শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২, ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

শতাধিক পোশাককর্মীর আড়াই কোটি নিয়ে লাপাত্তা এনজিও

সরকার ও রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কতিথ একটি মাল্টি পারপাস কোম্পানি বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক পোশাককর্মীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোম্পানিটির আট কর্মকর্তা ওই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এমনকি প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ দিয়ে চক্রটি শরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের নামে-বেনামে জমি ক্রয় ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রতারণার শিকার এমন ২১ জন পোশাক শ্রমিক নারী-পুরুষ গত বুধবার সকাল ১০টায় শরণখোলা প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী সকলেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাদের বাড়ি শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

লিখিত বক্তব্যে ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ২০১৮ সালে আটজনের একটি প্রতারক চক্র রূপসা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলে প্রতারণা শুরু করে। তারা চট্টগ্রামের সিইপিজেড মোড়ের চৌধুরী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত সহজ সরল শ্রমিকদের টার্গেট করেই এই প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। অধিক লাভের প্রলোভনে পড়ে কেউ দেড় লাখ, দুই লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ওই কোম্পানিতে দীর্ঘ মেয়াদী, স্বল্প মেয়াদী, এককালীন আমানত, এফডিআর, ডিপিএসসহ বিভিন্ন প্যাকেজে তদের কষ্টার্জিত অর্থ জমা রাখেন। কোম্পানির স্ব ঘোষিত-চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে মোঃ মুজিবুর রহমান। এদের মধ্যে শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বাবুল খানের ছেলে মো. নাঈম খান কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার এবং তার ভগ্নিপতি পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলার তেঁতুলবাড়ি বাজারের হাকিম বেপারীর ছেলে মো. আলমগীর বেপারী হলেন কোম্পানির প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তার।

এই দুই শালা-ভগ্নিপতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত শরণখোলার শ্রমিকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর বেপারী প্রতারণার টাকা দিয়ে শরণখোলা উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামে তার স্ত্রী খাদিজা বেগমের নামে পাঁচকাঠা জমি কিনে সেখানে দুইতলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া ইউনিট ম্যানেজার নাঈম খানও দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। তারা উভয়ই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

প্রতারণার শিকার শরণখোলার পোশাক শ্রমিক বেল্লাল হোসেন জানান, মাল্টিপারপাস কোম্পানির কর্মকর্তা আলমগীর বেপারী এবং নাঈম খানের কথা মতো আমি তাদের কোম্পানিতে ১০লাখ টাকা ডিপোজিট করি। কিন্তু এখন লাভতো দূরের কথা আসল টাকাও পাচ্ছি না। এভাবে পোশাক শ্রমিক রিমা বেগম, পারভীন আক্তার, মজিবর রহমান, আ. রহিম, নাজরিন বেগম, ফোরকান, ডলি বেগম, দেলোয়ার হোসেন, কুলসুম বেগম, জলিল শরীফসহ শতাধিক পোশাক শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আলমগীর ও নাইম হাতিয়ে নেন বলে তারা অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ সবাই এখন আত্মগোপনে। তাদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় কষ্টের উপার্জন হারিয়ে শত শত শ্রমিক পথে পথে ঘুরছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য রূপসা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ইউনিট ম্যানেজার মো. নাঈম খান মুঠোফোনে জানান, তিনি এই কোম্পানির একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন। টাকা পয়সা লেনদেনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান এবং প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর বেপারীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২ , ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

শতাধিক পোশাককর্মীর আড়াই কোটি নিয়ে লাপাত্তা এনজিও

প্রতিনিধি, বাগেরহাট

সরকার ও রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কতিথ একটি মাল্টি পারপাস কোম্পানি বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক পোশাককর্মীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কোম্পানিটির আট কর্মকর্তা ওই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এমনকি প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ দিয়ে চক্রটি শরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের নামে-বেনামে জমি ক্রয় ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রতারণার শিকার এমন ২১ জন পোশাক শ্রমিক নারী-পুরুষ গত বুধবার সকাল ১০টায় শরণখোলা প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী সকলেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। তাদের বাড়ি শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

লিখিত বক্তব্যে ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ২০১৮ সালে আটজনের একটি প্রতারক চক্র রূপসা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলে প্রতারণা শুরু করে। তারা চট্টগ্রামের সিইপিজেড মোড়ের চৌধুরী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত সহজ সরল শ্রমিকদের টার্গেট করেই এই প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। অধিক লাভের প্রলোভনে পড়ে কেউ দেড় লাখ, দুই লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ওই কোম্পানিতে দীর্ঘ মেয়াদী, স্বল্প মেয়াদী, এককালীন আমানত, এফডিআর, ডিপিএসসহ বিভিন্ন প্যাকেজে তদের কষ্টার্জিত অর্থ জমা রাখেন। কোম্পানির স্ব ঘোষিত-চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে মোঃ মুজিবুর রহমান। এদের মধ্যে শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বাবুল খানের ছেলে মো. নাঈম খান কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার এবং তার ভগ্নিপতি পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলার তেঁতুলবাড়ি বাজারের হাকিম বেপারীর ছেলে মো. আলমগীর বেপারী হলেন কোম্পানির প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তার।

এই দুই শালা-ভগ্নিপতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত শরণখোলার শ্রমিকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর বেপারী প্রতারণার টাকা দিয়ে শরণখোলা উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামে তার স্ত্রী খাদিজা বেগমের নামে পাঁচকাঠা জমি কিনে সেখানে দুইতলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া ইউনিট ম্যানেজার নাঈম খানও দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। তারা উভয়ই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

প্রতারণার শিকার শরণখোলার পোশাক শ্রমিক বেল্লাল হোসেন জানান, মাল্টিপারপাস কোম্পানির কর্মকর্তা আলমগীর বেপারী এবং নাঈম খানের কথা মতো আমি তাদের কোম্পানিতে ১০লাখ টাকা ডিপোজিট করি। কিন্তু এখন লাভতো দূরের কথা আসল টাকাও পাচ্ছি না। এভাবে পোশাক শ্রমিক রিমা বেগম, পারভীন আক্তার, মজিবর রহমান, আ. রহিম, নাজরিন বেগম, ফোরকান, ডলি বেগম, দেলোয়ার হোসেন, কুলসুম বেগম, জলিল শরীফসহ শতাধিক পোশাক শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আলমগীর ও নাইম হাতিয়ে নেন বলে তারা অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ সবাই এখন আত্মগোপনে। তাদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় কষ্টের উপার্জন হারিয়ে শত শত শ্রমিক পথে পথে ঘুরছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য রূপসা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ইউনিট ম্যানেজার মো. নাঈম খান মুঠোফোনে জানান, তিনি এই কোম্পানির একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন। টাকা পয়সা লেনদেনের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান এবং প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর বেপারীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।