আহমদ রফিক
বর্তমান সময়কে বলা যেতে পারে প্রযুক্তির যুগ। এবং তা নান্দনিক উপভোগে, বিনোদনে, প্রয়োজনে, সর্বোপরি গবেষক-লেখকদের মুশকিল আহসানে, বিশেষ করে ইন্টারনেটের ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী বিচরণে। তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশও ইন্টারনেট প্রযুক্তি চর্চা থেকে পিছিয়ে নেই। তাই বারবার প্রশ্ন ওঠে : বইপড়া ও সংবাদপত্র পাঠ কি এ নয়া অতিথির প্রবল দাপটের কাছে হার মেনে গদিচ্যুত হবে? আমার তা মনে হয় না।
একুশ শতকের বর্তমান কালপর্বতিতে স্বস্তি ও স্থিরতার বড় অভাব। প্রবল এক অস্থিরতা নিয়ে মননশীল মানুষ যেন অবাঞ্ছিত এক ভাঙনের যুগে বাস করছে। এবং তা রাজনৈতিক সামাজিক সব দিকেই। স্থিতি ও স্বস্তির বিরুদ্ধে ভূকম্পন ক্রমাগত ঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে কখন পতন সামনে এসে দাঁড়াবে সেই আশঙ্কা নিয়ে।
আমরা সত্যি কি পতনের অপেক্ষায় ধস নামা নদী বা গভীর কোনো খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে? না-কি এ সবই রোমান্টিক মনের বা অতি-নান্দনিকতার ভাবনা থেকে তৈরি? না, তথ্যের বাস্তব ভুবন তো ভিন্ন কথা বলে না। বরং অস্বস্তি-অস্থিরতাকে জাগিয়ে তোলে, মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবেশক সংবাদপত্র।
বেশ কিছুদিন থেকেই অন্তত বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার পাতায় মনোযোগ দিলে এমন এমন সব দেশি খবর চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে যে, মানসিক স্বস্তি বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সমাজের দূষণ, তার পুঁজরক্তমাখা ক্ষতগুলো উলঙ্গ চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আজ নারী নির্যাতন তো কাল প্রতিপক্ষ খুন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ব্যক্তিগত জিঘাংসার প্রকাশ, মানব পাচারের আদি দাস ব্যবসা থেকে শিশু পাচার, চোরাচালানি বা অবৈধ পথে গরু চালানি খুন বিএসএফ-এর বেধড়ক পিটুনি বা গুলিতে, সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলা কিংবা প্রতিমা ভাঙচুর যেন একটা মজার খেলা- অসাম্প্রদায়িকতার দাবি অদ্ভুত হাসি তোলে এসব ঘটনা দেখে। এসব কি কাগজ পাঠের বিড়ম্বনা, নাকি রাষ্ট্র ও সমাজের ভেতরকার চেহারা দেখে মননশীল চেতনায় রক্তক্ষরণ?
আবার এ কথাও ঠিক যে, কাগজপাঠ আমাদের সামাজিক সচেতনা বাড়াতে সাহায্য করে, তবে তা ঢালাওভাবে নয়? ব্যক্তিবিশেষে স্পর্শকাতর চৈতন্যের
জন্য সত্য। কখনো প্রতিবাদী হয়ে ওঠার উপলক্ষ। প্রতিবাদ সামাজিক অপরাধ, অনৈতিকতা বা রাজনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে, আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তো হরহামেশা।
তবে সংবাদপত্রের ভূমিকায় এর বিপরীত দিকও উড়িয়ে দেবার মতো নয়। হলুদ সাংবাদিকতার বহুরূপী প্রকাশও এক বাস্তবতা। রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শের লালন ও প্রকাশ তো কম দেখা যায়নি, যেমন অবিভক্ত ভারতে তেমনি বিভাজিত উপমহাদেশে, পাকিস্তানে। যা একালে অনেকটাই কমে এসেছে। তবে নতুন করে করপোরেট পুঁজির প্রভাব অন্য এক জটিল ঘটনা। নানা ঘটনার অপব্যবহার, অতিরঞ্জন, রাজনৈতিক ভেতর মহলের সঙ্গে পাশাখেলা সেও চলতে পারে, অত্যাধুনিক চেতনায় কখনো তার প্রকাশ ঘটে।
দুই.
