শ্রীলঙ্কায় ফেরার সময় হয়নি গোতাবায়ার : রনিল

সিঙ্গাপুরে পলাতক শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার এ মুহূর্তে দেশে ফেরা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তার উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজাপাকসা দেশে ফিরলে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পদত্যাগ করেছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা। এর মধ্যেই আবারও তার দেশে ফেরার গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন।

সাক্ষাৎকারে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে তার ফিরে আসার সময় এসেছে। আমার কাছে তার শিগগিরই ফিরে আসার কোনো ইঙ্গিত নেই।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসনিক হস্তান্তর সংক্রান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকা- পরিচালনা করার জন্য রাজাপাকসার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

এর আগে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাতের আঁধারে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায়ই একটি সামরিক বিমানে করে গোতাবায়া রাজাপাকসা মালদ্বীপ পালিয়ে যান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদনের পর রাজাপাকসা এবং তার স্ত্রী কাতুনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মূলত বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে তাদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার কোনো আইনেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের বিধান নেই। তবে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে যান বলে ধারণা করা হয়।

অবশ্য মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর একই দিন রাতে দেশটি ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন গোতাবায়া রাজাপাকসা; কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ফ্লাইটে তিনি আরোহণ করেননি। পরে সৌদি আরবের একটি বিমানে করে মালদ্বীপ ছেড়ে গত ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া। এরপর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতেই অবস্থান করছেন তিনি। সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা ফের শ্রীলঙ্কায় ফিরতে পারেন বলে সম্প্রতি জানায় লঙ্কান মন্ত্রিসভা। শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র বন্দুলা গুনওয়ার্দেনা গত সপ্তাহে বলেন, ‘এটি আমার বিশ্বাস যে তিনি শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসার কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বা অন্য অবস্থান নেই।’

এদিকে বিক্ষোভের জেরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও। আর এই ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের ওপরে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, ‘(আমাকে) গো হোম বলার কোনো মানে নেই, কারণ যাওয়ার মতো আর কোনো বাড়ি নেই আমার।’

শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি শহরে বক্তৃতা করার সময় বিক্রমাসিংহে বলেন, যে কিছু লোক তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করার হুমকি দিয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে এটা বলতে পারি যে, আমি তেমনটা (বাড়িতে ফিরে যেতে) করতে পারবো না কারণ আমার কাছে যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই।’

বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, ‘তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার দাবি করা সময়ের অপচয় মাত্র। বরং প্রতিবাদকারীদের উচিত তার পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুনর্র্নিমাণের চেষ্টা করা। তিনি বলেন, ‘যার বাড়ি নেই, তাকে বাড়িতে যেতে বলার কোনো মানে নেই।’ আর তাই নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পুনঃনির্মাণের পরে প্রতিবাদকারীরা তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার (গো হোম) দাবি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শ্রীলঙ্কান এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের হয় দেশ পুনর্গঠন করতে হবে আর না হলে তার বাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দিতে হবে।

বিক্রমাসিংহে বলেন, শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে একটি চুক্তি প্রয়োজন, তবে অস্থিতিশীলতার কারণে আইএমএফের সঙ্গে সম্ভাব্য এই চুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গত মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসাকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই, বরং দেশকে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে বের করে আনতে এবং ঋণ শোধ করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হতে হবে।

সাত দশকে এবারই প্রথম নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্র। জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা।

image

অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মুখে গত মাসে দেশ ছেড়ে পলিয়ে যান শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা -এএফপি

আরও খবর
জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়লো মায়ানমার জান্তা
কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরে ইউক্রেনের হামলা

মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ , ১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩ মহররম ১৪৪৪

শ্রীলঙ্কায় ফেরার সময় হয়নি গোতাবায়ার : রনিল

image

অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মুখে গত মাসে দেশ ছেড়ে পলিয়ে যান শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা -এএফপি

সিঙ্গাপুরে পলাতক শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার এ মুহূর্তে দেশে ফেরা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তার উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজাপাকসা দেশে ফিরলে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পদত্যাগ করেছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা। এর মধ্যেই আবারও তার দেশে ফেরার গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন।

সাক্ষাৎকারে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে তার ফিরে আসার সময় এসেছে। আমার কাছে তার শিগগিরই ফিরে আসার কোনো ইঙ্গিত নেই।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসনিক হস্তান্তর সংক্রান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকা- পরিচালনা করার জন্য রাজাপাকসার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

এর আগে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাতের আঁধারে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায়ই একটি সামরিক বিমানে করে গোতাবায়া রাজাপাকসা মালদ্বীপ পালিয়ে যান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ অনুমোদনের পর রাজাপাকসা এবং তার স্ত্রী কাতুনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মূলত বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে তাদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার কোনো আইনেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের বিধান নেই। তবে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে যান বলে ধারণা করা হয়।

অবশ্য মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর একই দিন রাতে দেশটি ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন গোতাবায়া রাজাপাকসা; কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ফ্লাইটে তিনি আরোহণ করেননি। পরে সৌদি আরবের একটি বিমানে করে মালদ্বীপ ছেড়ে গত ১৪ জুলাই সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া। এরপর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতেই অবস্থান করছেন তিনি। সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা ফের শ্রীলঙ্কায় ফিরতে পারেন বলে সম্প্রতি জানায় লঙ্কান মন্ত্রিসভা। শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্র বন্দুলা গুনওয়ার্দেনা গত সপ্তাহে বলেন, ‘এটি আমার বিশ্বাস যে তিনি শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসার কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বা অন্য অবস্থান নেই।’

এদিকে বিক্ষোভের জেরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও। আর এই ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের ওপরে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, ‘(আমাকে) গো হোম বলার কোনো মানে নেই, কারণ যাওয়ার মতো আর কোনো বাড়ি নেই আমার।’

শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি শহরে বক্তৃতা করার সময় বিক্রমাসিংহে বলেন, যে কিছু লোক তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করার হুমকি দিয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে এটা বলতে পারি যে, আমি তেমনটা (বাড়িতে ফিরে যেতে) করতে পারবো না কারণ আমার কাছে যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি নেই।’

বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, ‘তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার দাবি করা সময়ের অপচয় মাত্র। বরং প্রতিবাদকারীদের উচিত তার পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুনর্র্নিমাণের চেষ্টা করা। তিনি বলেন, ‘যার বাড়ি নেই, তাকে বাড়িতে যেতে বলার কোনো মানে নেই।’ আর তাই নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পুনঃনির্মাণের পরে প্রতিবাদকারীরা তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার (গো হোম) দাবি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শ্রীলঙ্কান এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের হয় দেশ পুনর্গঠন করতে হবে আর না হলে তার বাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দিতে হবে।

বিক্রমাসিংহে বলেন, শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে একটি চুক্তি প্রয়োজন, তবে অস্থিতিশীলতার কারণে আইএমএফের সঙ্গে সম্ভাব্য এই চুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গত মাসে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসাকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই, বরং দেশকে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে বের করে আনতে এবং ঋণ শোধ করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হতে হবে।

সাত দশকে এবারই প্রথম নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্র। জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা।