জাবির ‘গেস্ট রুমে’ সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ : ৮ ছাত্রলীগ কর্মী অবাঞ্ছিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গণমাধ্যমকর্মীকে ‘গেস্ট রুমে’ ডেকে নিয়ে ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ ওঠেছে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী সাংবাদিক মোহাম্মদ রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ক্যারিয়ারটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম নামক একটি ইন্টারনেট পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এই ‘নির্যাতনের’ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগপত্রে ওঠে আসে। অভিযোগপত্রে ওই সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে ‘নির্যাতনকারী’ হিসেবে দাবি করেন।

রাতেই প্রত্যক্ষদর্শীরা এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, রুম থেকে ডেকে এনে নিজের ও বন্ধুদের পরিচয় দিতে বলা হয় ওই সাংবাদিককে। পরিচয়পর্ব শেষে রুমের সিলিং ধরে নির্দিষ্ট সময় ঝুলে থাকতে বলা হয়। সময় শেষ হওয়ার আগেই ওই সাংবাদিক নেমে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে টি-টেবিলের নিচে মাথা দিতে বলা হয়। শারীরিক সমস্যার কারণে টেবিলের নিচে মাথা দিতে অপারগ হলে লাফাতে নির্দেশ দেন। অনেক সময় লাফানোর ফলে তাদের নির্দেশ না পাওয়ার আগেই থেমে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যার ফলে নির্যাতনকারীরা আরও রেগে যান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, রুম থেকে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে ঝোলানো হয়, টেবিলের নিচে মাথা দিতে বলা হয়। আমি বাধ্য হয়ে ঝুলেছি কিন্তু টেবিলের নিচে মাথা দিতে পারিনি। তারা আমাকে মোবাইলের লক খুলে দিতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এতে আমার শার্টের কলার ধরে আক্রমণ করে। আমার মোবাইল তারা অনেকক্ষণ আটকে রাখে। এ ঘটনার পরপরই সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও সাংবাদিক নেতারা। তারা সেখানে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের কথা শুনেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজামান সোহেল প্রাথমিকভাবে ‘ক্রস চেক’ করে নির্যাতনকারী হিসেবে ৮ জনের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন : ৪৬তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্ ও ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, আজ থেকে এই কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকুক তা আমরা চাই না। সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তারা অবাঞ্ছিত বলে গণ্য হবেন। তারা এই কমিটি থাকা অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে কোনভাবে যুক্ত থাকবেন না এবং আগামী কমিটিতেও তাদের থাকার কোন সুযোগ নেই।

প্রায় ৩ ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি চলার পরও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষককে সেখানে দেখা যায়নি। ফোন দিলেও তারা তখন ফোন ধরেননি।

গতকাল সকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফী বলেন, বিষয়টা তো রাতে জানতে পারিনি। সকালে শুনলাম। আজ রাত ৮টায় হলে মিটিং করা হবে। উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আসম ফিরোজ উল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে হল প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট ২০২২ , ২০ শ্রাবণ ১৪২৯ ৫ মহররম ১৪৪৪

জাবির ‘গেস্ট রুমে’ সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ : ৮ ছাত্রলীগ কর্মী অবাঞ্ছিত

প্রতিনিধি, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গণমাধ্যমকর্মীকে ‘গেস্ট রুমে’ ডেকে নিয়ে ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ ওঠেছে বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী সাংবাদিক মোহাম্মদ রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ক্যারিয়ারটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম নামক একটি ইন্টারনেট পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এই ‘নির্যাতনের’ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগপত্রে ওঠে আসে। অভিযোগপত্রে ওই সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে ‘নির্যাতনকারী’ হিসেবে দাবি করেন।

রাতেই প্রত্যক্ষদর্শীরা এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, রুম থেকে ডেকে এনে নিজের ও বন্ধুদের পরিচয় দিতে বলা হয় ওই সাংবাদিককে। পরিচয়পর্ব শেষে রুমের সিলিং ধরে নির্দিষ্ট সময় ঝুলে থাকতে বলা হয়। সময় শেষ হওয়ার আগেই ওই সাংবাদিক নেমে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে টি-টেবিলের নিচে মাথা দিতে বলা হয়। শারীরিক সমস্যার কারণে টেবিলের নিচে মাথা দিতে অপারগ হলে লাফাতে নির্দেশ দেন। অনেক সময় লাফানোর ফলে তাদের নির্দেশ না পাওয়ার আগেই থেমে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যার ফলে নির্যাতনকারীরা আরও রেগে যান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, রুম থেকে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে ঝোলানো হয়, টেবিলের নিচে মাথা দিতে বলা হয়। আমি বাধ্য হয়ে ঝুলেছি কিন্তু টেবিলের নিচে মাথা দিতে পারিনি। তারা আমাকে মোবাইলের লক খুলে দিতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এতে আমার শার্টের কলার ধরে আক্রমণ করে। আমার মোবাইল তারা অনেকক্ষণ আটকে রাখে। এ ঘটনার পরপরই সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও সাংবাদিক নেতারা। তারা সেখানে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের কথা শুনেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজামান সোহেল প্রাথমিকভাবে ‘ক্রস চেক’ করে নির্যাতনকারী হিসেবে ৮ জনের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন : ৪৬তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্ ও ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, আজ থেকে এই কর্মীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকুক তা আমরা চাই না। সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তারা অবাঞ্ছিত বলে গণ্য হবেন। তারা এই কমিটি থাকা অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে কোনভাবে যুক্ত থাকবেন না এবং আগামী কমিটিতেও তাদের থাকার কোন সুযোগ নেই।

প্রায় ৩ ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি চলার পরও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষককে সেখানে দেখা যায়নি। ফোন দিলেও তারা তখন ফোন ধরেননি।

গতকাল সকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফী বলেন, বিষয়টা তো রাতে জানতে পারিনি। সকালে শুনলাম। আজ রাত ৮টায় হলে মিটিং করা হবে। উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আসম ফিরোজ উল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে হল প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।