দৈনিক ‘সংবাদ’ এবার ৭২ বছরে পা রেখেছে। সময়টা কম নয়। রীতিমতো সাত দশকের বর্ণাঢ্য জীবন, শুরুটা যেমনই হোক, পরে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও ঐতিহ্যবাহী আবহমান বাংলা-বাঙালির সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট হওয়া হতে পারে গৌরব এবং গর্বেরও। ষাটের দশক থেকে সেই যাত্রা নানা আন্দোলিত চেহারায় পরিস্ফুট।
পাকিস্তানি আমলে হাতেগোনা কয়েকটা দৈনিকের মধ্যে তখন ‘সংবাদ’ এক বিশেষ ভূমিকা নিয়ে ভিন্ন মাত্রায় আবির্ভূত হয়েছিল। যেমন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তেমনি প্রগতিশীল মননশীলতায়। ষাটের দশক থেকে দৈনিক ‘সংবাদ’-এর এ বৈশিষ্ট্য ক্রমে তার আত্মপ্রকাশের বিশেষ ধারা সৃষ্টি করে বিশিষ্ট কয়েকজন সাংবাদিকের হাত ধরে।
এ বৈশিষ্ট্য স্বাধীন বাংলাদেশে সত্তরের দশক থেকে বিশেষ মাত্রা অর্জন করে এর সাহিত্যপাতার প্রগতিশীলতায়। আধুনিক চেতনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ধ্যান-ধারণাও সেখানে স্থান পায়। এভাবে দৈনিক ‘সংবাদ’ হয়ে ওঠে প্রগতিবাদী মহলের মুখপত্র। সংবাদপত্রের ভুবনে তার জন্য গর্ব ও অহংকারের একটি জায়গা তৈরি হয়। গত কয়েক দশকে স্থানীয়ভাবে করপোরেট পুঁজির অস্বাভাবিক উদ্ভবের কারণে সমাজে যে পরিবর্তন ঘটে চলেছে তার অভিঘাতে সংবাদপত্র ভুবনেও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রথমত কত দৈনিক যে শিক্ষিত ভুবনে এসেছে তার হিসাব নিতে গেলে অবাক হতে হয়। বাণিজ্য যেখানে প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাংবাদিকতার মননশীল চরিত্র বিকাশ বড় কথা নয়।
অন্যদিকে কিছুসংখ্যক সংবাদপত্র প্রবল প্রতিযোগিতায় নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা করেছে। বিক্রয় সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেলেও নাকি লোকসান পিছু ছাড়ে না বিজ্ঞাপন লক্ষ্মী তখন একমাত্র ভরসা, অর্থাৎ অস্তিত্ব রক্ষার ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তবু এরা দেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি ও স্বতন্ত্র করপোরেট ভুবন তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। এ প্রতিযোগিতা কতটা সুস্থ তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে তবে এটাই সামাজিক বাস্তবতা।
এমন বাস্তবতার পরিম-লে দৈনিক ‘সংবাদ’ তার ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ধারায় এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গ-িতে প্রতিযোগিতার পূর্বোক্ত ধারাটিকে এড়িয়ে। এ চলা কতটা সঠিক বা বেঠিক তা ‘সংবাদ’ এর নিজস্ব ভাবনার বিষয়। তবে তার সাহিত্য সাময়িকী এখনও আকর্ষণীয়। স্বভাবতই ‘সংবাদ’-এর ৭২তম জন্মদিন শুভ হোক, নতুনত্বে বিকশিত হোক, যাত্রা শুভ হোক এমনটাই পাঠক হিসেবে আমাদের আকাক্সক্ষা। সেই সঙ্গে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘযাত্রার জন্য ‘সংবাদ’কে অভিনন্দন।
বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২
আহমদ রফিক
বর্তমান সময়কে বলা যেতে পারে প্রযুক্তির যুগ। এবং তা নান্দনিক উপভোগে, বিনোদনে, প্রয়োজনে, সর্বোপরি গবেষক-লেখকদের মুশকিল আহসানে, বিশেষ করে ইন্টারনেটের ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী বিচরণে। তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশও ইন্টারনেট প্রযুক্তি চর্চা থেকে পিছিয়ে নেই। তাই বারবার প্রশ্ন ওঠে : বইপড়া ও সংবাদপত্র পাঠ কি এ নয়া অতিথির প্রবল দাপটের কাছে হার মেনে গদিচ্যুত হবে? আমার তা মনে হয় না।
একুশ শতকের বর্তমান কালপর্বতিতে স্বস্তি ও স্থিরতার বড় অভাব। প্রবল এক অস্থিরতা নিয়ে মননশীল মানুষ যেন অবাঞ্ছিত এক ভাঙনের যুগে বাস করছে। এবং তা রাজনৈতিক সামাজিক সব দিকেই। স্থিতি ও স্বস্তির বিরুদ্ধে ভূকম্পন ক্রমাগত ঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে কখন পতন সামনে এসে দাঁড়াবে সেই আশঙ্কা নিয়ে।
আমরা সত্যি কি পতনের অপেক্ষায় ধস নামা নদী বা গভীর কোনো খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে? না-কি এ সবই রোমান্টিক মনের বা অতি-নান্দনিকতার ভাবনা থেকে তৈরি? না, তথ্যের বাস্তব ভুবন তো ভিন্ন কথা বলে না। বরং অস্বস্তি-অস্থিরতাকে জাগিয়ে তোলে, মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবেশক সংবাদপত্র।
বেশ কিছুদিন থেকেই অন্তত বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার পাতায় মনোযোগ দিলে এমন এমন সব দেশি খবর চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে যে, মানসিক স্বস্তি বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সমাজের দূষণ, তার পুঁজরক্তমাখা ক্ষতগুলো উলঙ্গ চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আজ নারী নির্যাতন তো কাল প্রতিপক্ষ খুন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ব্যক্তিগত জিঘাংসার প্রকাশ, মানব পাচারের আদি দাস ব্যবসা থেকে শিশু পাচার, চোরাচালানি বা অবৈধ পথে গরু চালানি খুন বিএসএফ-এর বেধড়ক পিটুনি বা গুলিতে, সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলা কিংবা প্রতিমা ভাঙচুর যেন একটা মজার খেলা- অসাম্প্রদায়িকতার দাবি অদ্ভুত হাসি তোলে এসব ঘটনা দেখে। এসব কি কাগজ পাঠের বিড়ম্বনা, নাকি রাষ্ট্র ও সমাজের ভেতরকার চেহারা দেখে মননশীল চেতনায় রক্তক্ষরণ?
আবার এ কথাও ঠিক যে, কাগজপাঠ আমাদের সামাজিক সচেতনা বাড়াতে সাহায্য করে, তবে তা ঢালাওভাবে নয়? ব্যক্তিবিশেষে স্পর্শকাতর চৈতন্যের
জন্য সত্য। কখনো প্রতিবাদী হয়ে ওঠার উপলক্ষ। প্রতিবাদ সামাজিক অপরাধ, অনৈতিকতা বা রাজনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে, আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তো হরহামেশা।
তবে সংবাদপত্রের ভূমিকায় এর বিপরীত দিকও উড়িয়ে দেবার মতো নয়। হলুদ সাংবাদিকতার বহুরূপী প্রকাশও এক বাস্তবতা। রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শের লালন ও প্রকাশ তো কম দেখা যায়নি, যেমন অবিভক্ত ভারতে তেমনি বিভাজিত উপমহাদেশে, পাকিস্তানে। যা একালে অনেকটাই কমে এসেছে। তবে নতুন করে করপোরেট পুঁজির প্রভাব অন্য এক জটিল ঘটনা। নানা ঘটনার অপব্যবহার, অতিরঞ্জন, রাজনৈতিক ভেতর মহলের সঙ্গে পাশাখেলা সেও চলতে পারে, অত্যাধুনিক চেতনায় কখনো তার প্রকাশ ঘটে।
দুই.
দৈনিক ‘সংবাদ’ এবার ৭২ বছরে পা রেখেছে। সময়টা কম নয়। রীতিমতো সাত দশকের বর্ণাঢ্য জীবন, শুরুটা যেমনই হোক, পরে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও ঐতিহ্যবাহী আবহমান বাংলা-বাঙালির সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট হওয়া হতে পারে গৌরব এবং গর্বেরও। ষাটের দশক থেকে সেই যাত্রা নানা আন্দোলিত চেহারায় পরিস্ফুট।
পাকিস্তানি আমলে হাতেগোনা কয়েকটা দৈনিকের মধ্যে তখন ‘সংবাদ’ এক বিশেষ ভূমিকা নিয়ে ভিন্ন মাত্রায় আবির্ভূত হয়েছিল। যেমন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তেমনি প্রগতিশীল মননশীলতায়। ষাটের দশক থেকে দৈনিক ‘সংবাদ’-এর এ বৈশিষ্ট্য ক্রমে তার আত্মপ্রকাশের বিশেষ ধারা সৃষ্টি করে বিশিষ্ট কয়েকজন সাংবাদিকের হাত ধরে।
এ বৈশিষ্ট্য স্বাধীন বাংলাদেশে সত্তরের দশক থেকে বিশেষ মাত্রা অর্জন করে এর সাহিত্যপাতার প্রগতিশীলতায়। আধুনিক চেতনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ধ্যান-ধারণাও সেখানে স্থান পায়। এভাবে দৈনিক ‘সংবাদ’ হয়ে ওঠে প্রগতিবাদী মহলের মুখপত্র। সংবাদপত্রের ভুবনে তার জন্য গর্ব ও অহংকারের একটি জায়গা তৈরি হয়। গত কয়েক দশকে স্থানীয়ভাবে করপোরেট পুঁজির অস্বাভাবিক উদ্ভবের কারণে সমাজে যে পরিবর্তন ঘটে চলেছে তার অভিঘাতে সংবাদপত্র ভুবনেও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রথমত কত দৈনিক যে শিক্ষিত ভুবনে এসেছে তার হিসাব নিতে গেলে অবাক হতে হয়। বাণিজ্য যেখানে প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাংবাদিকতার মননশীল চরিত্র বিকাশ বড় কথা নয়।
অন্যদিকে কিছুসংখ্যক সংবাদপত্র প্রবল প্রতিযোগিতায় নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা করেছে। বিক্রয় সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেলেও নাকি লোকসান পিছু ছাড়ে না বিজ্ঞাপন লক্ষ্মী তখন একমাত্র ভরসা, অর্থাৎ অস্তিত্ব রক্ষার ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তবু এরা দেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি ও স্বতন্ত্র করপোরেট ভুবন তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। এ প্রতিযোগিতা কতটা সুস্থ তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে তবে এটাই সামাজিক বাস্তবতা।
এমন বাস্তবতার পরিম-লে দৈনিক ‘সংবাদ’ তার ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব ধারায় এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গ-িতে প্রতিযোগিতার পূর্বোক্ত ধারাটিকে এড়িয়ে। এ চলা কতটা সঠিক বা বেঠিক তা ‘সংবাদ’ এর নিজস্ব ভাবনার বিষয়। তবে তার সাহিত্য সাময়িকী এখনও আকর্ষণীয়। স্বভাবতই ‘সংবাদ’-এর ৭২তম জন্মদিন শুভ হোক, নতুনত্বে বিকশিত হোক, যাত্রা শুভ হোক এমনটাই পাঠক হিসেবে আমাদের আকাক্সক্ষা। সেই সঙ্গে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘযাত্রার জন্য ‘সংবাদ’কে অভিনন্দন।