এলপি গ্যাসের দাম কমলো

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় রান্নায় ব্যবহৃত বেসরকারি এলপি গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একই সঙ্গে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দামও কমানো হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী আগস্ট মাসে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যাবে ১২১৯ টাকায়, যা জুলাই মাসে ছিল ১২৫৪ টাকা। আগস্ট মাসের জন্য প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা, যা জুলাই মাসে ছিল ৫৮ টাকা ৪৬ পয়সা।

গতকাল বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নতুন দাম নির্ধারণ করে তা সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেয় বিইআরসি। বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান, বিইআরসি সচিব মো. খলিলুর রহমান খান প্রমুখ।

বিইআরসি জানায়, আগস্ট মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম পড়বে মূসকসহ ১০১ টাকা ৬২ পয়সা, যা জুলাই মাসে ছিল ১০৪ টাকা ৫২ পয়সা।

নতুন মূল্য হার অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম ৫৫৯ টাকা, ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২১৯ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২৭১ টাকা, ১৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫২৪ টাকা, ১৬ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৬২৬ টাকা হবে।

১৮ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৮২৯ টাকা, ২০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২০৩৩ টাকা, ২২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২২৩৬ টাকা, ২৫ কেজির সিলিন্ডার ২৫৩৯ টাকা, ৩০ কেজির সিলিন্ডার ৩০৪৯ টাকা, ৩৩ কেজির সিলিন্ডার ৩৩৫৪ টাকা, ৩৫ কেজির সিলিন্ডার ৩৫৫৫ টাকা এবং ৪৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম হবে ৪৫৭৩ টাকা।

এছাড়া বাসা-বাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত (রেটিকুলেটেড) এলপিজির দাম মূসকসহ প্রতি কেজি ১০১ টাকা ২৮ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৮ টাকা ৩৮ পয়সা করা হয়েছে।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

আগস্ট মাসের জন্য সৌদি আরামকোর সিপি মূল্যে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রনের প্রতি মেট্রিক টনের গড় মূল্য ছিল ৬৬৩ দশমিক ৫০ ডলার। জুলাই মাসে সমপরিমাণ মিশ্রনের মূল্য ছিল ৭২৫ মার্কিন ডলার। আগস্টের দাম অনুযায়ী দেশে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সৌদি সিপির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় সরকারি এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়নি বলে জানায় বিইআরসি।

এক দশক আগে সরকার আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসা-বাড়ি, রেস্তোরাঁ, হোটেলগুলো গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করে।

সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণœ করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

এখনও ৯৮ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক এলাকায় বিইআরসি ঘোষিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যায় না। বেশি দামে এলপিজি কিনতে হয় ভোক্তাদের।

এ বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘কেউ বেশি দাম চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিন, অথবা আমাদের জানান। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে।’

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সব এলাকায় দাম বেশি নিচ্ছে এমন নয়। কোন কোন এলাকায় বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। আবার বিইআরসি কর্তৃক মূল্য নির্ধারিত থাকায় ভোক্তারা বিক্রেতারদের প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রয়োজনে সংশিষ্ট দপ্তরে অভিযোগও দিচ্ছেন। ফলে ভোক্তাদের জিম্মি করে বেশি মূল্য আদায়ের একচেটিয়া সুযোগ অনেকটাই কমেছে।

বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২

এলপি গ্যাসের দাম কমলো

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় রান্নায় ব্যবহৃত বেসরকারি এলপি গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একই সঙ্গে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দামও কমানো হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী আগস্ট মাসে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার পাওয়া যাবে ১২১৯ টাকায়, যা জুলাই মাসে ছিল ১২৫৪ টাকা। আগস্ট মাসের জন্য প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা, যা জুলাই মাসে ছিল ৫৮ টাকা ৪৬ পয়সা।

গতকাল বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নতুন দাম নির্ধারণ করে তা সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেয় বিইআরসি। বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান, বিইআরসি সচিব মো. খলিলুর রহমান খান প্রমুখ।

বিইআরসি জানায়, আগস্ট মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম পড়বে মূসকসহ ১০১ টাকা ৬২ পয়সা, যা জুলাই মাসে ছিল ১০৪ টাকা ৫২ পয়সা।

নতুন মূল্য হার অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম ৫৫৯ টাকা, ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২১৯ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২৭১ টাকা, ১৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫২৪ টাকা, ১৬ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৬২৬ টাকা হবে।

১৮ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৮২৯ টাকা, ২০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২০৩৩ টাকা, ২২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২২৩৬ টাকা, ২৫ কেজির সিলিন্ডার ২৫৩৯ টাকা, ৩০ কেজির সিলিন্ডার ৩০৪৯ টাকা, ৩৩ কেজির সিলিন্ডার ৩৩৫৪ টাকা, ৩৫ কেজির সিলিন্ডার ৩৫৫৫ টাকা এবং ৪৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম হবে ৪৫৭৩ টাকা।

এছাড়া বাসা-বাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত (রেটিকুলেটেড) এলপিজির দাম মূসকসহ প্রতি কেজি ১০১ টাকা ২৮ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৮ টাকা ৩৮ পয়সা করা হয়েছে।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

আগস্ট মাসের জন্য সৌদি আরামকোর সিপি মূল্যে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রনের প্রতি মেট্রিক টনের গড় মূল্য ছিল ৬৬৩ দশমিক ৫০ ডলার। জুলাই মাসে সমপরিমাণ মিশ্রনের মূল্য ছিল ৭২৫ মার্কিন ডলার। আগস্টের দাম অনুযায়ী দেশে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সৌদি সিপির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় সরকারি এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়নি বলে জানায় বিইআরসি।

এক দশক আগে সরকার আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাসা-বাড়ি, রেস্তোরাঁ, হোটেলগুলো গ্যাস সংযোগ না পেয়ে এলপিজি ব্যবহার শুরু করে।

সরকারি খাত থেকে মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ আসায় তখন থেকেই বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণœ করে চলছিল এলপিজির বেসরকারি খাত।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

এখনও ৯৮ শতাংশ এলপিজি সরবরাহ হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক এলাকায় বিইআরসি ঘোষিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যায় না। বেশি দামে এলপিজি কিনতে হয় ভোক্তাদের।

এ বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘কেউ বেশি দাম চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিন, অথবা আমাদের জানান। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে।’

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সব এলাকায় দাম বেশি নিচ্ছে এমন নয়। কোন কোন এলাকায় বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। আবার বিইআরসি কর্তৃক মূল্য নির্ধারিত থাকায় ভোক্তারা বিক্রেতারদের প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রয়োজনে সংশিষ্ট দপ্তরে অভিযোগও দিচ্ছেন। ফলে ভোক্তাদের জিম্মি করে বেশি মূল্য আদায়ের একচেটিয়া সুযোগ অনেকটাই কমেছে।