মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা

পরিচয় দিত বিকাশ-রকেট কর্মকর্তা

বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে যারা প্রয়োজনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি বিকাশ বা নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং করে থাকেন এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে ফেইসবুকে যুক্ত করার মাধ্যমে খোজ রাখতো ৩০ বছর বয়সী মো. খোকন ব্যাপারী। প্রথমে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতো। রিসিভ করার পর ওই ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজ নিতেন। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ বা নগদের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একাউন্ট ব্লক করে দিতেন। গ্রাহক যোগাযোগ করলে তাকে বলতেন আপনার টাকা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা যাবে। পরে গ্রাহক যখন ওই প্রক্রিয়ায় টাকা ট্রান্সফারের জন্য যোগাযোগ করতেন তখন আবার ওটিপি কোড হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিতেন নিজের একাউন্টে। অভিনব এ পদ্ধতিতে গত কয়েক বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে খোকন ব্যাপারী চক্রের সদস্যরা।

একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এমন নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণা করে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তথ্য জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এলআইসি বিভাগের পুলিশ সুপার মুক্তাধরের তত্ত্বাবধায়নে অভিযান চালিয়ে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের মূলহোতা খোকন ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।

সিআইডি জানিয়েছে, গত ৫-৬ বছর ধরে খোকন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তার নিজস্ব একটি চক্র রয়েছে। খোকন নিজে ওই চক্রের মূলহোতা। প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর বলেন, একটি চক্র বিকাশ/নগদ/রকেটের অফিসের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অভিযান পরিচালনা করে। পরে গতকাল নারায়ণগঞ্জ থেকে খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির একটি দল।

তিনি বলেন, খোকনের নেতৃত্বে ৩-৪ জনের সদস্যের একটি প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ/নগদ রকেটের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রায় ৫-৬ বছর প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটি ছয়টি ধাপে প্রতারণার কাজটি করত।

প্রতারণার ধাপগুলো উল্লেখ করে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ধাপে প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে বলে। আর অ্যাকাউন্টটি আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায়। দ্বিতীয় ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড তিনবারের অধিক দিলে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। তৃতীয় ধাপে ভিকটিমকে জানানো হয়, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং একাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। তবে এই টাকা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব।

চতুর্থ ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর এবং সিভিএন জানতে চায়। পঞ্চম ধাপে ভিকটিম এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট বা ক্রডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ওটিপি (ঙঞচ) কোড সম্বলিত একটি ম্যাসেজ যায়।

সর্বশেষ ষষ্ঠ ধাপে ভিকটিম ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারককে জানায়। কোডটি পাওয়ার পর ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে।

মুক্তাধর বলেন, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরপরই তারা নিজেদের আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে। গ্রেপ্তার খোকন এ পর্যন্ত তার সহযোগীদের নিয়ে প্রায় এক কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে।

তিনি আরও বলেন, খোকনের রঃং শযড়শড়হ নৎড় এবং ‘রঃং শযড়শড়হ নৎড় ০২’ নামের দুটি ফেইসবুক পেজ রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে তাদেরকে তার ফ্রেন্ড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করতেন। তারপর তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করে। ডেবিট বা ক্রডিট কার্ডধারী ব্যক্তিদের সে মূলত তার শিকারে পরিণত করে।

আরও খবর
টেলিটকের ফাইভ জি : ঢাকায় ২০২৫ এর শুরুতে মিলতে পারে সেবা
এবার শিশুদের টিকা দেয়া শুরু স্বাস্থ্যের ডিজি
‘শোক থেকে শক্তির অভ্যুদয়, স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয়’ অনুষ্ঠান শুরু
গুণের ‘কবিতাকুঞ্জ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান
ভুয়া ঠেকাতে আসল ডিবির পোশাকে পরিবর্তন
‘ডিবি পরিচয়ে’ ব্যাংকে লেনদেনকারী গ্রাহকদের তুলে নিয়ে যেত তারা
গৃহবধূ ও তার স্বামীকে নগ্ন করে ভিডিও, টাকার দাবি না মানায় লুটপাট
গ্রামীণ টেলিকমের দুর্র্নীতি, আদ্যপ্রান্তের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক
মমতার রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল কাল
সাঁথিয়ায় শিক্ষকদের গালাগালের অভিযোগে সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা সানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ , ১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩ মহররম ১৪৪৪

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা

পরিচয় দিত বিকাশ-রকেট কর্মকর্তা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে যারা প্রয়োজনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি বিকাশ বা নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং করে থাকেন এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে ফেইসবুকে যুক্ত করার মাধ্যমে খোজ রাখতো ৩০ বছর বয়সী মো. খোকন ব্যাপারী। প্রথমে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতো। রিসিভ করার পর ওই ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজ নিতেন। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ বা নগদের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একাউন্ট ব্লক করে দিতেন। গ্রাহক যোগাযোগ করলে তাকে বলতেন আপনার টাকা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা যাবে। পরে গ্রাহক যখন ওই প্রক্রিয়ায় টাকা ট্রান্সফারের জন্য যোগাযোগ করতেন তখন আবার ওটিপি কোড হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিতেন নিজের একাউন্টে। অভিনব এ পদ্ধতিতে গত কয়েক বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে খোকন ব্যাপারী চক্রের সদস্যরা।

একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এমন নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণা করে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তথ্য জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এলআইসি বিভাগের পুলিশ সুপার মুক্তাধরের তত্ত্বাবধায়নে অভিযান চালিয়ে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের মূলহোতা খোকন ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।

সিআইডি জানিয়েছে, গত ৫-৬ বছর ধরে খোকন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তার নিজস্ব একটি চক্র রয়েছে। খোকন নিজে ওই চক্রের মূলহোতা। প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর বলেন, একটি চক্র বিকাশ/নগদ/রকেটের অফিসের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অভিযান পরিচালনা করে। পরে গতকাল নারায়ণগঞ্জ থেকে খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির একটি দল।

তিনি বলেন, খোকনের নেতৃত্বে ৩-৪ জনের সদস্যের একটি প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ/নগদ রকেটের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রায় ৫-৬ বছর প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটি ছয়টি ধাপে প্রতারণার কাজটি করত।

প্রতারণার ধাপগুলো উল্লেখ করে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ধাপে প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে বলে। আর অ্যাকাউন্টটি আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায়। দ্বিতীয় ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড তিনবারের অধিক দিলে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। তৃতীয় ধাপে ভিকটিমকে জানানো হয়, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং একাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। তবে এই টাকা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব।

চতুর্থ ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর এবং সিভিএন জানতে চায়। পঞ্চম ধাপে ভিকটিম এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট বা ক্রডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ওটিপি (ঙঞচ) কোড সম্বলিত একটি ম্যাসেজ যায়।

সর্বশেষ ষষ্ঠ ধাপে ভিকটিম ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারককে জানায়। কোডটি পাওয়ার পর ভিকটিমের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে।

মুক্তাধর বলেন, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরপরই তারা নিজেদের আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে। গ্রেপ্তার খোকন এ পর্যন্ত তার সহযোগীদের নিয়ে প্রায় এক কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে।

তিনি আরও বলেন, খোকনের রঃং শযড়শড়হ নৎড় এবং ‘রঃং শযড়শড়হ নৎড় ০২’ নামের দুটি ফেইসবুক পেজ রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে তাদেরকে তার ফ্রেন্ড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করতেন। তারপর তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করে। ডেবিট বা ক্রডিট কার্ডধারী ব্যক্তিদের সে মূলত তার শিকারে পরিণত করে।