সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চরম অরাজকতা বিরাজ করছে। মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। যদিও এ ঘটনায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করেছে এবং পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তবুও ধর্মঘটের নামে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এই হাসপাতালে।
ধর্মঘটের ফলে রোগীরা চিকসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের পরিচালক স্বীকার করেছেন, এই আন্দোলনের ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তবে ধর্মঘট থাকলেও অন্য চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি পূরণে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগসহ ওসমানী হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। এর আগে গতকাল দুপুরের দিকে ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সড়ক অবরোধ করেন। পরে আজ সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু হয়। মঙ্গলবার পুলিশ, হাসপাতাল প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হলেও কোন সমঝোতা হয়নি। মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়ায় ওসমানী হাসপাতালের জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ রাখেন ইন্টার্নরা।
গতকাল সকাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে তারা বিক্ষোভ করে দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে হাসপাতালের মূল ফটকও বন্ধ করে দেন তারা। ঘণ্টাখানেক পর প্রশাসনের অনুরোধে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় কর্মবিরতি ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে মূল আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে আমরা বহির্বিভাগ, জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগসহ হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখব।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বড় একটা রোল প্লে করে। এটা সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই। আন্দোলনকারীদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি জানে। তারা ওপর থেকে কাজ করছেন। এখানকার ডিজি স্বাস্থ্য এবং ডিজি স্বাস্থ্য-শিক্ষাও খোঁজ রাখছেন। বর্তমানে অন্যান্য ডাক্তার ও স্টাফ যারা আছেন, তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে গত রোববার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিত-া হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে ইমন আহমদ ও রুদ্র নাথ নামে দুই শিক্ষার্থীর ওপর কলেজের পেছনে হামলা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ও কলেজের সামনের সড়কে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এবং সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে রাত ১টার দিকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ স্থগিত করেন আন্দোলনরতরা। তবে এ সময় তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে কোতয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওসমানী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। দুই মামলার আসামিরা হলেন দিব্য, আবদুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও এহসান আহমদকে সোমবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট ২০২২ , ২০ শ্রাবণ ১৪২৯ ৫ মহররম ১৪৪৪
বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চরম অরাজকতা বিরাজ করছে। মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। যদিও এ ঘটনায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করেছে এবং পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তবুও ধর্মঘটের নামে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এই হাসপাতালে।
ধর্মঘটের ফলে রোগীরা চিকসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের পরিচালক স্বীকার করেছেন, এই আন্দোলনের ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তবে ধর্মঘট থাকলেও অন্য চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি পূরণে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগসহ ওসমানী হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। এর আগে গতকাল দুপুরের দিকে ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সড়ক অবরোধ করেন। পরে আজ সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু হয়। মঙ্গলবার পুলিশ, হাসপাতাল প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হলেও কোন সমঝোতা হয়নি। মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়ায় ওসমানী হাসপাতালের জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ রাখেন ইন্টার্নরা।
গতকাল সকাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে তারা বিক্ষোভ করে দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে হাসপাতালের মূল ফটকও বন্ধ করে দেন তারা। ঘণ্টাখানেক পর প্রশাসনের অনুরোধে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় কর্মবিরতি ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে মূল আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে আমরা বহির্বিভাগ, জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগসহ হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখব।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বড় একটা রোল প্লে করে। এটা সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই। আন্দোলনকারীদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি জানে। তারা ওপর থেকে কাজ করছেন। এখানকার ডিজি স্বাস্থ্য এবং ডিজি স্বাস্থ্য-শিক্ষাও খোঁজ রাখছেন। বর্তমানে অন্যান্য ডাক্তার ও স্টাফ যারা আছেন, তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে গত রোববার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিত-া হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে ইমন আহমদ ও রুদ্র নাথ নামে দুই শিক্ষার্থীর ওপর কলেজের পেছনে হামলা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ও কলেজের সামনের সড়কে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এবং সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে রাত ১টার দিকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ স্থগিত করেন আন্দোলনরতরা। তবে এ সময় তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে কোতয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওসমানী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। দুই মামলার আসামিরা হলেন দিব্য, আবদুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও এহসান আহমদকে সোমবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।