ভারি বর্ষণ, গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি

বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত তিস্তা ফের প্লাবিত পাঁচ উপজেলা

এমন পানি এবছর আর চোখে পড়েনি। গত দুদিনে এক হাজার টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন দিয়ে তিস্তার চরে আমন ধানের চারা রোপন করার পর হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা ।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন (৫৫)। শুধু আফজাল হোসেনই নয়, এমন অভিযোগ নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চলের ১০ হাজার পরিবার । হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতংক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের। সেই সাথে সেখানকার লোকজন আতঙ্কের পাশাপাশি একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৭ সেঃমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে জেলা সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীর তীরবর্তী ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পানি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট ) সকালে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্পার-২ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা পাড়ের লোকজন অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেছেন। এদিকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে সেখানকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। সেখানে গোবরধন এম এইচ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গোবরধন হায়দারীয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও গোবরধন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কোমড় পরিমাণ পানি উঠায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সাথে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি যাওয়ার রাস্তায়ও হ্াঁটু পরিমান পানি উঠায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বানভাসি মানুষদের।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, হঠাৎ করে রাতেই তিস্তায় পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। তিনি আরো জানান, এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ,এর আগে আর কখনও এমন বন্যা দেখা দেয়নি।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবৃদ্ধি এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জি,আর সারোয়ার। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তার সাথে ছিলেন।

উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের পক্ষ থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সর্তক করার পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।

বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২

ভারি বর্ষণ, গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি

বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত তিস্তা ফের প্লাবিত পাঁচ উপজেলা

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

image

স্কুল মাঠে বন্যার পানি। পাঠদান ব্যাহত

এমন পানি এবছর আর চোখে পড়েনি। গত দুদিনে এক হাজার টাকা খরচ করে শ্যালো মেশিন দিয়ে তিস্তার চরে আমন ধানের চারা রোপন করার পর হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা ।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফজাল হোসেন (৫৫)। শুধু আফজাল হোসেনই নয়, এমন অভিযোগ নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চলের ১০ হাজার পরিবার । হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আতংক দেখা দিয়েছে নদী পাড়ের লোকজনের। সেই সাথে সেখানকার লোকজন আতঙ্কের পাশাপাশি একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৭ সেঃমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের গজলডোবা ব্যারাজে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে জেলা সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীর তীরবর্তী ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পানি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট ) সকালে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্পার-২ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা পাড়ের লোকজন অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে গাদাগাদি করে অবস্থান করেছেন। এদিকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে সেখানকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। সেখানে গোবরধন এম এইচ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গোবরধন হায়দারীয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও গোবরধন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কোমড় পরিমাণ পানি উঠায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সাথে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি যাওয়ার রাস্তায়ও হ্াঁটু পরিমান পানি উঠায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বানভাসি মানুষদের।

মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, হঠাৎ করে রাতেই তিস্তায় পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। তিনি আরো জানান, এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ,এর আগে আর কখনও এমন বন্যা দেখা দেয়নি।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবৃদ্ধি এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জি,আর সারোয়ার। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তার সাথে ছিলেন।

উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের পক্ষ থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সর্তক করার পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।