়গায় যখন পানি প্রবেশ করেছিল তখন ২ বিঘা জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই দিন পর থেকেই এলাকার পানি কমতে শুরু করে। তখন ওই পাট জাগ দুইবার দুই জায়গায় স্থানান্তর করেছি। এতে বাড়তি শ্রমিকের খরচ বাদ দিলে কোন লাভই আর থাকবে না। বাকি ৪ বিঘা জমির পাট পানির অভাবে এখনও কাটিনি। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির পাট খড়ায় পুড়ে মরে গেছে। এক কথায় লাভের ধন পিঁপড়ায় খাচ্ছে।

উলাইল ইউনিয়নের কৃষক বারেক মিয়া জানান, মানভেদে প্রতি মণ পাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। ভালো দামের জন্য এ বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। প্রতি বছর আমরা খেতের পাট খেতেই জাগ দেই। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে ভ্যানগাড়িতে পাট নিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের নদীতে জাগ দিয়েছি। শুধু তাই নয়, এ বছর পাট কাটতে গিয়ে কৃষকদের শরীরে মারাত্মক চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। প্রথমে শরীরে চুলকানি হয়, তারপর ফোসকা পড়ে জ্বর এসে যায়। ডাক্তার দেখানো ও ওষুধ খরচ বাবদ এক একজন কৃষকের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর পাট চাষ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে খাজনার চেয়ে বাজনার মূল্য অনেক বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান জানান, এ বছর শিবালয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ হয়েছে। দেশি-বিদেশি পিভিএল-৮, বিজিআরআই তোষা-৮সহ বিভিন্ন প্রজাতির মোট ৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অনাবৃষ্টি এবং যথাসময়ে বর্ষার পানি না আসায় উপজেলায় কৃষকরা পাট জাগ দেয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দেশে যথেষ্ট বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাট চাষিদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। তারপরও যদি পানির সংকট থাকে সেক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের কৃত্রিম পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন।